বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে জামালপুর জেলায় অন্তত ৭০ হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এখনো চলমান রয়েছে অনেক প্রকল্পের কাজ। উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে সক্রিয় ছিল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ একটি চক্র। কৌশলে চক্রটি এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, পানি উন্নয়ন বোর্ড, শিক্ষা প্রকৌশল, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, জেলা পরিষদ, খাদ্য অধিদপ্তর, পৌরসভা, বিএডিসিসহ সরকারি অফিসের সব কাজ বাগিয়ে নিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করে বিল পাশ করিয়ে নেয়। ফারুক আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে দুর্নীতিবাজ চক্র নিয়ে যাতে কোনো টু-শব্দ না হয় তার কৌশলে জেলার সাংবাদিকদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে রাখে। মোটা অঙ্কের অনুদান দিয়ে সাংবাদিকদের একাধিক সংগঠন বানিয়ে সাইন বোর্ড তুলে দেন এই চৌধুরী। পছন্দের একাধিক সাংবাদিককে বাড়ি-গাড়ী করে দিতে ব্যয় করেন বিপুল পরিমান অর্থ। অভিযোগ উঠেছে, কথিত ওইসব সাংবাদিক সংগঠন এখনো পরিচালিত হয় আত্মগোপনে থাকা ফারুক আহমেদ চৌধুরীর অর্থেই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জেলার বড় বড় প্রকল্পগুলোর বেশিরভাগ কাজ পেত তমা কনস্ট্রাকশন, ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন ও চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ। ঠিকাদারি কাজ বাগানো ও ভাগবাটোয়ার গুরু ছিলেন জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান ফারুক আহমেদ চৌধুরী। এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, শিক্ষা প্রকৌশল, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যমুনা সার কারখানা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ এবং জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উন্নয়ন কাজে নিম্নমানের কাঁচামাল ব্যবহার ও দুর্নীতি করে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। জামালপুর জেলার সরকারি সব সেক্টরের নিয়ন্ত্রণ তার হাতেই ছিল। প্রভাব খাটিয়ে তিনি সরকারি সব কাজ নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখে। উল্লেখিত তিনটি প্রতিষ্ঠান বাদে তার পছন্দের প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি ছাড়া কেউ কাজ করতে পারেননি। তমা কন্সট্রাকশন, চৌধুরী এন্টারপ্রাইজ এবং ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনের লাইন্সেস ব্যবহার করে জেলার বড় বড় উন্নয়ন কাজ তিনি একাই বাগিয়ে নেন। এছাড়াও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ, শেখ হাসিনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য করেন বিগত ১৫ বছর। এভাবেই তিনি কম সময়ে বিপুল অর্থ-সম্পদের মালিক হন। টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি দপ্তরের অর্থ লোপাটে ফারুক আহমেদ চৌধুরীর সাথে মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করেছেন জামালপুর এলজিইডির তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেক। ফারুক চৌধুরী এলজিইডিতে নির্বাহী প্রকৌশলী সায়েদুজ্জামান সাদেকের চেয়ারে বসেই টেন্ডারবাজির কাজ সারতেন।বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ফারুক আহমেদ চৌধুরীর জামালপুর শহরে তিনটি বিলাসবহুল বাড়ি, শ্যামগঞ্জ কালীবাড়ি এলাকায় একটি ইটভাটা, শেরপুর জেলায় শত বিঘা জমির মৎস্য খামার, মেলান্দহ উপজেলায় আটপাড়া বাজারে মার্কেট, ঝাউগড়ায় মার্কেটে ২৮টি দোকান, ঢাকার মনিপুরী পাড়া, মিরপুর ডিওএইচএস এস ও লালমাটিয়ায় ৫টি ফ্ল্যাটসহ নামে-বেনামে হাজার কোটি টাকার সম্পদ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। জামালপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে তার স্ত্রীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ও নিজের নামে শত বিঘা জমি রয়েছে। শহরের বকুলতলা চত্বরের চারপাশে রয়েছে তাঁর শত কোটি টাকা মূল্যের জমি এবং ০.৩৪ শতাংশ সরকারি জমি থেকে হিন্দু পরিবারকে জোর পূর্বক উচ্ছেদ করে নিজ নামে লীজ নিয়ে ঘর বানিয়ে ভাড়া দিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন মহাসড়কে ফারুক আহমেদ চৌধুরীর দূরপাল্লার চার ধরনের বিলাসবহুল বাস এখনো চলাচল করে। নিজে, তার স্ত্রী, সন্তানদের প্রত্যেকই ব্যবহার করেন কোটি টাকা মুল্যের একাধিক গাড়ী। অভিযোগ উঠেছে, জেলা বাস ও ট্রাক মালিক সমিতির নামে প্রতি মাসে ৫/৭ লাখ টাকা এবং ইট ভাটা মালিক সমিতির নামে চাঁদা তুলে একাই পকেটে ভরতেন বলে অভিযোগ রয়েছে মালিক পক্ষের। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়ই তিনি ওইসব সংগঠনের সভাপতি ছিলেন।দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানায় তার নেতৃত্বে সিন্ডিকেট এ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রি, ঠিকাদারী নিয়ন্ত্রন, সার পরিবহন, চাদাবাজিসহ বিভিন্ন ভাবে লুটে নিয়েছে হাজার কোটি টাকা। ফারুক চৌধুরীর নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট পরিচালনা করতেন আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক ও ইমান আলী নামে এক ব্যক্তি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফারুক আহমেদ চৌধুরী মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।