কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের ওপর অভিমান করে গলায় ফাঁস দিয়ে জিনিয়া খাতুন নামের এক ছাত্রী ‘আত্মহত্যা’র ঘটনায় মরদেহ নিয়ে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসী। এ সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিহত ছাত্রীর মরদেহ দেখতে গেলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাকে মারধর করে। গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) বেলা দেড়টার দিকে উপজেলার কয়া ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এর আগে গত সোমবার বিকেলে বিদ্যালয় থেকে বাড়ি ফিরে গলায় ফাঁস দেয় জিনিয়া খাতুন। সে সুলতানপুর গ্রামের জিল্লুর রহমানের মেয়ে ও সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী। গ্রামবাসী ও নিহত স্কুলছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ ছাত্রী সোমবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে স্কুলের ছাদে ধূমপান করছিল। সেখানে জিনিয়াও ছিল। বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মসিউর রহমান লাল্টু ও ওয়ালিউর রহমান তাদের মুঠোফোনে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য ভিডিও করেন।
পরে ছাত্রীদের ডেকে মারধর করে ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। সেই সঙ্গে ছাড়পত্র (টিসি) দিয়ে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়াসহ অভিভাবকদের জানানোর ভয় দেখান। অভিমানে বিদ্যালয় ছুটির পর জিনিয়া বাড়িতে এসে নিজের ঘরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মঙ্গলবার বেলা দেড়টার দিকে জিনিয়ার মরদেহ নিয়ে বাড়ির সামনে মানববন্ধন শুরু করে গ্রামবাসী। কিছুক্ষণ পর সুলতানপুর মাহতাবুদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ সেখানে গেলে ক্ষুব্ধ গ্রামবাসী তাকে মারধর করে। আধাঘণ্টা মানববন্ধনের পর স্থানীয় সুলতানপুর কবরস্থানে জিনিয়ার মরদেহ দাফন করা হয়। মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইলিয়াস হোসেন বলেন, জিনিয়ার মৃত্যুর খবর জানার পরও প্রধান শিক্ষক দেখতে আসেনি। তা ছাড়া প্রধান শিক্ষক অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এসব ঘটনায় গ্রামবাসী তাকে দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষক মশিউর রহমান লাল্টু বলেন, ছাত্রীদের ধুমপানের দৃশ্য দেখার পর তাদের ডেকে শুধু ব্যাগগুলো রেখে দেওয়া হয়। তাদের বলা হয়, অভিভাবকদের বিদ্যালয়ে ডেকে তারপর ব্যাগ ফেরত দেওয়া হবে। ধুমপানের দৃশ্য কেউ ভিডিও করেনি। যে অভিযোগ করা হচ্ছে তা সত্য না। অভিযুক্ত অপর শিক্ষক ওয়ালিউর রহমানও একই কথা বলেন। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবদুর রশিদ বলেন, ‘ঘটনার সময় আমি বিদ্যালয়ের বাইরে ছিলাম। একজনের মাধ্যমে ঘটনা জানতে পারি। বিষয়টি নিয়ে স্কুলছাত্রীর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলতে তাদের বাড়িতে গেলে গ্রামবাসী তার ওপর চড়াও হয়। কুমারখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকিবুল ইসলাম বলেন, মরদেহ নিয়ে মানববন্ধনের সময় গ্রামবাসী একটু ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।