রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে গতকাল সোমবার (২১ জুলাই ২০২৫) বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ভয়াবহ হতাহতের ঘটনায় আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই ২০২৫) সারাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় পাইলটসহ অন্তত ২২ জন নিহত এবং ১৭১ জন আহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই শিক্ষার্থী।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্রীয় শোক পালনের অংশ হিসেবে আজ দেশের সকল সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ মিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একইসাথে, নিহত ও আহতদের জন্য দেশের সকল ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হবে।
গতকাল দুপুর ১টা ৬ মিনিটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই (৭০১) মডেলের প্রশিক্ষণ বিমানটি উড্ডয়ন করে। উড্ডয়নের মাত্র ১২ মিনিটের মাথায়, দুপুর ১টা ১৮ মিনিটের দিকে এটি উত্তরার দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিধ্বস্ত হয়। বিমানটি আছড়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই এতে আগুন ধরে যায়। বিমানে থাকা ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম দুর্ঘটনাস্থলেই নিহত হন।
আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, বিমানটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা এড়িয়ে অপেক্ষাকৃত কম জনবসতিপূর্ণ এলাকায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন পাইলট, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর আছড়ে পড়ে।
দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। ফায়ার সার্ভিস, সেনাবাহিনী, বিজিবি এবং অন্যান্য জরুরি সেবা সংস্থার কর্মীরা উদ্ধার কাজে অংশ নেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে শতাধিক শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ৭০ জনের বেশি দগ্ধকে ভর্তি করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। হাসপাতালের সূত্রমতে, অনেক আহতদের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এই মর্মান্তিক ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি এটিকে জাতির জন্য "গভীর বেদনার মুহূর্ত" হিসেবে অভিহিত করেছেন এবং আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শোক ও সমবেদনা জানানো হয়েছে।
সরকার দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।