সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। উৎসবকে ঘিরে লক্ষ্মীপুরে ৭৮টি মণ্ডপ প্রস্তুত, চলছে শেষ মুহূর্তের অলংকরন। শিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় মাটির প্রতিমা হয়ে উঠছে অপরূপ। একই সঙ্গে দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণ করতে দিনরাত মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এদিকে শারদীয় দুর্গোৎসবে শান্তি-শৃঙ্খলা ও উৎসবের আমেজ বজায় রাখতে সেনাবাহিনী মাঠে রয়েছে। সেই সঙ্গে পূজা চলাকালীন গুজব রটনাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সজাগ অবস্থায় রয়েছে। জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ বিভাগের পক্ষ থেকে পূজা উদযাপন পরিষদের নেতা, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধিদের নিয়ে দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা হয়েছে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে কিছুটা শঙ্কার কথা জানিয়েছেন সনাতন ধর্মীবলম্বী নেতারা। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, লক্ষ্মীপুর জেলায় ৭৮টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজার আয়োজন চলছে। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলায় ১৮টি মণ্ডপ, রায়পুর উপজেলায় ১২টি মণ্ডপ, রামগঞ্জ উপজেলার ১৮টি মণ্ডপ, রামগতি উপজেলায় ১৪টি মণ্ডপ ও চন্দ্রগঞ্জ থানা এলাকায় ১৫টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার জন্য প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করা হয়েছে।
পূজামন্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, দ্রুতগতিতে চলছে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতির কাজ। দম ফেলার ফুরসত নেই কারিগর থেকে শুরু করে তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জার কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর। মণ্ডপে মণ্ডপে কাজ করছেন স্বেচ্ছাসেবকরাও। প্রতিমায় চলছে শেষ মুহূর্তের রং তুলির আঁচড়। প্রতিমা তৈরির কারিগররা বলেন, প্রতি বছরই তারা অধীর আগ্রহে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। পূজা শুরুর আর মাত্র একদিন বাকি। দম ফেলার সময় নেই। এর মধ্যেই দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির প্রায় কাজ শেষ হয়েছে। এখনও কিছু প্রতিমায় রংয়ের বাকি কেবল। আশা করি তা কালকের মধ্যে শেষ হবে। জেলা মহিলা ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ভানু নাগ বলেন, ‘হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। আমরা ইতোমধ্যে আমাদের সকল প্রস্ততি সম্পন্ন করেছি। আশা করি, এবারের পূজা আনন্দ ও নিরাপদে উৎযাপন করতে পারব। পূজা মণ্ডপ ঘিরে সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যাপক প্রস্তত নিয়েছে জেলা প্রশাসন।’ তিনি আরও বলেন, ‘মণ্ডপগুলোতে কেউ যেন বিশৃঙ্খলা ঘটাতে না পারে, সেই জন্য পুলিশ সর্বদা কাজ করবে। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাইকে এ উৎসবে সামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
জেলা পুলিশ সুপার আক্তার হোসেন জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পূজাকে ঘিরে জেলায় গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিছু মণ্ডপকে অতি গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মণ্ডপে নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব থেকে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। পূজায় অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্রতিটা মন্দিরেই পুলিশের পাশাপাশি আনসার ও গ্রাম পুলিশসহ স্বেচ্ছাসেবকের বিভিন্ন টিম কাজ করবে। এছাড়াও সেনাবাহিনীর মোবাইল টিম মাঠে থাকবে। দেবী বিসর্জন পর্যন্ত সার্বক্ষণিক প্রশাসনিক নজরদারি থাকবে।