দুর্ঘটনার সময় স্কুলের প্রথম শ্রেণি থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাস চলছিল। হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ এবং আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলি দেখা দিলে শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে, শিক্ষকরা তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন।
ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, বিমান বিধ্বস্তের খবর পেয়ে দুপুর ১টা ২২ মিনিটে ফায়ার সার্ভিসের প্রথম ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। এরপর উত্তরার পাশাপাশি টঙ্গী, মিরপুর, কুর্মিটোলা, পল্লবী ও পূর্বাচল ফায়ার স্টেশন থেকে মোট ৮টি ইউনিট আগুন নেভানোর কাজে অংশ নেয়। প্রায় দুপুর ২টা ২৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
দুর্ঘটনার সময় বিমানে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির। তবে তিনি আহত নাকি নিহত হয়েছেন, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য জানায়নি আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কারণ তদন্তাধীন রয়েছে।
মাইলস্টোন কলেজের জনসংযোগ কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ জানান,“দুপুর ১টার কিছু পর হঠাৎ প্রচণ্ড বিকট শব্দ হয়। শিক্ষার্থীরা ভয় পেয়ে যায়, অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। শিক্ষকরা দ্রুত তাদের নিরাপদে সরিয়ে নেন। কয়েকজন শিক্ষার্থী আঘাত পেয়েছে বলে জেনেছি। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।”
বিমান বিধ্বস্তের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় বাসিন্দা এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা আতঙ্কে ছুটে আসেন স্কুল প্রাঙ্গণে। কেউ কেউ সন্তানদের খোঁজে ছুটোছুটি করতে থাকেন।
বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে বেশ কিছু ভিডিও। সেগুলোতে দেখা যায়, আকাশে ধোঁয়ার কুণ্ডলী ছড়াচ্ছে, স্কুলের মাঠে জড়ো হয়েছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকে আইএসপিআর এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আজ দুপুর ১টা ৬ মিনিটে উড্ডয়ন করা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিজেআই মডেলের প্রশিক্ষণ বিমান উড্ডয়নের কিছুক্ষণের মধ্যে উত্তরায় বিধ্বস্ত হয়। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।”
উত্তরার মতো ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এ ধরনের একটি দুর্ঘটনা আবারও প্রশ্ন তুলেছে শহরের আকাশে প্রশিক্ষণ ফ্লাইট পরিচালনার ঝুঁকি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে। যদিও দ্রুত পদক্ষেপে ফায়ার সার্ভিস আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে, তবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে যে মানসিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে তা সহজে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়।
সরকারি সূত্র এখনো হতাহত বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু না জানালেও, দুর্ঘটনাটি যে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটাতে পারত—তা বলাই বাহুল্য।