জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক এক বক্তব্যে সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম একযোগে দেশীয় ‘মুজিববাদী’ রাজনীতির ধারা এবং বহিরাগত প্রভাব, বিশেষত ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নেন। বক্তব্যে তিনি এই শক্তিগুলোকে 'রাজনৈতিক উপনিবেশবাদ' বলে আখ্যায়িত করে সেগুলোর বিরুদ্ধে সর্বস্তরে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।

আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সারজিস আলম বলেন, “আইনি প্রক্রিয়ায় শুধু নয়—অর্থনীতি, রাজনীতি ও সংস্কৃতি—এই তিন মোর্চা থেকেই ‘মুজিববাদ’-এর কোমর ভাঙতে হবে।” তার মতে, এই মতাদর্শ আজো দেশের গভীরে সক্রিয় এবং বিভিন্ন জেলা, বিশেষত গোপালগঞ্জকে ঘিরে তার বিস্তার অব্যাহত। “মুজিববাদ একটি কেবল রাজনৈতিক প্রবণতা নয়, এটি এক সাংস্কৃতিক কর্তৃত্ববাদ, যার মূল উদ্দেশ্য রাষ্ট্রক্ষমতায় নিজেকে অবিনাশী করে তোলা,” বলেন তিনি।

২০২৪ সালের ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান’-এর স্মরণে আয়োজিত এই সভায় সারজিস আলম সরাসরি অভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া ছাত্রজনতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের ‘সহযোদ্ধা’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। তবে একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “এই ঐক্য যেন অন্ধ আনুগত্যে পরিণত না হয়। কোনো গোষ্ঠীর দালালি নয়—সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সুস্পষ্ট নীতির ভিত্তিতে এক হওয়া জরুরি।”

সারজিস আলমের বক্তব্যে উঠে আসে তীব্র ‘ভারতীয় আধিপত্যবাদ’-বিরোধী অবস্থান। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের মাটিতে কোনো দেশপন্থী শক্তির জায়গা হবে না—হোক সে ভারতের, হোক অন্য কোনো দেশের। এই মাটি কেবল বাংলাদেশপন্থীদের।” বক্তব্যে বারবার ‘স্বাধীনতা-পরবর্তী বাস্তবতা’ ও ‘উপনিবেশ-পরবর্তী বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ সংগ্রাম’-এর প্রসঙ্গ উঠে আসে।

তিনি দাবি করেন, বর্তমান সংবিধান ‘৭২-এর মুজিববাদী কাঠামো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত, যা প্রকৃত বাংলাদেশপন্থী রাষ্ট্রের পথে বড় বাধা।’ সেই প্রেক্ষিতে তিনি একটি ‘নতুন গণপরিষদ নির্বাচন’ এবং ‘নতুন সংবিধান প্রণয়ন’-এর আহ্বান জানান। পাশাপাশি, ’খুনি হাসিনার’ বিচার এবং বিচারের রায় কার্যকর দেখতে চাওয়ার কথাও স্পষ্টভাবে বলেন। “বিচার বিভাগ যেন কোনো দলের অধীন নয়, বরং নিরপেক্ষতার প্রতীক হয়”—এই আহ্বান জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার দাবিও তোলেন।

দলগত প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও মতপার্থক্য থাকলেও রাজনৈতিক সংস্কৃতির সৌন্দর্য রক্ষা করা জরুরি বলেও মন্তব্য করেন সারজিস আলম। তার মতে, ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, আদর্শগত লড়াইয়ের মধ্য দিয়েই গণতন্ত্র বিকশিত হতে পারে।

বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “৭১-এর স্বাধীনতা আকাঙ্ক্ষা, ৪৭-এর উপনিবেশ বিরোধিতা এবং ২০২৪ সালের মুক্তির স্বপ্ন—এই তিন ধারার মিলনেই গড়া হবে আগামীর বাংলাদেশ।”

অনুষ্ঠানের শেষ দিকে ঘোষণা আসে যে, ২০২৪ সালের আন্দোলনের আরেক গুরুত্বপূর্ণ মুখ, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম সভায় বক্তব্য রাখবেন। তিনিও ‘জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানের’ ছাত্র নেতৃত্বের অন্যতম ছিলেন বলে আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়।