গত ১৪ আগস্ট দিবাগত রাতে রাজশাহীর পবা উপজেলার বামনশিকড় গ্রামে তাদের মৃত্যু হয়। গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে চল্লিশায় প্রায় এক হাজার মানুষকে মুড়িঘণ্ট দিয়ে ভাত খাওয়ানো হয়েছে।
মৃত্যুর আগে মিনারুল চিরকুটে লিখে গিয়েছেন, ‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে।’ সেই মিনারুল এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের জন্য চল্লিশা খাওয়ালেন তার পরিবার। তাও আবার ঋণের টাকায়। চল্লিশায় আমন্ত্রণ দেওয়া হয়েছিল সমাজের প্রায় এক হাজার মানুষকে।
মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী জানিয়েছেন, জমি বিক্রি করে এই ঋণ শোধ করবেন।
জানা গেছে, শনিবার দুপুরে বামনশিকড় গ্রামে রুস্তম আলীর বাড়ির সামনে ও পেছনে দুটি প্যান্ডেল করা হয়। প্যান্ডেলে বসে খাবার খান আমন্ত্রিতরা। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল ও মুড়িঘণ্ট। ভ্যানে চড়ে দূরের গ্রাম থেকে আসেন আত্মীয়-স্বজনরা। আসেন পুরো গ্রামের মানুষও।
চল্লিশার দাওয়াত খেয়েছিলেন রবিন ইসলাম। তিনি বলেন, অনেক মানুষ এসোছিল দাওয়াতে। দুই জায়গায় প্যান্ডেলে অনেক মানুষ খেয়েছে। খাওয়া-দাওয়ার সময় অনেকেই বলাবলি করছিলো- যে ঋণের টাকার কারণে মিনারুলের পুরো পরিবারের মৃত্যু হলো। কিন্তু তার চল্লিশা হচ্ছে ঋণ করেই। বেঁচে থাকতে খেতে পেল না, আর মরে যাওয়ার পরে মানুষকে চল্লিশা খাওয়ানো হলো।
মুহাইমিনুল ইসলাম বলেন, তাদের অর্থিক অবস্থা ভালো না। যতটুকু শুনেছি তারা ধারদেনা করে এই আয়োজন করেছেন। এলাকার মুরব্বিরা বলছেন তার বাবা (রস্তম) নাকি জমি বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করবেন। যেহেতু এক বাড়িতে চারজন মারা গেছে। এই কারণে শোনা যাচ্ছে- তারা রাতে বাড়িতে থাকতে ভয় পাচ্ছেন। আর এলাকায় প্রচলন রয়েছে চল্লিশার। সেই কারণে তারা ধারদেনা করে চল্লিশা করেছে।
মিনারুলের বাবা রুস্তম আলী বলেন, এই অনুষ্ঠানকে কেউ বলে চল্লিশা, কেউ বলে ফয়তা। বাপ-দাদার আমল থেকেই দেখে আসছি। সমাজের মানুষ ও আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে এটা করতে হয়। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী করে। আমি গরিব মানুষ-মাংস করতে পারিনি। মাছ দিয়ে মুড়িঘণ্ট আর ডাল করেছি।
তিনি বলেন, আশপাশের মানুষজন বলছিল চারজন মরার কারণে বাড়িটা ভারী ভারী লাগছিল। ছোট ছিলেপিলেরা ভয় পাচ্ছিল। তাই অনুষ্ঠানটা করলাম, যাতে ভয় ভাঙে। বাড়ি যেন পাতলা হয়। এ কারণে দুপুরে দোয়া হয়েছে। খাওয়া দাওয়া প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হলো। আত্মীয়-স্বজন ও সমাজের মিলিয়ে এক হাজার মানুষের আয়োজন করা হয়েছিল।
টাকা জোগাড় হলো কীভাবে জানতে চাইলে রুস্তম আলী বলেন, সবই ধারদেনা। আমার তো জমানো টাকা নাই। ১৫-১৬ কাঠা জমি আছে। এক কাঠা বেচব, বেচে ধার শোধ করব। তা ছাড়া তো আর কোনো উপায় নেই।
পবার পারিলা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাঈদ আলী মুর্শেদ বলেন, শুনেছি এমন আয়োজন করার কথা। অনেকে গিয়েছিল। ইসলামের দৃষ্টিতে এটা নাই। কিন্তু কেউ মারা গেলে এটা করে। চল্লিশা আমাদের এলাকার রেওয়াজ।