প্রিয় নবীর ঘোষণা অনুযায়ী দ্বীনের রাহাবার হিসেবে পরিচিত হক্বানী আলেম - উলামারা। যুগের পরিবর্তনে যখনই মানব সমাজে অন্যায়- অবিচার ও বাতিলের মেহনত বৃদ্ধি পাবে তখনই বাতিলের হুংকার - ও সহীহ ইসলামের ঝান্ডা নিয়ে অগ্রগণ্য ভুমিকা রাখবে হক্কানী আলেম সমাজ - এমনটাই বিদায় হজ্বের ভাষণে বলেছিলেন আখেরী নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। রাসূলের সত্য দ্বীন ও হক্বের মেহনতকে দুনিয়ার জমিনে বাস্তবায়িত করতে ধর্মভীরু সকল মুসলমান সর্বদা বদ্ধপরিকর যার বাস্তব উদাহরণ সম্প্রতি রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সারা বাংলার আলেম সমাজের ডাকা মহাসমাবেশ। উক্ত মহাসমাবেশে ১০ লাখেরও বেশি আলেম সমাজের উপস্থিতিতে নেতৃত্বস্থানীয় প্রায় কয়েকশত হক্বানী আলেম ও তলাবা সহীহ দ্বীনের পরিচয় কি- তা ব্যাখা করতে গিয়ে তাবলীগের বুনিয়াদি মেহনতের পরিচয় ও আলেম সমাজের ভূমিকা সুন্দরভাবে ব্যাখা করেন। তাদের ভাষ্যমতে, কুরআনের আইন অনুযায়ী, তাবলীগের মূল মেহনতকারী হলেন- হক্বানী আলেম সমাজ। এই আলেম সমাজ পূর্বেও যেমন সহীহ তাবলীগের সাথে সম্পৃক্ত ছিল, বর্তমানে তারা যুক্ত রয়েছে। কিন্তু ২০১৮ সাল থেকে এই সহীহ মেহনতে ঝামেলা তৈরি করেন এক শ্রেণির গায়রে আলেম। সহীহ দ্বীনের মেহনত থেকে ছিটকে পড়া কওমী আলেম ভারতের মাওলানা সাদ সাহেব। তাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে তৈরি হয় সাদিয়ানি ফেতনা এ যেন আমেরিকার তারকা যুদ্ধের মতো। উক্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময়, মধূপুরের পীর সাহেব ঘোষণা করেন, এখন থেকে,এক ইজতেমা, এক কাকরাইল। বক্তব্য প্রধানকালে মুফতি সাখাওয়াত হোসেন রাজি হাফিজাহুল্লাহ বলেন, কাদিয়ানি গেছে যে পথে, সাদিয়ানি যাবে সেই পথে। আরও অসংখ্য আলেম, বাতিলের মেহনতকারী হিসেবে পরিচিত সাদ অনুসারীরদেক হুশিয়ার দেন- তারা যেন বাতিলের মেহনত নিয়ে কাকরাইল মসজিদ ও ইজতেমার মাঠে আর বিশৃঙ্খলা না করেন। তাছাড়া আসন্ন বিশ্ব ইজতেমা ও কাকরাইল মসজিদ বিষয়ে বিবাদমান দুই পক্ষ ক্রমশ সংঘাতের দিকে ধাবিত হচ্ছে। আগামী শুক্রবার থেকে সাদপন্থীদের কাকরাইল বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও আলেম সমাজের মহাসমাবেশের ঘোষণা অনুযায়ী কাকরাইল তাদের অনুকূলে থাকবে এমনটাই জানিয়েছেন হক্বপন্থী হিসেবে পরিচিত যুবায়েরপন্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দেবে হেফাজতে ইসলাম ও কওমী মাদরাসার ছাত্রসহ ধর্মভীরু সকল ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। তবে তাবলীগের সাদ অনুসারীরাও তাদের অনুসারী সকল লোকের জামায়েতের মাধ্যমে কাকরাইল মসজিদ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছ।উল্লেখ্য, তাবলীগ জামাতের বিবাদমান দ্বন্দ্বের পর থেকে বিগত ৭ বছর যাবত প্রশাসনের সিদ্ধান্তে হক্বপন্থী হিসেবে পরিচিত, যুবায়েরপন্থীরা ৪ সপ্তাহ ও সাদপন্থীরা দুই সাপ্তাহ করে পর্যায়ক্রমে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। যদিও বিগত সরকারের এমন বৈষম্যপূর্ণ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে আসছিল সাদপন্থীরা। অপরদিকে কাকারাইল মসজিদেরর অপর অংশে যুবায়েরপন্থীরা ১২ মাসই আলাদা অবস্থান করে বলে তাদের অভিযোগ কিন্তু হেফাজতপন্থী আলেমদের সম্প্রতি ঘোষণার পেক্ষাপটে হক্বের মেহনতের দাবিদার যুবায়েরপন্থীরা সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে কাকরাইল স্থায়ীভাবে দখল নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে এমনটা সাদ অনুসারীদের অভিযোগ।এমন পরিস্থিতিতে ভয়াবহ ধর্মীয় সংঘাত ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি মারাত্মক অবনতি এবং হতাহতের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন সাধারণ মুসল্লিরা। তারা মনে করছেন, সরকারি সিদ্ধান্ত মেনে উভয় পক্ষের দ্বন্দ্ব নিরসন দরকার। আলেম উলামাগণের সাথে পরামর্শ করে সুষ্ঠুভাবে কাকরাইল মসজিদ, বিশ্ব ইজতেমার কার্যক্রম পরিচালনা করলে এই সংঘাত তৈরি হবে না।সাদপন্থী মিডিয়া সমন্বয়ক মো সায়েম বলেন, ‘আমরা শুরু থেকেই শান্তিপূর্ণ আলোচনা ও সহবস্থানের মাধ্যমে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও শান্তিপূর্ণ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যুবায়েরপন্থীরা উগ্রতার দিকে হেটে পরিস্থিতিকে জটিল ও সাংঘর্ষিক করে তুলছেন। আমরা স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) সকালে কাকরাইলে প্রবেশ করবো। এখানে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে এর দায় যুবায়েরপন্থী ও প্রসাশনকে নিতে হবে। যুবায়ের অনুসারীরা বলেন, সাদিয়ানিরা যদি তওবা করে হক্বের মেহনতে আলেমদের অধীন সম্পৃক্ত হয় তবে অনাকাঙ্ক্ষিত কোন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা নেই। কেননা, আমরা শান্তির পথে মেহনত করতে আগ্রহী। দেশের বর্তমান অবস্থার জন্য সাদপন্থীরা দায়ী। সার্বিক বিবেচনায়, এ যেন নতুন কোন ধর্মযুদ্ধ। তবে কি শান্তির ধর্ম ইসলামের মাধ্যমে তাবলীগের বিভাজন দুর হবে না?