যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জিল্লুর রহমান মিন্টু হত্যাকান্ডে ব্যবহ্নত শর্টগানসহ এক সন্ত্রাসীর ছবি নিয়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মাথায় গামছা বেঁধে সেই শর্টগান হাতে, কোমরে পিস্তল আর বাম হাতে টর্চলাইট ধরে দাঁড়ানো সেই সন্ত্রাসীর ছবিটি দু’দিন আগে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদকের হস্তগত হয়েছে। ছবির লোকটি মনি ওরফে মনি হাসান।

সে চৌগাছা উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের সলেমানের ছেলে। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। আসামি মনি পুলিশের তালিকাভূক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার শামীম বাহিনীর অন্যতম ক্যাডার বলে একাধিক সূত্রে দাবি করা হয়েছে। এদিকে ছবিটির ক্যামেরাম্যান হিসেবে (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির এক সমর্থকের নাম চাউর হয়েছে। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে-মনি সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বাদলের ভাইপো মনি এবং ক্যামেরাম্যান মঙ্গলের ছেলে টুটুল। এছাড়াও চৌগাছা সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারি তার ‘শামীম রেজা’র আইডিতে ছবিটি আপলোড করেন। সেই ছবির নীচে এই মনির (মনি হাসান আইডি) কাকুতিময় মন্তব্য ছবিটি তার নিজের বলেই ইঙ্গিত করে। এছাড়া ছবির বিষয়টি স্থানীয় ইউপি সদস্য, যুবলীগের একাধিক নেতা, ব্যবসায়িসহ গ্রামের নিরীহ জনগণও নিশ্চিত করেছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন-কিলার শামীম খুব গর্বের সাথে বলে থাকে যে, ‘এই শর্টগান দিয়েই মিন্টুকে খুন করেছি! উল্লেখ্য, ২০১৩ সালে যশোর জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং এই সিংহঝুলি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জিল্লুর রহমান মিন্টুকে দিনে-দুপুরে শত শত লোকের সামনে শর্টগান দিয়ে গুলি করে হত্যা করে কিলার শামীম ও তার বাহিনী। ২০১৬ সালে যশোরের সাতমাইলের ইদ্রিস আলীকে গুলি করে হত্যা করে তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও সিরিয়াল কিলার মখলেসুর রহমান নান্নু। ওই হত্যাকান্ডে শামীমসহ এই শর্টগানও ব্যবহৃত হয় বলে অনেকে জানিয়েছেন। নান্নু এবং কিলার শামীম সম্পর্কে তারা শালা-দুলাভাই। তারা এক সাথে চৌগাছার মকবুল মেম্বর, বাওড় গার্ড শহিদুলসহ একাধিক হত্যাকান্ডের হোতা। ইদ্রিস হত্যার পর পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে নান্নু ও শামীম আবারো ভারতে চলে যায়। ২০১৭ সালে শামীম যশোর আরো একটি হত্যাকান্ড ঘটায়। সে ঘটনায় তার নামে যশোর কোতয়ালি থানায় হত্যা ও অস্ত্র মামলা হয়।

এরপরই কিলার শামীম অস্ত্রগুলো নিজ গ্রামের এই মনি, বাঙ্গাল বিল্লাল, ইয়াসিন, ফেন্সি বাবুল, সাগরদের কাছে পালাক্রমে রেখে আসছে। ২০২০ সালের ২৫ অক্টোবর পুলিশ পরিচয়ে রায়হানকে বাড়ি থেকে দুটি শর্টগান ঠেকিয়ে উঠিয়ে নিয়ে মারপিট করেছিল কিলার শামীম। কিলার শামীমের এক সময়কার সর্বোচ্চ বিশ্বস্ত সঙ্গী ও আশ্রয়দাতা কাঠমিস্ত্রি আকতারুলও জানিয়েছেন, ‘একটা নয়, ২টি শর্টগানসহ একাধিক পিস্তল আছে কিলার শামীমের কাছে। যেগুলো সে আমার বাড়িতেও নিয়ে আসতো।” তিনি আরো জানান, আমার বাড়িতে থাকাবস্থায় (২০২০সালে) আমার স্ত্রী ও মেয়েকে কুপ্রস্তাব দেয় শামীম। প্রতিবাদ করলে বাঙ্গাল বিল্লালের সামনে সে আমাকে পিস্তল দিয়ে গুলি করে। প্রাণ বাঁচাতে আমি দৌঁড়ে পাশের একটি বাগানে পালিয়েছিলাম। কিছুক্ষণ পরে সেই বাড়িতে এসে এক গৃহবধূকে ডেকে পাঠায় শামীম। সে না আসলে ওই বাড়িতেও ফাঁকা গুলি ছুড়ে ভয় দেখায় সন্ত্রাসী শামীম। এদিকে শামীমের ভয়ে মেয়ে বউ নিয়ে আকতারুল পালিয়ে যায়।

তাকে না পেয়ে তার আত্মীয়-স্বজনকে মারপিট করে দেড় লাখ টাকা চাদা নেয় শামীম। সর্বশেষ গত ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে জগন্নাথপুর গ্রামে এক ধর্মীয় অনুষ্ঠানে কিলার শামীমের নেতৃত্বে শান্ত এবং বাবুল সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম রেজাকে আক্রমণ করে । শামীম রেজা বলেন, সেসময় কিলার শামীম এবং শান্তর হাতে দুটি পিস্তল ছিল।” সে ঘটনায় উপস্থিত স্থানীয় লোকজন শামীম রেজাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে ৩ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুড়ে শামীম রেজা ও যাওয়ার সময় দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। কিলার শামীমের অস্ত্রের বিষয়ে চৌগাছা থানার ডিউটি অফিসার এএসআই খোরশেদ বলেন,“ অবৈধ অস্ত্র ও মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। জানা যায়, কিলার শামীম ২০১৯ সাল থেকে নিজ গ্রামের বাড়িতে বসেই সন্ত্রাসী বাহিনী পরিচালনা করে আসছেন। তার বিরুদ্ধে একের পর এক সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলেও অদৃশ্য কারণে ধরা-ছোঁয়ার বাইরে রয়েছে এই সন্ত্রাসী। অস্ত্র ভান্ডারেও প্রশাসনের হাত পড়েনি।