ষাটোর্ধ্ব আয়শা বেগম বলেন, সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছি। চিকিৎসার জন্য প্রায় ঢাকা যেতে হয়। লঞ্চ-ফেরিতে ওঠা-নামা করে আর পেরে উঠি না। শরীর অসুস্থতা বোধ করলেও এ জন্য ঢাকা যাওয়া সহজে হয়ে উঠে না। সেতু চালু হলে নিয়ম করে ডাক্তার দেখাতে পারব।

দিন গুনছে শিবচরবাসী। ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে ২৬ জুন সকাল থেকেই সেতুর ওপর দিয়ে পদ্মা পার হবেন তাঁরা। থাকছে না আর ঘাটের দুর্ভোগ। বাড়ির সামনে থেকে গাড়িতে উঠে ঢাকা গিয়ে নামবেন, এমন প্রত্যাশা শিবচরবাসীর। শিবচরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পদ্মা সেতু চালু হলে মাত্র ৪৫ থেকে ৫০ মিনিটেই রাজধানী ঢাকায় পৌঁছাতে পারবেন তাঁরা। পথে নামতে বা গাড়ি পরিবর্তনের প্রয়োজন হবে না যাত্রীদের। এটাই সবচেয়ে বড় পাওয়া বলে জানান তাঁরা। ষাটোর্ধ্ব আয়শা বেগম বলেন, সেতু চালু হওয়ার অপেক্ষায় আছি। চিকিৎসার জন্য প্রায় ঢাকা যেতে হয়। লঞ্চ-ফেরিতে ওঠা-নামা করে আর পেরে উঠি না। শরীর অসুস্থতা বোধ করলেও এ জন্য ঢাকা যাওয়া সহজে হয়ে উঠে না। সেতু চালু হলে নিয়ম করে ডাক্তার দেখাতে পারব। পদ্মা সেতুর কারণে বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসার জন্য বিরাট উপকার হবে। আনোয়ারা বেগম নামের আরেক নারী বলেন, ‘শিবচর থেকে ঢাকার দূরত্ব খুব বেশি না। শুধুমাত্র পদ্মা নদীর কারণেই আমরা ঢাকা থেকে পিছিয়ে আছি। প্রয়োজনেও অনেক সময় যেতে পারি না। পদ্মা পারাপার কঠিন হয়ে পরে। সেতু চালু হলে মানুষের ঢাকা যাওয়ার দুর্ভোগ থাকবে না। এক গাড়িতেই পৌঁছাতে পারবে ঢাকায়। 


মোসলেহ আলম চৌধুরী নামের এক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বয়স হয়ে গেলে গ্রামে যেতে মন আনচান করে। পদ্মার কারণেই মন চাইলেও যেতে পারি না। সেতু চালু হলে গভীর রাতেও গ্রামের বাড়িতে আসা যাবে। শিবচরবাসীর জন্য রাজধানী ঢাকা থাকবে হাতের মুঠোয়।

জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা যেতে এক্সপ্রেসওয়েতে পথে কোথাও কোনো গাড়ির থামতে দেওয়া হবে না। পদ্মা সেতু চালু হলে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে ঢাকায় পৌঁছাতে বিরামহীনভাবেই একটানা পৌঁছানো সম্ভব হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং দক্ষিণাঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ভাঙ্গা পর্যন্ত সহজ যোগাযোগের জন্য ২০১৬ সালে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রায় ১১ হাজার ৩ কোটি টাকা ব্যয় এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ শেষে ২০২০ সালের মার্চে যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয় দীর্ঘতম এই সড়কটি। এই এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে সব মিলিয়ে ২৫টি সেতু, ২৩ টি ফ্লাইওভার, ১৯ টি আন্ডারপাস, ৫৪ টি কালভার্ট এবং চারটি রেলওয়ে ওভারপাস।

এ ছাড়া এক্সপ্রেসওয়ের জন্য আলাদা করে রয়েছে দুটি টোলপ্লাজা। ছোট যানবাহন চলাচলের জন্য রয়েছে পৃথক দুটি লেন। ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শিবচরের পাঁচ্চর পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে রয়েছে ২০ কিলোমিটার। এরপর জাজিরা পয়েন্টের পদ্মা সেতুর অ্যাপ্রোচ সড়ক এবং মাওয়া থেকে যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ের দূরত্ব ৩৫ কিলোমিটার। ৬ লেনের এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণ করেছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল ওয়ার্কার্স অর্গানাইজেশন (পশ্চিম)। এ নিয়ে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, সেতু চালু হলে শিবচরবাসীর জন্য ঢাকা যেতে বেশি সময় লাগবে না। নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য বড় মাইলফলক এই পদ্মাসেতু। তা ছাড়া সেতুকে কেন্দ্র করে এই এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই অঞ্চল।