বর্তমান সময়ে দাখিল পরীক্ষার্থীরা তাদের বিদায় অনুষ্ঠান করতে গেলে তাদেরকে গাল-মন্দ করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তার এই অনিয়ম আর মেনে নেয়া যায় না। আমরা তার বিচার চাই।

বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা দাখিল মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক জালাল আহমেদ এর বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিকার চেয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েছে মাদ্রাসার ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার্থীরা। শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১১টার দিকে কালমেঘা ইউনিয়নের মাদ্রাসা সংলগ্ন সোনালী বাজারে এ মানববন্ধনে অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন যে, ২০২৩ সালের দাখিল পরীক্ষার পূর্বে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের আনুষ্ঠানিক ভাবে বিদায় দেওয়ার কথা থাকলেও সেটি করেননি মাদ্রাসার সুপার জালাল আহমেদ। বরং শিক্ষার্থীরা নিজ উদ্যোগে বিদায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলেও সেখানে বাঁধা দিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করে বের করে দেন। এছাড়াও টাকার বিনিময়ে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি গঠন, নিয়োগ বাণিজ্য ও বিভিন্ন খাতের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ রয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে দাখিল পরীক্ষার্থীরা তাদের বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য আয়োজন করতে গেলে তাদেরকে মাদ্রাসা সুপার জালাল আহমেদ গালাগালি ও ধাক্কা দিয়ে মাদ্রাসা থেকে বের করে দেয়।

এই ঘটনার পরে মাদ্রাসা সুপারের নানান দূর্নীতি ও অনিয়মের বিরুদ্ধে এই মানববন্ধন আয়োজন করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও এলাকাবাসী। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল জলিল খতিব বলেন, মাদ্রাসা সুপার দীর্ঘদিন ধরে এই মাদ্রাসায় চাকরি করে আসছেন। সেই সুবাদে তিনি প্রতি বছর দাখিল পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড নির্ধারিত টাকার চেয়ে দিগুন টাকা নেন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে।  তাছাড়া ১৩ লাখ টাকার বিনিময়ে দুই জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। সুপার জালালের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের একটি মামলা দুর্নীতি কমিশনে চলমান আছে। তার এই অপকর্ম অনেক দিন ধরে চলে আসছে। তাকে সহযোগীতা করে আসছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অফিসের একাডেমিক সুপার ভাইজার মনিরুল ইসলাম। বর্তমান সময়ে দাখিল পরীক্ষার্থীরা তাদের বিদায় অনুষ্ঠান করতে গেলে তাদেরকে গাল-মন্দ করে মাদ্রাসা থেকে বের করে দিয়েছে। তার এই অনিয়ম আর মেনে নেয়া যায় না। আমরা তার বিচার চাই।

মাদ্রাসার একাধিক দাখিল পরীক্ষার্থী বলেন, তাদের দাখিল পরীক্ষার ফরম পুরন, কোচিং ফি, উন্নয়ন ফি এবং বিদায় অনুষ্ঠানের জন্য মাদ্রাসা সুপার ৫ হাজার ২ শত করে টাকা নিয়েছে। পরীক্ষার ৫ দিন আগে প্রবেশ পত্র দিয়ে দেয়। এ সময় বিদায় অনুষ্ঠানের কথা বললে তিনি প্রতি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে একহাজার করে টাকা চায়। টাকা না দিলে অনুষ্ঠান করবে না বলে জানান। শিক্ষার্থীরা জানান বৃহস্পতিবার সকালে আমরা সবাই মিলে সকল শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতরণ এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে দোয়া আনতে গেলে ছোট ভাই-বোনদের সামনে আমাদের গালল-মন্দ করে এবং ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেন। এছাড়াও কোন কথা বললে পরীক্ষার হল থেকে বহিস্কার করে ফেল করিয়ে দিবে বলে হুমকি দেন সুপার জালাল আহমেদ।

ভবিষ্যত আমাদের ছোট ভাইদের সাথে যেন এরকম আর না হয় তাই আজ রাস্তায় নেমেছি। আমরা এই সুপারের বিচার চাই।  মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম নাসির, ইউপি সদস্য আব্দুর রহিম মনির সহ শতাধিক এলাকাবাসী। অভিযোগের অস্বীকার করে মাদ্রাসা সুপার জালাল আহমেদ জানান, আমি সহকারী শিক্ষক হাবিবুল্লাহ কে বিদায় অনুষ্ঠান করতে দায়িত্ব দিয়েছিলাম। তবে হাবিবুল্লাহ জানান দায়িত্ব দিয়ে আবার অনুষ্ঠান করতে নিষেধ করেছেন মাদ্রাসার প্রধান। এ বিষয়ে পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুফল চন্দ্র গোলদার জানান, এখন পর্যন্ত কোন শিক্ষার্থী অথবা অভিভাবকের কাছ থেকে কোন অভিযোগ পায়নি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।