কমলনগর এলজিইডি অফিসে কমিশন বানিজ্য অল্পদিনেই অফিস সহকারি অর্ধশতকোটি টাকার মালিক! কমলনগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিসে কমিশনের নামে ঘুষ বানিজ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সন্তুষ্টিমত ঘুষ দিলেই ঠিকাদার ওই অফিসের হরিহর আত্মা!

কমলনগর এলজিইডি অফিসে কমিশন বানিজ্য অল্পদিনেই অফিস সহকারি অর্ধশতকোটি টাকার মালিক! কমলনগর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অফিসে কমিশনের নামে ঘুষ বানিজ্য একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। সন্তুষ্টিমত ঘুষ দিলেই ঠিকাদার ওই অফিসের হরিহর আত্মা! কার্যাদেশ পেতেও কোন সমস্যা হয়না। বিপরীতে যারা কমিশন নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাদের কাজ পেতে যেমন সমস্যা হয় তেমনি হয়রানিরও শেষ থাকেনা। আর এ কমিশন বানিজ্যের সুবাদেই অফিস সহকারি হারুন অর রশিদ মাত্র কয়েক বছরেই ঢাকা ও লক্ষ্মীপুরের বিভিন্ন এলাকায় নিজের এবং স্ত্রীর নামে অর্ধশত কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তুলেছেন। দুদকে দায়ের করা অভিযোগপত্র এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। হারুন কমলনগর উপজেলার চরফলকন গ্রামের মোস্তফা হাওলাদারের ছেলে।নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ না করে ২০২০ সালে দুর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়ের চেয়ারম্যান বরাবর জনৈক ব্যাক্তি, হারুনের অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং এ মর্মে অনুসন্ধান পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগ পত্রের সাথে হারুনের অর্জিত সম্পত্তির ফিরিস্তি (ক্রয়কৃত সম্পত্তির পরিমান, দলিল রেজিস্ট্রির স্টেশন, সাল তারিখ দাতা-গ্রহীতা মূল্য ইত্যাদি) তুলে ধরেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দূর্নীতি দমন কমিশন প্রধান কার্যালয়-ঢাকা, দুদক সমন্বিত জেলা নোয়াখালীকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পত্র প্রেরণ করে। যার স্মারক নম্বর ২৬১০৮/১১.১১.২০২০খ্রি.। তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদনও দাখিল করেছিল দুদক নোয়াখালী, তবে বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে দুদক প্রধান কার্যালয়ে এ বিষয়ে গঠিত কমিশন প্রতিবেদনটি গ্রহণ না করে, পুর্নতদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুদক সমন্বিত জেলা চাঁদপুরকে দায়িত্ব প্রদান করেছে। দুদকে দায়ের করা অভিযোগ ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঠিকাদারের সাথে আলাপকালে জানা গেল হারুনের যাদুকরি বিত্তবৈববের উৎস। তিনি প্রতিটি কার্যাদেশের বিপরীতে ইউএনও উপজেলা চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট নির্বাহী প্রকৌশলী হিসাবরক্ষণ অফিস প্রকল্প দেখভালকারী সহকারি প্রকৌশলী অফিস স্টাফ এবং নিজের কথা বলে প্রকল্পভেদে ৭ থেকে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিশন নামক ঘুষ আদায় করেন। জানা যায় কোন সৎ কর্মকর্তা বা জনপ্রতিনিধি এসব অর্থ না নিলে তা হারুনেরই হয়ে যায়। এছাড়া প্রতিটি ফাইল প্রসেসিং এর নামে আদায় করেন পাঁচ হাজার টাকা। আছে সরকারি পুরাতন ভবন ক্রয়-বিক্রয়ের মুসাবিদার কমিশন, তবদির করে পছন্দের ঠিকাদারকে কার্যাদেশ পাইয়ে দিয়ে আর্থিক সুবিধা নেওয়াসহ নানান খাত থেকেই তিনি টাকা হাতিয়ে নেন বলে জানানো হয়েছে। আদায়কৃত অর্থ ‘কোন টেবিলে কত যাবে’ তার নির্ধারকও হারুন। এককথায় নিজ এলাকায় চাকুরি এবং অবৈধ অর্থের দূর্দান্ত কালেক্টর হওয়াতে হারুনই যেন অফিসটির সব। 
হারুন প্রকৌশল অধিদপ্তরের একটি প্রকল্পে ২০০৪ সালে যোগদান করেন। ২০১২ সালে আত্তীকরণের সুবাদে তিনি রাজস্বখাতে অফিস সহকারি হিসাবে বহাল হন। এরপর থেকেই অফিসটি হয়ে যায় তার টাকা তৈরির মেশিন। ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিনি স্ত্রী’র নামে ক্রয় করেন ঢাকা জেলার সাভারের আটিবাজার এলাকায় ১২ কাঠা জমি। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ক্রয় করেন ১.৩৫ একর, তারমধ্যে পৌর এলাকার সমসেরাবাদে চারতলা বাড়িসহ ক্রয় করেন ৩৭ শতক জমি। জেলার রামগতি এবং কমলনগর উপজেলায় ক্রয় করেন প্রায় ৫.৬৪ একর জমি। এ ছাড়া স্থানীয় মাতাব্বরহাট বাজারে নিজের নামে দুইটি দোকান ঘর ক্রয় করেন। সূত্র জানিয়েছে হারুন জানে ব্যাংক হিসাবে লেনদেনে প্রমাণ থাকে, তাই অবৈধ অর্থ তিনি ব্যাংকে জমা না করে এলাকার পরিচিত ব্যবসায়ীদের নিকট জমা রাখেন। পরে ওই টাকা দিয়েই সম্পত্তি ক্রয় করেন । এসব বিষয়ে হারুনের নিকট জানতে চাইলে তিনি মূল বিষয়টিকে বারবার পাশ কাটিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তবে অভিযোগ পত্রের তথ্য-প্রমাণ অস্বীকার করার মত কিছু নেই বলে জানান। উল্লেখ্য হারুনরা তিন ভাই বোন। মৃত্যুর পূর্বেই তার বাবা প্রায় সকল সম্পত্তি বিক্রয় করেছেন। পৈত্রিক সম্পত্তি বলেতে নিজগ্রামের বসত-বাড়ি ও সামান্য নাল জমি আছে। উপজেলা নির্বাহী প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার বলেন, ঘুষ বা কমিশন বানিজ্য সম্পর্কে আমি কিছুই জানিনা। বর্তমানে ই-টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কার্যাদেশ সম্পন্ন হওয়াতে আগের মত এদিক-সেদিক করার সুযোগ নেই বললেই চলে।স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) লক্ষ্মীপুর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইকরামুল হক বলেন, অফিস সহকারি হারুনের বিরুদ্ধে একটা তদন্ত চলমান আছে বলে জানি। রিপোর্ট হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।