মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মধ্য ভাটেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় ২০২২ সালে ভূমি হস্তান্তর কর(১℅) খাত থেকে বন্ধন নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়। এই ভাস্কর্য নির্মাণ করে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজি এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী।

গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ২০২২ - ২০২৩ অর্থ বছরের ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন। তবে এসব ভাস্কর্য মানসম্মতভাবে নির্মাণ এবং রক্ষা করা হয়নি শৈল্পিক মান। ফলে এ নিয়ে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। এই ভাস্কর্য নির্মাণের বরাদ্দ পাওয়া অর্থ তছরুপ করা হয়েছে। এতে কাজ ঘিরে লাখ টাকার অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের মধ্য ভাটেরচর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন রাস্তায় ২০২২ সালে ভূমি হস্তান্তর কর(১℅) খাত থেকে বন্ধন নামে একটি ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়।  এই ভাস্কর্য নির্মাণ করে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজি এবং তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী। 

বিষয়টি নিয়ে জানা যায়, যথাযথ নিয়ম না মেনেই ইউপি চেয়ারম্যান ও জিয়াউল ইসলাম ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। ভাস্কর্যটি নির্মাণে টেন্ডার পর্যন্ত দিয়েছে কিনা জানা নেই অনেকের। স্থানীয়রা বলছেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী যোকসাযোসে ভাস্কর্যটি নির্মাণের নামে লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।গজারিয়া থানার গণমাধ্যম কর্মীরা বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান ও তৎকালীন নির্বাহী অফিসার জিয়াউল ইসলাম চৌধুরী নিয়ম মেনে ভাস্কর্যটি নির্মাণ করেননি। ১০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এই বন্ধন ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে বলে কাগজে কলমে থাকলেও সঠিক মাষ্টাররুল দেখাতে পারেনি।

এদিকে গত ২২ - ২৩ অর্থবছরে এ-ই উপজেলার আট ইউনিয়নে ভাস্কর্য নির্মাণের কথা থাকলেও এর মধ্যে পাচটি ইউনিয়নে ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়।  তার মধ্যে টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের ভাস্কর্য বন্ধন টি নির্মাণ করে মধ্য ভাটেরচর বাস স্ট্যান্ডের ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়কের রাস্তার মাজ খানে।

প্রতিটি ভাস্কর্য নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ লাখ টাকা। তবে ভাস্কর্য নির্মাণ বরাদ্দের বেশিরভাগ টাকা তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরা লুটপাট করেছেন বলে জানা গেছে।সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মুজিব জন্মশতবর্ষে দেশের নানান জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণের উদ্যোগ নেন বিভিন্নজন। তবে গজারিয়া উপজেলায় জাতির জন্য অকল্যাণকর  এসব ভাস্কর্য ও ম্যুরাল নির্মাণ করায় জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।

বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক ইউপি এক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, গত সাড়ে ১৫ বছরে দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে। গজারিয়ায় যে-ই ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়েছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট নিয়ম মানা হয়নি। যে যেভাবে পেরেছে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে এবং ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে লিয়াজোঁ করে এসব ভাস্কর্য নির্মাণ করেছে উপজেলা প্রশাসন।  এতে করে ৯০ শতাংশ ভাস্কর্য নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। যাঁরা এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ তাঁদের কাছ থেকেও কোনো ধরনের মতামত নেওয়া হয়নি।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য নির্মাণের নামে সরকারের ব্যয় হয়েছে কয়েক শ কোটি টাকা। কিন্তু মানহীন ভাস্কর্য নির্মাণ করে সরকারের বিপুল টাকা লোপাট করা হয়েছে। ভাস্কর্য অনেক ব্যয়বহুল শিল্পমাধ্যম।মধ্য ভাটার চরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আনিসুর রহমান বলেন এই ভাস্কর্য জাতির কোন কল্যাণে আসবেনা, উপজেলা প্রশাসন ও ইউপি চেয়ারম্যান ভাস্কর্য নির্মাণ নামে সরকারি অর্থ লুটপাট করে খেয়েছে। 

স্থানীয় কয়েকজন প্রবীণ  জানান  রাতের আধারে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে এই ভাস্কর্য নির্মাণ করে ইউপি চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজী , বিষয়টি দেখার পর লোকমুখে শুনতে পাই সরকারি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ এসেছে, ইউনিয়নের কোথাও জায়গা পায়নি তাই তারা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানে এই ছোট্ট ভাস্কর্যটি নির্মাণ করে। এই ছোট্ট ভাস্কর্যটি ব্যয়ের কথা জানতে চাইলে তারা জানান ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার মত ব্যয় হবে। বাকি অর্থ কোথায় গেল? যাকে বল অর্থ লুটপাট ও অপচয় ছাড়া জাতির কোন কল্যাণে আসে নাই।

৮ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোকাম্মেল জানান এই ভাস্কর্যটি উদ্বোধনের সময় আমি উপস্থিত ছিলাম, বরাদ্দ ও নির্মাণের বিষয় আমি কিছুই জানি না। সমস্ত কিছু চেয়ারম্যান মহোদয় করেছে।সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ইছাক আলী জানান দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে এরকম প্রকল্প বাস্তবায়ন চাই। এই প্রকল্পে সরকারি অর্থ অপচয় ও লোপাট ছাড়া কোন কল্যাণে আসে নাই। তদন্ত সাপেক্ষে এই দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।  

টেংগারচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান ফরাজীর কাছে ভাস্কর্য নির্মাণ বিষয় জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে রাজি হয়নি। বরং সে সংবাদ প্রচার না করার জন্য লোকমারফত অনুরুধ জানান।উপজেলা নির্বাহী অফিসার কোহিনুর আক্তার এর কাছে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোহিনুর আক্তার বলেন, আমি এই উপজেলায় সবে মাত্র কয়েক মাস হয়েছে এসেছি। কিভাবে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এই কাজ করেছে সেই ভালো বলতে পারবে।