পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে কারাগারে রেখে তার ওপর 'পদ্ধতিগত নির্যাতন' চালানো হচ্ছে এবং তার মানবাধিকার মারাত্মকভাবে লঙ্ঘন করা হচ্ছে-এমন অভিযোগ তুলে জাতিসংঘের নির্যাতন বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদকের (UN Special Rapporteur on Torture) কাছে আবেদন করেছে তার আন্তর্জাতিক আইনি দল।

খানের আইনি প্রতিনিধিদের পক্ষে পার্সিয়াস স্ট্র্যাটেজিস (Perseus Strategies) এই আবেদনটি জমা দিয়েছে। এতে অভিযোগ করা হয়েছে, ইমরান খানকে 'পদ্ধতিগতভাবে নির্যাতনের' শিকার হতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন নির্জন কারাবাস, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা, দূষিত খাবার সরবরাহ এবং আইনজীবী ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়ার মতো বিষয়। জিও নিউজের এক প্রতিবেদন থেকে এসকল তথ্য জানা যায়।

আইনি দলের যুক্তি, এই পরিস্থিতিগুলো নির্যাতনবিরোধী সনদ (Convention against Torture - CAT) এবং নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (International Covenant on Civil and Political Rights - ICCPR) এর অধীনে পাকিস্তানের বাধ্যবাধকতার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।

আবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত এক বিবৃতিতে ইমরান খানের ছেলে সুলাইমান খান তার বাবার প্রতি করা আচরণের নিন্দা জানিয়ে বলেন, 'আমাদের বাবাকে এমন পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছে যা কোনো মানুষের সহ্য করার কথা নয়। এটি তার অধিকারের লঙ্ঘন এবং নির্যাতনের সামিল।'

জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রতিবেদন দাখিলকারী এই বিশেষ প্রতিবেদকের, নির্যাতনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পেলে হস্তক্ষেপ করার ক্ষমতা রয়েছে। এর মধ্যে তথ্যানুসন্ধানমূলক সফর পরিচালনা এবং মানবাধিকার কাউন্সিল ও জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে প্রতিবেদন জমা দেওয়াও অন্তর্ভুক্ত। খানের আইনি দল বিশেষ প্রতিবেদককে তার মামলাটি তদন্ত করতে এবং তার শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়েছে।

ইমরান খানের আরেক ছেলে কাসিম খান যোগ করেন, 'জাতিসংঘ ইতোমধ্যে স্বীকার করেছে যে আমাদের বাবার কারাবাস স্বেচ্ছাচারী ও বেআইনি। তাকে ভাঙার জন্য বর্তমান শাসকগোষ্ঠী কতটা নিচে নামতে পারে, এখন তিনি যা সহ্য করছেন তা থেকেই স্পষ্ট। কিন্তু তাকে ভাঙা যাবে না।'

ইমরান খানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা জুলফি বুখারি জোর দিয়ে বলেন, এই আবেদনটি খানের দৃঢ়তাকে তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, 'তিনি বেআইনি কারাবাস এবং অবমাননাকর আচরণের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু সহ্য করছেন তা থেকেই স্পষ্ট। কিন্তু তাকে ভাঙা যাবে না।'

ইমরান খানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা জুলফি বুখারি জোর দিয়ে বলেন, এই আবেদনটি খানের দৃঢ়তাকে তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, 'তিনি বেআইনি কারাবাস এবং অবমাননাকর আচরণের শিকার হচ্ছেন, কিন্তু তিনি সাহস ও শান্তিপূর্ণ প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবেই রয়েছেন।'

উল্লেখ্য, ৭১ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার-পরিণত-রাজনীতিবিদ ২০২৩ সালের আগস্ট থেকে কারাগারে আছেন। ২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হওয়ার পর থেকে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি থেকে শুরু করে সন্ত্রাসবাদ পর্যন্ত একাধিক মামলা দায়ের করা হয়েছে।