জামালপুরের বকশীগঞ্জে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের পর সাংবাদিকদের গাছের সঙ্গে বেঁধে লাল থেরাপি দেওয়ার হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হকের বিরুদ্ধে। তিনি প্রকাশ্যে মাইকযোগে ওই ঘোষণা দেন। হুমকি দেয়ার ভিডিও বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। এরপর থেকেই বকশীগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন। বক্তব্যে মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘আপনি কে, আপনার পরিচয় কি, আপনার বাবার নাম কি, কোন বাড়িতে থাকেন, আপনার এনআইডি নম্বর কত—আপনি এগুলা নিয়া সাংবাদিকতা করবেন। আমাদের সেনাবাহিনীর নির্দেশনা আছে, কেউ যদি পারমিশন ছাড়া এইখানে ছবি তুলতে আসে তাদেরকে গাছের সঙ্গে বাইন্ধা রাখতে বলছে, আপনারা বাঁইধা রাখবেন। তাদেরকে লাল থেরাপি দেওয়া হবে। তাদেরকে লাল থেরাপি দেওয়া হবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমরা উপজেলায় গিয়েছিলাম, উপজেলা প্রশাসন সকল দপ্তরকে আমরা জানান দিয়ে এসেছি যে, আমরা অনিরাপদ থাকব না। আমাদের নিরাপত্তা আমরাই দেব। আমরা কারো দয়া চাই না। আপনারা সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় যান। আপনারা সাংবাদিকতা করতে পারবেন না।’ তার বক্তব্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে বকশীগঞ্জ উপজেলাসহ সারা জেলার সাংবাদিকরা বিব্রত। আজিজুল হক একাধারে তিন দিন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিল বের করে বকশীগঞ্জ পৌর শহর, উপজেলা ক্যাম্পাস ও বাস টার্মিনালসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিনি সাংবাদিকদের গাছের সঙ্গে বেঁধে লাল থেরাপি দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের বকশীগঞ্জ থেকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেন। জানা যায়, জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২৮ অক্টোবর রজব আলী নামে এক রিকশা চালক অসুস্থ হয়ে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় একই দিন সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় মৃত রোগীর স্বজনরা কর্তব্যরত ডাক্তার আসমা লাবনীর দায়িত্ব পালনে অবহেলার অভিযোগ করে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে মৃত রোগীর স্বজনরা লাবনীর ওপর হামলা করেন। এ ঘটনায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত সাংবাদিকরা পেশাগত দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। এ কারণে ২৯ অক্টোবর মৃত রোগীর পরিবারের সদস্য হাসি বেগম (৩৫), শেফালি বেগম (৩০), খোন মিয়া (৩৮) সদ্য অপসারিত পৌর কমিশনার জহুরুল হক (৪২)-কে আসামি করে বকশীগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ঘটনার ছবি ও ভিডিও ধারণ করায় একই মামলায় দৈনিক বসুন্ধরার সাংবাদিক রফিকুল ইসলাম (৩৬), মুভি বাংলার সাংবাদিক এ কেএম নূর আলম নয়ন (৩৫) ও দৈনিক বাংলাদেশ সমাচারের সাংবাদিক মারুফ হাসানকে আসামি করেন মামলার বাদী। জানা যায়, মামলা দায়েরের পর বেপরোয়া হয়ে ওঠেন বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল হক। ঘটনার ভিডিও ও ছবি ধারণ করায় তিনি সরকারি কর্মচারী হয়েও চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে একাধিক দিন বিক্ষোভ মিছিল করেন। তিনি জনসন্মুখে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে নানা আপত্তিকর বক্তব্য দেন। কর্মকর্তা হিসেবে তার অধীনস্থ কর্মচারীদেরও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিছিলে যেতে বাধ্য করেন। বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক দৈনিক কালের কণ্ঠের সাংবাদিক আব্দুল লতিফ লায়ন সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও বিভিন্নস্থানে প্রকাশ্যে মাইকযোগে যেসব মানহানিকর বক্তব্য দিয়েছেন তার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘আজিজুল হক যা করছেন অতিরঞ্জিত করছেন।’ বকশীগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি জামালপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সদস্য দৈনিক ইত্তেফাক সাংবাদিক এম শাহীন আল আমীন বলেন, ‘সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অযাচিতভাবে গায়ে পড়ে আজিজুল হক যেভাবে অশালীন বক্তব্য প্রকাশ্যে দিয়ে বেড়াচ্ছেন তা খুবই আপত্তিকর ও নিন্দনীয়।’ তার বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও বক্তব্য প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি। জামারপুর জেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইউসূফ আলী জানান, একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে ঢালাওভাবে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলের নেতার আদলে এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না। তার বক্তব্যে জামালপুর জেলার সাংবাদিক সমাজ বিব্রত।