চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২ ছাত্র নিহত হওয়ার জেরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী শুরু করেছেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৯টা থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান গেইটের সামনের কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলেদিয়ে টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের কারণে কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ আটকা পড়ে।

 চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে দুর্ঘটনায় চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) ২ ছাত্র নিহত হওয়ার জেরে মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী শুরু করেছেন চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এদিন সকাল ৯টা থেকে চুয়েট ক্যাম্পাসের প্রধান গেইটের সামনের কাপ্তাই সড়কে গাছ ফেলেদিয়ে টায়ারে আগুন দিয়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভের কারণে কাপ্তাই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হওয়ায় শত শত যানবাহন ও সাধারণ মানুষ আটকা পড়ে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সহপাঠিদের মৃত্যুর প্রতিবাদে দাবি না মানা পর্যন্ত চুয়েটের সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। তীব্র রোদ উপেক্ষা করে সকাল থেকে সড়ক অবরোধে অবস্থা নিয়েছে চুয়েটের শিক্ষার্থীরা।

৯ দফা দাবী উপস্থাপন করে ৭২ ঘন্টার আল্টিমেটাম স্লোগান দিতে থাকেন। নিহত চুয়েট শিক্ষার্থী তৌফিক হোসেনের গায়ভী জানাজা সড়কের উপর আদায় করেন তারা এবং সন্ধ্যায় শান্ত সাহার জন্য বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন রয়েছে বলে জানান তারা।

৯ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—গাড়ির পলাতক চালক ও তার সহযোগীকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসে আধুনিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, আধুনিক মানের সরঞ্জামসহ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা, রাস্তার মাথা এলাকা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত চার লেন মহাসড়ক করা, প্রতিটি বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশার কাগজপত্র ও চালকদের লাইসেন্স সঠিক আছে কি না নিয়মিত যাচাই করা, ছাত্রকল্যাণ পরিষদকে জবাবদিহির আওতায় আনা এবং ছাত্র প্রতিনিধিদল গঠন করা, নিহত ও আহত ব্যক্তিদের পরিবারকে যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া।

এদিকে দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ঘোষিত নিহত শিক্ষার্থী গায়েবানা জানাজা সড়কেই অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেলা ৩টায় শোকসভা ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিয়েছেন চুয়েট ভিসি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল আলম, রেজিস্ট্রার ড. শেখ মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরসহ অনুষদ সমূহের ডিন, বিভাগীয় প্রধানগণ এবং চুয়েটের শিক্ষক, কর্মকর্তাগণ।

দুর্ঘটনায় দুইজন ছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে চুয়েট কর্তৃপক্ষ, চুয়েটের ছাত্র প্রতিনিধিবৃন্দ, বাস মালিক সমিতি, পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে জেলা প্রশাসক আজ দুপুরের পর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে বৈঠকে বসেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বৈঠক চলছিল।

উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার বিকাল সোয়া ৩টার দিকে চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বাসের সঙ্গে মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী গতকাল প্রাণ হারিয়েছেন। দুর্ঘটনায় চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের (২০তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী (আইডি-২০০১১০০) শান্ত সাহা নরসিংদীর কাজল সাহার ছেলে এবং তৌফিক হোসেন নোয়াখালী সুধারামের নিউ কলেজ রোড এলাকার মোহাম্মদ দেলোয়ারের ছেলে তিনি একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (২১তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী (আইডি-২১০১০০৬)।

অন্যদিকে গুরুতর আহত পুরকৌশল বিভাগের ২য় বর্ষের ছাত্র (২১তম ব্যাচ) জাকারিয়া হিমু চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হন চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের ৩ শিক্ষার্থী। রাঙ্গুনিয়ায় ঘোরা শেষে তারা চুয়েটের দিকে ফিরে আসছিলেন। কাপ্তাই সড়কের শাহ আমানত বাস সার্ভিসের একটি বাস বহদ্দারহাট থেকে রাঙ্গুনিয়ার দিকে যাচ্ছিল। সেলিমা কাদের কলেজ গেট এলাকায় বেপরোয়া বাসটির সাথে চুয়েট শিক্ষার্থীদের মোটর বাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এসময় ঘটনাস্থলে মারা যান শান্ত সাহা এবং গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পর মারা যান তৌফিক হোসেন।

এই সময় সড়কে অবস্থান নেন চুয়েটের অন্তত চার সহস্রাধিক বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। তারা প্রথমে বাস আটকালেও সন্ধ্যা ৭টার পর থেকে অ্যাম্বুলেন্স ও রোগীবাহি গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো যানবাহন চলতে দেননি। এ সময় শাহ আমানত লাইনের তিনটি বাস আটক করেন তারা। বিক্ষুব্ধ অবস্থানের এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চুয়েটের ভেতর আটক করে রাখা তিনটি বাসের একটি বাস নিজেরা চালিয়ে বের করে আনেন শিক্ষার্থীরা। সড়কে এনে গাড়িটি প্রথমে ভাঙচুর চালান, এরপর আগুন লাগিয়ে দেন ।। আগুন লাগার পর গাড়িটি সড়কের ডান পাশের ওয়াকওয়ের র‍্যালিং গিয়ে ধাক্কা খেলে র‍্যালিংয়ের বেশ কিছু অংশ ভেঙে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। 

ঘটনাস্থলে থাকা রাউজান থানার ওসি জাহেদ হোসেন জানান, সোয়া নয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন গাড়ির আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এরপর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এদিকে দীর্ঘ আড়াই ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা।