ময়মনসিংহ শহরের সি.কে. ঘোষ রোডে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত রেদোয়ান হোসেন সাগরের মৃত্যুর এক বছর পূর্ণ হয়েছে।

কিন্তু পরিবারটির কাছে সময় যেন থেমে আছে। এখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, সাগর আর ফিরবে না।

বাবা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘এখনো মনে হয় এই তো সেদিন, ছেলেটা এসে আবার “বাবা” বলে ডাকবে। কষ্ট সহ্য করতে না পারলে মোবাইল বের করে ছেলের ছবি দেখি। পাশে কেউ থাকলে তাকেও দেখাই। ছবি দেখে সবাই আফসোস করেন। আমার আর কিছুই করার থাকে না, শুধু চোখের পানি ফেলি।’

স্মৃতিভারে ভেঙে পড়া এই বাবা জানান, ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই বিকেলে বাসা থেকে বের হয়েছিলেন সাগর। সেদিনই সি.কে. ঘোষ রোডের মিন্টু কলেজ এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তিনি। সাগরের মৃত্যুর খবর পান মাগরিবের নামাজের পর। ছোট মেয়ে ফোনে তাকে বাসায় ডেকে নেয়। এরপর হাসপাতালে গিয়ে দেখতে পান, প্রাণহীন পড়ে আছে তাদের একমাত্র ছেলেটি।

শহীদ রেদোয়ান হোসেন সাগর ছিলেন ময়মনসিংহের আকুয়া চৌরঙ্গী মোড় এলাকার বাসিন্দা, ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামানের ছেলে। দুই ভাই-বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন বড়। ইসলামিয়া একাডেমি থেকে এসএসসি এবং কমার্স কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ফুলবাড়িয়া কলেজে হিসাববিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স করছিলেন তিনি। পাশাপাশি একটি কম্পিউটার দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন।

সাগর ছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের সক্রিয় অংশগ্রহণকারী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও তিনি আন্দোলনের পক্ষে নিয়মিত পোস্ট দিতেন। তাঁর এই সচেতন ভূমিকারই করুণ পরিণতি হয় সেই দিনের গুলিতে।

বাবা আসাদুজ্জামান বলেন, ‘ছেলেকে নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। লেখাপড়া শিখিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতাম। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে। আর কোনো মা-বাবার যেন এমন ভাগ্য না হয়, কেউ যেন বুক খালি না করে আমাদের মতো।’

স্মৃতির স্মারক হিসেবে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সাগরের মৃত্যুস্হলে একটি চত্বর নির্মাণ করেছে। তবে সেখানে আরও কিছু স্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানান তিনি। স্টেডিয়ামের নামকরণ প্রসঙ্গে বলেন, ‘কারও নাম বাদ দিয়ে আমার ছেলের নামে স্টেডিয়াম হোক, তা চাই না। তবে নতুন কোনো স্টেডিয়াম হলে সেখানে শহীদ সাগরের নাম রাখা যেতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনাস্থলের সড়কটি শহীদ সাগরের নামে নামকরণ করা যেতে পারে। সরকারের কাছে এই অনুরোধ জানাই।’

সাগর হত্যাকাণ্ডে তিনি নিজে মামলা না করলেও কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। তিনি চান, এই হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।