ঢাকা প্রিমিয়ার লীগের প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার সময় হঠাৎ করে মাঠেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের খেলোয়াড় শরিফুল ইসলাম। এর পর থেকে শরীরে নানা রোগব্যাধি দেখা দিলে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর শরীরে ক্যানসার ধরা পড়ে। টানাপোড়েনের সংসারে চিকিৎসার খরচ জোগাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খাচ্ছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাবা। গ্রামের বাড়িতে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া একমাত্র বসতভিটাও বিক্রি করে দিয়েছেন ইতোমধ্যে। ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে দিতে পারছেন না বাসা ভাড়ার টাকা।

গত তিন মাস ধরে আটকে আছে বাসা ভাড়া।বাবা-মায়ের সঙ্গে মোহাম্মদপুরের জহুরী মহল্লার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন তিনি।  শরিফুলের বাবা শুক্কর আলী পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। শরিফুলের বাবা শুক্কর আলী বলেন, আমার ছেলেকে প্রায় সময় থেরাপি দিতে হয়। প্রতিটি থেরাপি দিতে ৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়। আমি পেশায় একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। মহল্লায় একটি থ্রি পিসের দোকান ছিল আমার। পাশাপাশি আমার ছেলে খেলে যা আয় হতো তা দিয়েই সংসার চলত।

হঠাৎ করে, গত বছরের অক্টোবরে পুলিশ লাইন মাঠে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলার সময় মাঠে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ সময় তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এর পর আমার ছেলেকে সুস্থ করে তুলতে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যাই। ডাক্তার তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে বলেন, আমার ছেলের ক্যানসার ধরা পড়েছে। ওই সময় আমরা পরিবারের সবাই হতাশ হয়ে পড়ি। ছেলের স্বপ্ন বাঁচানোর চেয়ে এখন তাকে বাঁচানো জরুরি হয়ে পড়েছে। কখনো মানুষের কাছে টাকা ধার নিয়ে আবার কখনো তার মায়ের স্বর্ণালঙ্কার বিক্রি করে চিকিৎসা করিয়েছি।

 তার মায়ের গলার স্বর্ণালঙ্কার থেকে শুরু করে আমার একটা বুটিকসের দোকান ছিল সেটিও বিক্রি করে দিই। এভাবে একের পর এক সব কিছু বিক্রি করতে করতে দেখি আমার বসতভিটাটি ছাড়া আর কোনো সম্বল নেই। মাত্র ৩ শতাংশের সেই বসতভিটাও চার লাখ টাকায় বিক্রি করে এখন চিকিৎসার খরচ বহন করতে এই টাকাও শেষ হয়ে গেছে। সামনে কীভাবে তার চিকিৎসা করাব তাও অজানা। এদিক দিয়ে গত তিন মাস ধরে বাসাভাড়া দিতে পারিনি। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার ছেলের চিকিৎসার জন্য সহায়তা চাই। সে একজন উদীয়মান খেলোয়াড়। অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে মাঠ কাঁপিয়েছে একসময়। তার সঙ্গের অনেক খেলোয়াড় এখন জাতীয় দলে খেলছে। ডাক্তার বলেছেন, তাকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করালে সে পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবে।

 আমরা টাকার অভাবে আমার ছেলেকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারছি না। বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করালে সে অবশ্যই সুস্থ হয়ে আবারও মাঠে খেলবে। সবার বাবার স্বপ্ন থাকে তার ছেলে জাতীয় দলে খেলবে। দেশেকে বিশ্ব আসরে তুলে ধরে ক্রিকেটকে বিশ্বের দরবারে ভালোভাবে এগিয়ে নেবে। কিন্তু আমার ছেলের অবস্থা এমন হয়েছে, এখন স্বপ্ন দেখা বাদ দিয়ে আমরা ছেলের জীবন বাঁচানোর জন্য আহাজারি করছি। আমিও চাই সবার সহায়তায় আমার ছেলে একদিন সুস্থ হয়ে ফিরে জাতীয় দলে খেলবে। শরিফুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালের অক্টোবরে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেলতে গিয়ে ২ ওভার বল করার পর হঠাৎ করে অজ্ঞান হয়ে মাঠে পড়ে যাই। পরে কী হয়েছে আমি আর জানতে পারিনি। কিছুটা সুস্থ হয়ে দেখি আমি হাসপাতালের বিছানায়।

  এর আগে ২০১৭ সালে খেলার সময় আমার অন্ডকোষে বলের আঘাত লেগে আহত হই। প্রচণ্ড আঘাত লাগলেও তখন তত বেশি ইনজুরি মনে করিনি। কিন্তু সেই ইনজুরি আমাকে গ্রাস করে ফেলেছে। সেই ইনজুরির জায়গাতেই টিউমার হয়ে ইনফেকশন হয়ে যায়। পরে সেটি অপারেশন করাই। কিন্তু অপারেশন করিয়েও কোনো রক্ষা হয়নি। সেই টিউমার ইনফেকশন হয়ে সেখান থেকে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পরে ক্যানসারে রূপ নেয়। এখন সেই মরণব্যাধি ক্যানসার বয়ে বেড়াচ্ছি। আমি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে মাঠে ফিরতে চাই। আমাদের টানাপোড়েনের সংসার। আমাদের আর্থিক সমস্যার কারণে আমার ভালো চিকিৎসা হচ্ছে না। ডাক্তার বলেছেন, বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারলে আমি আবারও মাঠে ফিরতে পারব। আমি চাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় আবারও সুস্থ হয়ে আমি মাঠে ফিরব। আমি আবারও খেলতে চাই।