ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠা চরের নাম চরসোনারামপুর। এই শীতের মৌসুমে দূর-দূরান্ত থেকে আসা অস্থায়ী খামারিরা মেঘনার এই চরে গড়ে তুলেছেন হাঁসের খামার। কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম, ইটনা, নিকলী, মিঠামইন ও হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসেন এই খামারিরা।চরের চারপাশের পানিতে এখন ভেসে বেড়ায় প্রায় ৫ হাজার হাঁস।মেঘনা নদীর ঢেউয়ে তাল মিলিয়ে হাঁসের হেলে-দুলে ভেসে বেড়ানোর দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয় সবাই। মেঘনা তীরবর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে চরে গড়ে তোলা হয়েছে হাঁসের খামার। এখানে রয়েছে ৫টি হাঁসের খামার। এসব খামারে বর্তমানে ৫ হাজারেরও বেশি হাঁস রয়েছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে চরসোনারামপুরে হাঁসপালন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।আটজন খামারি চরসোনারামপুরে হাঁসের খামার করেন।কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম,ইটনা,মিঠামইন ও লাখাই উপজেলা থেকে খামারিরা চরসোনারামপুরে এসে খামার করেন।আশুগঞ্জের এই চরের চারপাশ পানি থাকায় হাঁস পালনের জন্য অনুকূল একটা পরিবেশ। আর এই চরে হাঁসের খাবারেরও সহজলভ্যতা রয়েছে।খামারিরা বলেন, আশুগঞ্জে বড় ধানের মোকাম থাকায় সারাবছরই ধান পাওয়া যায়। খাবারের পর্যাপ্ততা ও সহজলভ্যতার কারণে দ্রুত বেড়ে উঠে হাঁস। তাছাড়া নদীর দুই তীরে দুই পাশে শহর থাকায় ডিম বিক্রি থেকে শুরু করে সব কাজেই সুবিধা পাওয়া যায়। কিন্ত খাবারের দাম বেশী এবং ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাঁস মারা যাওয়ার কারনে এবং সরকারী ভাবে কোনো ধরনের সহযোগিতা না পাওয়ায় লাভের মুখ দেখতে পান না তারা।প্রতিমাসে মাত্র ১৪ হাজার টাকা বেতনে খামারে কাজ করেন রায়পুরা উপজেলার তুলাতুলি গ্রামের মোঃ সোহরাফ মিয়া তিনি বলেন খামারে হাঁস পালনে মালিকগণ লাভমান না হওয়ায় স্বল্প বেতনেই কাজ করতে হচ্ছে তাকে।তিনি বলেন মাত্র ১৪ হাজার টাকা বেতনে ভালো ভাবে চলছে না তার সংসার।কিশোরগঞ্জের নিকলি উপজেলার মোঃ ইমাম হোসেন এর খামারে ৩ হাজার হাঁস ছিল বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ২ হাজার হাঁস মারাযায়।বর্তমানে তার খামারে হাঁস রয়েছে মাত্র ৯ শত এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম পাচ্ছে পাঁচ শত। খামার থেকে ডিম সংগ্রহ করে ভৈরব ও আশুগঞ্জ বাজারে আড়তদারদের কাছে বিক্রি করা হয়।হাঁসের খাবার সহজে মিললেও সবই চড়া দামে কিনে নিতে হয় তাদের। তা না হলে লাভটা আরও বেশি হতো।আশুগঞ্জের খামারি হারাধন চন্দ্রদাস জানান, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাঁস মারা যায়।কিন্ত কখনোই পশু চিকিৎসক আসেন না।ফলে পরামর্শের জন্য তাদের সমস্যায় পড়তে হয়। তাছাড়া সরকারিভাবে সরবরাহ করা ভ্যাকসিনও তারা পান না।বাধ্য হয়ে বাইরের ফার্মেসি থেকে বেশি দামে কিনতে হয় ভ্যাকসিন।অনেক খামারি পুঁজির সমস্যার কথাও বললেন।তারা জানান, ব্যাংক থেকে তারা কখনোই ঋণ পাননি।বাধ্য হয়েই স্থানীয় আড়তদারদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। ফলে আশানুরূপ লাভের মুখ দেখতে পান না তারা। লাভ চলে যায় আড়তদারের পেটে। তারা সহজ শর্তে ঋণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।খামারিদের বিভিন্ন সমস্যার ব্যাপারে জানতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. নূরজাহান বেগম বলেন, আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভ্যাকসিন রয়েছে। চরসোনারামপুরের খামারিরা আমাদের কাছে কম আসেন। তিনি আরও বলেন খামারিগণ আমাদের কাছে আসলে অব্শ্যই তাদেরকে সবধরনের সেবা দেয়ার কথা অকপটে জানান তিনি।