পিরোজপুর: পিরোজপুরের কাউখালীতে বিএনপি নেতা ও সর্বহারা পার্টির সদস্য শীর্ষ সন্ত্রাসী শাহ আলমের নির্যাতন এবং বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যবৃন্দ। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে পিরোজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভা কক্ষে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

 শাহ আলম কাউখালী উপজেলার শিয়ালকাঠি ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সাবেক স্থানীয় ইউপি সদস্য ও জোলাগাতি গ্রামের মৃত মকবুল সেপাই এর ছেলে। ভুক্তভোগী মো: আলাউদ্দিন একই গ্রামের মতি সেপাই এর ছেলে।

ভুক্তভোগী আলাউদ্দিনের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার স্ত্রী রুমি বেগম। তিনি বলেন, বিএনপি নেতা ও সন্ত্রাসী শাহ আলম আমার সৎ চাচাতো ভাই হওয়া সত্ত্বেও দীর্ঘদিন ধরে আমি এবং আমার পরিবারের ওপর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে আসছে। আমার পিতা মতি সেপাই দীর্ঘদিন ধরে মানসিক অসুস্থ থাকায় তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে শাহ আলম বিভিন্ন সময়ে কাগজপত্রে সহি-স্বাক্ষর নেয়, যা আমার পিতার কাছ থেকে জানতে পারি। সে দীর্ঘ বছর আমাদের জমি জোরপূর্বক দখল করে। শাহ আলম সেপাই সর্বহারা পার্টিতে থাকা অবস্থায় সন্ত্রাসী, ডাকাতি ও বিভিন্ন মানুষের বসতঘরে অগ্নিকাণ্ডসহ নানা অপকর্মে লিপ্ত থাকার কারণে ১১ মাস কারাভোগ করেছে। তার বাম হাতে সর্বহারা পার্টির চিহ্ন রয়েছে।

ভুক্তভোগী আলাউদ্দিন কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, শাহ আলম গত ২০-০৬-২৫ তারিখে তার গ্যাং ১০ থেকে ১২জন সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে আসলে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বাধা দিলে মারধর করে। তখন আমি হাসপাতালে ৫-৬ দিন ভর্তি ছিলাম,কোনো আইনী সহায়তা পাইনি। উল্টো আমার বিরুদ্ধে মামলা হয়। আমার দখলকৃত জমি থেকে প্রায় ৪৫ শতাংশ বাগানবাড়ি দখল করে। এখন বাড়িতে থাকতে হলে প্রতিমাসে তাকে চাঁদা দিতে হবে, না দিলে প্রাণনাশের হুমকি ও আরো মামলায় ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকি দেয়।

ভুক্তভোগীর ৯ বছর বয়সী মেয়ে আনিকা আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমাদের পরিবারকে নির্যাতন করে এবং আব্বুকে মারছে। ৪টি মামলাও দিয়েছে। এখন আমরা কি করবো।

আলাউদ্দিনের ৫৩ বছর বয়সী মা আমিরুন্নেছা বলেন, থানায় আমাদের এই নির্যাতনের বিচার চাইতে গেলে উল্টো নানা হয়রানি করে। পরে আমার ছেলে পুলিশ সুপার বরাবর অভিযোগ করলে সেটি থানায় দিলেও কোনো বিচার পাইনি। বর্তমানে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আমাদের জমি দখল করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। এর সুষ্ঠু বিচার চাই।

বিএনপি নেতা শাহ আলম অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যা কথা। ওরা আমাদের নামে কয়েকটা মামলা দিয়েছে। বর্তমানেও ৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। আমাদের ওপর হামলাও করেছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আহসানুল কবির বলেন, এদের দুজনকে ডাকলে একজন আসে অন্যজন আসে না। এ জন্য কোনো ব্যাবস্থা নিতে পারছি না।

শিয়ালকাঠি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গাজী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমি আওয়ামী লীগের আমলে চেয়ারম্যান হয়েছি। সত্য কথা বললে বিএনপির লোকজন বলবে আমি তাদের বিরুদ্ধে কথা বলি। শাহ আলম খুব ভালো লোক ছিলেন না, সে একসময় সর্বহারা পার্টির সদস্য ছিলেন। আলাউদ্দিন অনেক হয়রানি হচ্ছে। ওর বাবা একটু বোকা টাইপের তাই এদের কিছু জমি বিক্রি করেছে। এরকমের নানা ঘটনা আছে। এটা আমি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি খোজ নিয়ে জানতে পেরেছি।

কাউখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: সোলায়মান হোসেন বলেন, এটা যদি কোর্টে মামলা দিয়েই থাকে সে ক্ষেত্রে বিজ্ঞ আদালত সিদ্ধান্ত নিবে। এ ছাড়া তাদের পারিবারিক সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ করলে, সেটা সমাধানের আপ্রাণ চেষ্টা করবো।