বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় বেনাপোলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আবদুল্লাহ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করায় বেনাপোলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তার লাশ বেনাপোলে পৌঁছালে বেলা সাড়ে ১০টার সময় হাইস্কুল ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড-অব-অনার প্রদাণ করেন যশোরের শার্শা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান, বেনাপোল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) রাসেল মিয়াসহ উপজেলা প্রশাসন ওবেনাপোল পোর্ট থানা পুলিশ।এ ময়দানে, উপজেলা প্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী, শিক্ষক এবং সূধীজনদের বিশাল জনসমুদ্রে শহীদ আব্দুল্লাহর জানাজা নামাজ সম্পন্ন হয়। পরে, নিহতের লাশ তার গ্রামের বাড়ি বেনাপোল পৌরসভার বড়আঁচড়া ৯নং ওয়ার্ডের পারিবারিক কবরস্থানে দাফন কার্য
সম্পন্ন করা হয়।জুলাই-আগষ্টের বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আওয়ামীলীগ সরকার পতনের ১দফা দাবির মুখে গত ৫ আগস্ট সন্ধ্যা ৭ টার দিকে পুরানো ঢাকার বংশাল থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হয় আব্দুল্লাহ। তার কপালে গুলি লাগে। সে দুই থেকে তিন ঘন্টা যাবত পিচঢালা পাকা রাস্তার উপর পড়েছিলো। রক্তাক্ত পাকা রাস্তা থেকে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে মিডফোর্ড হাসপাতালে, পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়। সেখানে অপারেশনের পর তার সুস্থতার বিষয়ে আশ^স্ত করেন চিকিৎসকরা। কয়েকদির পর শারিরিক অবস্থার উন্নতি হলে ছাড়পত্র দেয়া হলে গ্রামের বাড়ি বেনাপোলে নিয়ে আসে পরিবারের সদস্যরা। কিছুদিন পরে তার অবস্থার অবনতি হলে আবারও উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। ২২ আগস্ট তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল (সিএমএইচ) এ নেওয়া হয়এবং অস্ত্র-পচার করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অবশেষে বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর-২৪) সকাল ৯ টার সময় সে মৃত্যুর কাছে পরাজিত হয়, শেষ ত্যাগ করে (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। সেখান থেকে মরহুমের লাশ ঢাকার মোহাম্মদপুরে নিয়ে গোসল করানো শেষে তার শিক্ষালয় “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী” কলেজে ১ম জানাজা এবং সন্ধ্যার সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে ২য় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।নিহত আব্দুল্লাহ (২৩) বেনাপোল পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড বড়আঁচড়া গ্রামের টার্মিনাল পাড়ার জব্বার আলীর ছেলে। ৪ ভাই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বড়
ভাই বাবু ও মেঝ ভাই মিঠু পেশায় ট্রাক শ্রমিক আর বোন শশুরালয়ে। তার বাবা বেনাপোল বন্দরের একজন হ্যান্ডলিং শ্রমিক সদস্য এবং বিএনপির রাজনীতির
আদর্শে জড়িত। তাকে অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকার “সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজে লেখাপড়া করাতো। সে রাষ্ট্র বিজ্ঞানের মেধাবী ছাত্র ছিলো।এসময় উপস্থিত ছিলেন যশোর জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকন, শার্শা উপজেলা বিএনপির আহবায়ক খায়রুজ্জামান মধু, সদস্য সচিব আবুল হাসান জহির, বেনাপোল পৌর বিএনপির সভাপতি নাজিম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের ভারত, শার্শা উপজেলা যুবদলের আহবায়ক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম নেতা-কর্মী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীসহ মানবাধিকার, সামাজিক, স্বেচ্ছাসেবক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবি সংগঠন ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র প্রতিনিধিরা।এদিকে, আব্দুল্লাহর মৃত্যুর খবরে বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার সময় তার গ্রামের বাড়িতে আসেন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের নৌপরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) এম সাখাওয়াত হোসেন। তার পরিবারের সাথে সমবেদনা ও শোক জ্ঞাপণ করেন।এছাড়া, বিভিন্নভাবে তার পরিবারকে সহযোগীতা করার আশ্বাস প্রদাণ করেন। এসময় বেনাপোল পৌরসভার সচিব ২৫ হাজার ও যশোর জেলা প্রশাসক ২৫ হাজার টাকা সহযোগীতা করেন।