গত ৩০ অক্টোবর একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে ‘সাভারে গণ আসামি করে পুলিশের রমরমা মামলা বাণিজ্য’ শিরোনামে' পুলিশের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বিএনপি নেতারাও' শীর্ষক থাম্বেল ব্যবহার করে ৫ মিনিট ৪৮ সেকেন্ডের প্রকাশিত ভিডিও সংবাদের প্রতিবাদ জানিয়েছেন সাভার মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজিব সিকদার।তিনি এক প্রতিবাদ লিপিতে বলেছেন, আমাকে জড়িয়ে যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভুয়া, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমার পক্ষে মামলা দেওয়ার কোনও ক্ষমতা নেই এবং মামলা বাণিজ্যের বিষয়ে সব সময় বিরোধীতা করে এসেছি। আমি এই সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি।প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, ছাত্র-আন্দোলনের সময় আহত ইসরাফিল ও আমার কথোপকথনের যে অসম্পন্ন (আন-কাট) অডিও রেকর্ডের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও সাজানো।আহত ইসরাফিলকে মামলার বাদী হয়ে আসামিদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করার পরামর্শ দেওয়ার যে অভিযোগ করা হয়েছে তার বিষয়ে ইসরাফিল ও আমার সঙ্গে মুখোমুখি কথা বললেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যেতো।একপাক্ষিক বক্তব্য রেকর্ড তৈরি করে যাচাই-বাছাই ছাড়াই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার ইন্টারভিউ ও আমাকে জড়িয়ে যে অসত্য সংবাদ প্রচার করা হয়েছে তা আমার বিরুদ্ধে স্পষ্ট ষড়যন্ত্র। এই সংক্রান্তে বাদী ও আসামিদের সঙ্গে আমার কোনও ধরণের লেনদেন বা ইসরাফিলকে দিয়ে মামলা বাণিজ্যের কোনও ঘটনা ঘটেনি।তাছাড়া প্রকাশিত নিউজের মধ্যে যে অডিও প্রকাশ করেছে তার সাথে পুরো কথোপকথনের অডিও রেকর্ডটিও প্রচার করা হয়নি। পুরো রেকর্ডটি প্রচার হলে বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যেত।স্থানীয় দুই বিএনপি নেতার সঙ্গে আমার সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে। সংবাদ প্রকাশের আগে পর্যন্ত তাদের সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি কিংবা পরিচয় নেই। সংবাদ প্রকাশের আগে তারাও আমাকে চেনেন না বলে আমি বিশ্বাস করি।একটি পক্ষ নিজেরাই এমন কাল্পনিক গল্প ও ভুয়া সম্পর্ক তৈরি করে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়াচ্ছে।আমি এতে সামাজিক, মানষিক ও দাফতরিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়েছি। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসরকারি টেলিভিশনটিকে বিষয়টি আরও গভীরভাবে অনুসন্ধান করা উচিত ছিলো বলে আমি মনে করছি।এসআই রাজিব সিকদারের প্রতিবাদের সত্যতা যাচাইয়ে অনুসন্ধানে নামে এই প্রতিবেদক। জানা গেছে, ইসরাফিল মূলত সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ডের একজন মুদি দোকানদার এবং এক নারী এনজিও কর্মীর সহযোগী। তার সাথে বকুল দত্ত নামে এক ব্যবসায়ীর পরিচয় ছিল। ওই নারী এনজিও কর্মীর সঙ্গে বকুল দত্তকে পরিচয় করিয়ে দেন ইসরাফিল। গত ৬ মাস আগে বকুল দত্তকে লোন দেওয়ার কথা বলে ওই নারী এনজিও কর্মী হাতিয়ে নিয়েছেন ৪৫ হাজার টাকা। এ বিষয়ে বকুল দত্ত সাভার মডেল থানায় ইসরাফিল ও এনজিও কর্মীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। অভিযোগ তদন্তকালে এসআই রাজিব সিকদার ঘটনার সঙ্গে ইসরাফিলের জড়িত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেন।পরবর্তীতে ইসরাফিল প্রতারক ওই এনজিও কর্মীর সঙ্গে টাকা তুলে ভুক্তভোগী বকুল দত্তকে দিবেন বলে পুলিশকে জানায়।প্রতারণার ঘটনার সাক্ষ্য প্রদানকালে এসআই রাজিব সিকদারের সঙ্গে তার অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন। তিনি পুলিশকে জানিয়েছিলেন, আমি গত ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সময় গুলিতে আহত হয়েছি। আমার প্রায় ১২ লাখ টাকা চিকিৎসার জন্য ব্যয় হয়েছে। তা না হলে এই টাকা আমি নিজেই বকুল দত্তকে দিয়ে দিতাম। আন্দোলনে আহত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত আমি কারো কোন সহযোগিতা পাইনি। এখন আমি কি করবো.? এসআই রাজিব শিকদারের সঙ্গে এমন পরামর্শ চাইলে তিনি ইসরাফিলকে বলেন, আপনি যে ৫ আগষ্টের আহত এটা প্রমাণের জন্য থানায় মামলা রেকর্ড করে রাখতে পারেন। পরবর্তীতে আপনার এটা কাজে আসতে পারে। এসআই রাজিব শিকদারের কথা শোনার পর ইসরাফিল থানায় না এসে স্থানীয় দুই বিএনপি নেতার শরণাপন্ন হয়ে আদালতে মামলার প্রস্তুতি নেন। এর আগে ইসরাফিল স্থানীয় এক সাংবাদিকের কাছে সুদে ঋণ গ্রহণ করেন, দীর্ঘদিন যাবত সেই ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। ওই সাংবাদিকসহ কয়েকজন একাধিকবার ইসরাফিলকে দিয়ে পুলিশসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও তাকে হত্যা চেষ্টার মামলা দায়েরে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা চালায়। তাদের কথায় ইসরাফিল মামলা করতে রাজি হননি। তবে থানায় গিয়ে পুলিশের কথা শুনে আশ্বস্ত হয়ে ইসরাফিল তার স্বজনদের সহায়তায় স্থানীয় দুই বিএনপি নেতার সহযোগিতা নেন। এতে পরামর্শ দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তা রাজিব সিকদার ওই সাংবাদিকের রোশানলে পড়েন। পরবর্তীতে আহত ইসরাফিলকে ব্যবহার করে পরিকল্পিতভাবে মূলত এসআই রাজিব সিকদারের বিরুদ্ধে সংবাদ তৈরি করে একটি টেলিভিশনের ইউটিউব ও ফেসবুকের মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এরপর থেকে ওই সাংবাদিকের পরামর্শে ইসরাফিল নিজেই আত্মগোপনে চলে যান। তার সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি।
এদিকে বকুল দত্তের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আহত ইসরাফিল আমার দীর্ঘদিনের পরিচিত এবং তার সাথে আমার ব্যবসায়িক লেনদেন রয়েছে। আমার একটা লোন প্রয়োজন ছিল তাই ইসরাফিলকে লোনের ব্যবস্থা করে দিতে বলি। তিনি তার পরিচিত এনজিও কর্মী জেরিন এর সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দেন। পরে আমাকে ১০ লাখ টাকা লোন করে দেওয়ার কথা বলে দফায় দফায় ৪৫ হাজার টাকা আমার কাছ থেকে হাতিয়ে নেন। আমি থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই রাজিব সিকদার আমার কাছে সাক্ষী চান। পরে আমি ইসরাফিলকে থানায় নিয়ে গেলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা রাজিব সিকদার তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং পুরো ঘটনা তার কাছে স্বীকার করেন।তিনি আরো বলেন, এই ঘটনা বলতে বলতে তিনি ইসরাফিল নিজেই ক্ষতিগ্রস্ত এবং চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে ক্লান্ত হয়েছেন বলে এসআই রাজিব সিকদারের কাছে পরামর্শ চান। তিনি সৎ পরামর্শ দিলেও উল্টো ইসরাফিল অন্য দুজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে পুলিশসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়েরের চেষ্টা করেন। কোন এক সাংবাদিক হয়তো ইসরাফিলের কাছে টাকা পাবেন। তার পরামর্শে হয়তো রাজিব শিকদারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে পারেন। তবে এই ঘটনার জন্য আমি মর্মাহত। কারণ আমার জন্যই তো মূলত রাজিব স্যারের সাথে তার পরিচয় হয়েছে। আমি যখন এই ভিডিও রিপোর্টটি দেখলাম তখন আমি হতভম্ব হয়ে গিয়েছি। এ ব্যাপারে জানতে ইসরাফিলের সঙ্গে আমি গেলে সে তার ভুল স্বীকার করেছে এবং অনেকটা চাপে এই ঘটনা ঘটিয়েছে বলে জানায়। আমি তাকে সাংবাদিকদের পুরো ঘটনাটা পরিষ্কার করার জন্য বললে তিনি বলেন আমি তো বুঝতে পারিনি এমনটা হবে, আমাকে ভুল বুঝিয়ে এই বক্তব্য নিয়েছে, আমাকে বলেছে তাদের নিউজে প্রচার করলে নাকি আমি অনেকের নজরে আসবো এবং অনেকের সহযোগিতা পাবো, এখন দেখি আমি বিপদে। এই মুহূর্তে সত্য বলা সম্ভব নয় তবে প্রয়োজনে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়ে সত্য বলবেন। যদি এই মুহূর্তে সত্য প্রকাশ করে তাহলে নাকি অজ্ঞাত ওই সাংবাদিক তার ক্ষতি করতে পারেন।এদিকে ‘সাভারে গণ আসামি করে পুলিশের রমজমা মামলা বাণিজ্য’ শিরোনামে' পুলিশের সঙ্গে জড়িত স্থানীয় বিএনপি নেতারাও' শীর্ষক ভিডিও সংবাদে দুই বিএনপি নেতার সঙ্গে এসআই রাজীব সিকদারকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।এসআই রাজিব সিকদারের নামে উক্ত টেলিভিশনের ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুকে প্রকাশিত সংবাদটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। কে বা কারা প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এমন কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। তার এবং পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজিব সিকদারসহ সংশ্লিষ্টরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য দিতে রাজি আছেন। রাজীব সিকদার বলেন, আমি একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে আইনগত পরামর্শ দিয়েছি মাত্র। এই অসত্য মিথ্যা ঘটনা সমর্থন করতে পারেন না বিদায় উল্লেখিত প্রতিবেদনটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।