নাটোর সদর সাব রেজিস্টার (এস,আর) অফিসে কর্মরত নকল নবিশরা তাদের চাকুরী জাতীয়করণের এক দফা দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছেন। তারা এই কর্মসূচীন নাম দিয়েছেন কলম বিরতি।নকল নবিশ অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির ঘোষণা ও নির্দেশনা মোতাবেক বুধবার (৩০শে অক্টোবর) সকাল থেকে সাব রেজিস্টার অফিসের সামনে কর্মবিরতের ব্যানার ঝুলিয়ে নাটোর সদর নকল নবিশরা কর্মবিরতি পালন করেন।সদর উপজেলা নকল নবিশ এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ গোলাম মোস্তফা বলেন: নকল নবিশরা বছরের পর বছর বৈষম্যের শিকার হয়ে আসছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ একটি দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ ও জনসেবার কাজ করি আমরা অথচ আমাদের কে সরকারের কোষাগার থেকে কোন বেতন ভাতা দেওয়া হয় না। আমাদের জাতীয়করণ করা হলে রাষ্ট্রকে আমারা যে টাকা আয় করে দেই সেই অর্থ থেকেই আমাদের বেতন দেওয়া সম্ভব অন্য কোন রাজস্ব খাত থেকে আমাদের এক টাকা ও দিতে হবে না। এমনকি নিজেদের টাকা দিয়ে কাগজ কলম কিনে কাজ করতে হয় আমাদের। বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে আমরা সর্বাত্মক আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করে কাফনের কাপড় মাথায় বেঁধে রাজপথে নামি তখন ফ্যাসিস্ট সরকারের আইনমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছিল আপনারা ঘরে ফিরে যান আপনাদের সকল দাবী দাওয়া এমনকি জাতীয়করণের দাবি মেনে নেওয়া হবে। আমরা যখন ঘরে ফিরে যাই তখন ফ্যাসিস্ট সরকার আমাদের দাবি উপেক্ষা করেছে আমরা এ মিথ্যা প্রতিশ্রুতিও বৈষম্যের তীব্র নিন্দা জানাই।তিনি আরো বলেন আমরা দলিলের নকল লেখা বাবদ বর্তমানে প্রতি পৃষ্টা ৩৬ টাকা হারে পাই। এতে মাসে কয়েক হাজার টাকা আয় হয়, যা একজন নকল নবিশের সংসার চালানোর জন্য অতিনগন্য। অথচ আমরাই এই অফিসের মূল চালিকা শক্তি।নকল নবিশ অ্যাসোসিয়েশনের নাটোর জেলা শাখার সভাপতি মোঃ জুয়েল হোসেন বলেন কেন্দ্রীয় কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক আমরাও কর্মবিরতি পালন করছি। আমরা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের চাকরি স্থায়ী করণের (জাতীয় করণের) দাবিতে আন্দোলন করে আসছি। কর্মবিরতি পালন করেছি কয়েক বার। তৎকালীন সরকারের আশ্বাসে আমরা কর্মবিরতি স্থগিত করেছিলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক সমাধান না হওয়ায় আবার কর্মবিরতি শুরু করেছি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করছেন। আমাদের এই দাবি মানা না হলে আমরা সর্বাত্মক কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামবো।এ সময় কর্মসূচি পালনকালে নকল নবিশ এসোসিয়েশনের নাটোর সদর শাখার সভাপতি মোছাঃ সুলতানা রাজিয়া মর্নিং পোস্ট কে বলেন আমরা নারী সদস্য হিসেবে বছর পর বছর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ নথির কাজ করি কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে আমরা তেমন কোনো সুযোগ সুবিধা পাই না অথচ বেসরকারি খাত বা বিভিন্ন কোম্পানিতে কর্মরত একজন নারী সদস্য মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে সকল ধরনের ফ্যাসালিটি পান। কিন্তু আমরা নারী কর্মজীবী হয়ে রাষ্ট্রের এতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেও আমাদের জীবনধারণ কষ্টসাধ্য হয়ে যায়। আমরা এই বৈষম্যের চিরতরে বিলুপ্ত চাই। আমাদের এক দফা এক দাবি জাতীয়করণ করতে হবে। নচেৎ আমরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবো।নাটোরের সাব রেজিস্ট্রির অফিস ঘুরে দেখা গিয়েছে নকল নবিশরা কেউই কোন কাজ করছেন না। তারা যথারীতি ব্যানার ঝুলিয়ে তাদের কলম বিরতি কর্মসূচি পালন করছেন।অফিসে ঘুরতে ঘুরতে কথা হয় নকল নবিশ নারী সাধারণ সদস্য রুপালি খাতুন, রেহেনা খাতুন, নাজনিন আক্তার সহ আরো অনেকের সাথে তারা দুঃখ প্রকাশ করে বলেন বছরের পর বছর আমরা রাষ্ট্রের এত গুরুত্বপূর্ণ কাজ করি কিন্তু রাষ্ট্র আমাদের বারবার উপেক্ষা করেছে। বর্তমান বাজার মূল্যের সাথে আমাদের আয়ের রয়েছে ব্যাপক ফারাক। এই রেজিস্ট্রি অফিসে আমরাই মূল কাজগুলো করে থাকি বিশেষ করে কলম যোদ্ধা ও বলতে পারেন কিন্তু আমরা রাষ্ট্রের কোন সুযোগ সুবিধা পাই না।এমনকি নারী হিসেবে আমাদের মাতৃকালীন কোন সুযোগ-সুবিধা নেই। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ডঃ মুহাম্মদ ইউনুসের কাছে এই বৈষম্যের বিলোপ চাই এবং এক দফা দাবি জাতীয়করণ চাই।