জানা গেছে, ২০২৩ সালে ২৩ নং মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা পবিত্র হজ্ব পালনের উদ্দেশ্যে মক্কা নগরীতে গমন করার পর ফারজানা ডেপুটেশনে সদরের ৩০নং রাজাপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য সাবেক শিক্ষা কর্মকর্তার যোগ সাজসে কাগজ পত্র জমা দেন। রাজাপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ২৩ নং মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে দূরত্ব মাত্র দেড় কিলোমিটার, এই অল্প দূরত্বে আবেদনে প্রধান শিক্ষিকা বাধ সাধতে পারেন বিধায় তার অনুপস্থিতিতে ফারজানা এই কাজটি করেছেন। এরপর সম্পূর্ন অবৈধ ভাবে এখতিয়ার বহির্ভূত ফারজানার সংযুক্তির কার্যক্রম সম্পন্ন করেন তৎকালীন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মুনিবুর রহমান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ফারজানার বেশ কয়েকজন সহকর্মী জানান, এই অল্প দূরত্বে এভাবে কেউ সংযুক্তিতে যায় না বা এত অল্প দূরত্বে কোন কারন ছাড়া সাধারণত সংযুক্তিও হয়না। আমরা জানি শিক্ষক সল্পতার কারনে অনেক সময় অন্য বিদ্যালয় থেকে শিক্ষক সংযুক্তিতে আনা হয়। তাছাড়া যে বিদ্যালয়ে ফারজানাকে সংযুক্তি দেয়া হয়েছে সেখানে চাহিদার তুলনায় শিক্ষক বেশী। এই মুনিবুর রহমানকে ফারজানা কিভাবে ম্যানেজ করেছেন কিংবা কোন স্বার্থে মুনিব স্যার ফারজানার জন্য এমন কাজ করেছেন তিনিই ভাল বলতে পারবেন। কেননা সংযুক্তি দেওয়ার ক্ষমতা একমাত্র মহাপরিচালক কর্মকর্তার কার্যালয়। সেখানে মুনিবুর রহমান ফারজানাকে অন্য বিদ্যালয়ে সংযুক্তির জন্য নিজ স্বাক্ষরিত ০২/০৭/২০২৩ তারিখে মনগড়া একটি অফিস আদেশ বানিয়েছেন যা ছিল সম্পূর্ন অবৈধ। তারা আরও জানান, এই অবৈধ সংযুক্তি বৈধ করতে ফারজানা ২৪ সালের ১৬ মে মহাপরিচালক থেকে যে কোন ভাবে একই বিদ্যালয়ে সংযুক্তির জন্য নতুন করে আর একটি অফিস আদেশ করান। বিধি অনুযায়ী সেই চিঠির বৈধতা ছিল এক বছর।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ৫ জানুয়ারি ২০২৫ এর পরিপত্রে সংযুক্তি এক বছরের বেশী হলে শিক্ষককে মূল বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ফারজানার সংযুক্তির মেয়াদ গত ১৫ মে এক বছর পূর্ণ হলে পরবর্তীতে নিজ বিদ্যালয়ে যোগদান করার কথা। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও নিজ কর্মস্থলে যোগদান করেননি তিনি। এরপর জেলা শিক্ষা অফিস ১১ আগস্ট এক অফিস আদেশে ফারজানাকে মূল বিদ্যালয়ে যোগদানের জন্য নির্দেশ দিলে তিনি এখনও সংযুক্তি বিদ্যালয়ে শ্রেণী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।
৩০নং রাজাপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মাহমুদা খানম জানান, গত পরশু আমি ফারজানার সংযুক্তি বাতিলের অফিস আদেশ পেয়েছি। তবে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ফোনে আমাকে জানিয়েছেন, ফারজানা যেন আমার বিদ্যালয়ে আরও দু একদিন থাকেন। দু একদিনের মধ্যেই তারা ওর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিবেন।
ফারজানার কর্মস্থল ২৩ নং মনোহরপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সালমা সুলতানা জানান, আমার বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ মোট পদ সংখ্যা ৫। এরমধ্যে একজন অবসরে ও ফারজানা অন্য বিদ্যালয়ে সংযুক্তিতে যাওয়ায় এখন কর্মরত আছে তিনজন। প্রধান শিক্ষক দাপ্তরিক কাজে বাইরে থাকলে বা একজন ছুটিতে থাকলে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালনা ব্যহত হয়। এমতাবস্থায় ফারজানা ফিরে আসলে কিছুটা হলেও বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বৃদ্ধি ও শিক্ষক ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব।
এ ব্যাপারে শিক্ষিকা উম্মে ফারজানা বলেন, আমি এ বিষয়ে কোন কথা বলব না। ডিডি স্যার ও ডিজি স্যারের আদেশক্রমে আমি এখানে আছি। আপনি তাদের সাথে কথা বলে বিস্তারিত জেনে নিবেন।
রাজাপুর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আকতার হোসেন বলেন, ফারজানার নিজ কর্মস্থলে যোগদানের অফিস আদেশ হলেও উপরের মৌখিক আদেশে আমি আবার ওকে আরও দৃ একদিন সংযুক্তি বিদ্যালয়ে থাকতে বলেছি। অফিস আদেশ ছাড়া আপনি কিভাবে তাকে একই বিদ্যালয়ে থাকতে বললেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, উপরোস্থ কর্মকর্তারা ফোন করে একটি কথা বললে আমাদের সেই কাজটি করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না।
ঝালকাঠি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শাহিনুর আলম মজুমদার বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবনা। আপনি ডিডি মহোদয়ের সাথে কথা বলেন।