চাঁপাইনবাবগঞ্জের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জারা জাবীন মাহবুব ও তার বাবা কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিল দখল, চাঁদাবাজি, হয়রানি ও লুটপাটের অভিযোগ করেছেন মৎস্যজীবীরা৷ বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা বাজারে ৫০০ মৎস্যজীবী পরিবারের ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মৎস্যজীবীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন কুমিরাদহ বিলের ইজারাদার মো. আলফাজ উদ্দিন৷ এসময় তিনি বলেন, নিয়ম মাফিক চৌধুরী ইসমাইল সাজ্জাদ জোয়াদ ওয়াকফ এস্টেটের মোতাওয়াল্লী এমপি জারা জাবীন মাহবুবের বাবা কাইয়ুম রেজা চৌধুরীর নিকট কাছ থেকে কুমিরাদহ বিল ইজারা নেয়। কিন্তু এমপি জারা তার লোকজনের মাধ্যমে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
তিনি আরও বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে এমপি নিজে উপস্থিত থেকে বিলের ধারে থাকা মাছের খাবার ও বিভিন্ন সরঞ্জাম লুটপাট করেছে৷ এছাড়াও একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে এমপি জারা৷ এনিয়ে প্রায় ৫০০ মৎস্যজীবী পরিবার বিনিয়োগ করা আড়াই কোটি টাকা হারানোর আশঙ্কায় রয়েছে। এমনি বিভিন্ন হুমকি-ধামকিতে বর্তমানে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে মৎস্যজীবীরা। আলফাজ উদ্দিন বলেন, পুলিশ দিয়ে আমাদেরকে নানাভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে এমপি জারা জাবীন মাহবুব।
আমাকে দুইবার অপহরণের চেষ্টা করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা গ্রহণ করেনা। এমপির সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার ও হুমকিতে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছে ৫০০টি মৎস্যজীবী পরিবার। আমরা চাই, আমাদেরকে বিনাবাধায় ইজারা নেয়া বিল মাছ উৎপাদন করতে দেয়া হোক অথবা আমাদের ইজারা বাবদ দেয়া অর্থ ফেরত দেয়া হোক। আলফাজের অভিযোগ, কুমিরাদহ বিল ছাড়াও আমরা ৫০০ জেলে পরিবার কায়েম রেজা চৌধুরীর কাছে ১০ কোটি ৯০ লাখ ৭১ হাজার ২১২ টাকা পাওনা রয়েছে, যা তার বাড়ীর দফাদার রবু, কেয়ারটেকার খাইরুল ইসলাম খায়ের, ও তার প্রধান হিসাব রক্ষক মোজাম্মেল হক ও কায়েম রেজা চৌধুরীর নিজের স্বাক্ষরিত ওয়াকফ স্টেটের ভাউচার ও চৌথায় উল্লেখ্য থাকলেও তিনি টাকা দিচ্ছেন না।
তার কাছে টাকা চাইতে গেলে বিভিন্ন ধরনের হুমকি ধামকি দিচ্ছেন। মৎস্য খাদ্য লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গত ১৬ জুলাই ২৪ আমার স্ত্রী ফাতেমা বেগম বাদী হয়ে শিবগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেও তা এখনো তদন্ত হয়নি। এবিষয়ে শিবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইন্দ্রজিৎ জানান, যেহেতু আমি ঐ এলাকার দায়িত্বে আছি এবং বিভিন্ন কাগজ ও আদালতের আদেশ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বিলে অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ চুরি করে আলফাজ ও তার লোক। তাই তাকে বারবার সর্তক করার পাশাপাশি আদালতের আদেশ ও বৈধ কাগজপত্র নিয়ে থানায় দেখা করার কথা বলা হলেও আলফাজ থানায় আসছেন না। তাকে হয়রানি বা কেউ হুমকি দিচ্ছে এমন ঘটনা সত্য নয়।আর পুলিশের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সত্য নয়।
তবে বিল দখল, চাঁদাবাজি, হয়রানি ও লুটপাটের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে তা মিথ্যা বানোয়াট বলছেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জারা জাবীন মাহবুব। তিনি বলেন, বিলটি আমাদের পৈতৃক সম্পত্তি। আলফাজ উদ্দিন ওয়াকফ এস্টেটের দেখার জন্য ম্যানেজার নিযুক্ত ছিলেন। তার হাত দিয়ে লাখ লাখ টাকা তার বাবা খরচ করেছেন। সে বাবার সরলতার সুযোগ নিয়ে ২০ লাখ টাকার চেকে ঘষামাযা করে ৯ কোটি টাকা বেশি লিখে জালিয়াতি করেছেন।এমপি জারা আরও বলেন, আমার বাবার একাধিক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আদালতে বাবাসহ তার সহযোগীদের আসামী করে বেশ কিছু অভিযোগ দাখিল করেছে।
সম্প্রতি শিবগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে তিনটি দায়েরকৃত মামলা দরখাস্তকারীর পক্ষে প্রতিকুল প্রতিয়মান হওয়ায় খারিজ করা হয় এবং দরখাস্তকারীর পক্ষে মাছ চাষের অনুমতির আদেশ ভ্যাকেট করা হয়। সে সাথে বিলে অস্থায়ী নিষেধাক্কার আদেশ পেতে বাদী পক্ষ হকদার নয় বলে আদেশ দেয়া হয়েছে।জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জারা জাবীন মাহবুব জানান, তিনি ও তার পিতা দীর্ঘদিন ঢাকায় অবস্থান করায় এবং অভিযোগকারী আলফাজ বরখাস্ত হওয়ায় রাগে এলাকার কিছু খারাপ লোক নিয়ে তাদের পৈত্রিক সম্মতি জোর করে দখলের চেষ্টা করে।
তিনিসহ তার কিছু লোকজন বিলটি দখল করে রেখেছে। এমনকি আমাদের অনুগত লোক ও পরিবারের সদস্যদের নামে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা করছে। এছাড়াও আমাদের স্থাপনায় আগুন দিয়েছে আলফাজ উদ্দিনের লোকজন। আদালত ও থানায় এসব অভিযোগ না টেকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করছে যা দু:খজনক।