রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে অন্তত ১৯ জন নিহত ও দেড় শতাধিক আহত হয়েছেন। সোমবার বেলা ১টা ৬ মিনিটে বিমানটি উড্ডয়নের কয়েক মিনিট পর বিধ্বস্ত হয় বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে।

এই দুর্ঘটনার পর চীনের তৈরি তুলনামূলক কিছুটা সাশ্রয়ী এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমান নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধবিমানের সুযোগ-সুবিধা কী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর বহরে কবে যুক্ত হয় এবং বিশেষ কী বৈশিষ্ট্য আছে, তা জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা পোস্ট।

যুদ্ধবিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন এবং উৎপাদানকারী চীনা কোম্পানি চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের (সিএসি) তৈরি এফ-৭ বিজিআই মূলত বহুমুখী অভিযান ও উন্নত প্রশিক্ষণে সক্ষম একটি হালকা যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে এই বিমান তৈরি করে চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন।

বিধ্বস্ত হওয়া এফ-৭ যুদ্ধবিমানটি চেংদুর এফ-৭ সিরিজের ফাইটার বিমানের আধুনিক সংস্করণ। সোভিয়েত আমলের মিগ-২১ এর মডেলের আদলে এই বিমানটি তৈরি করে চীন। বৈশ্বিক মানদণ্ডে পুরোনো এবং সেকেলে এফ-৭ বিমান তুলনামূলক কিছুটা সাশ্রয়ী।

পাইলটদের প্রশিক্ষণে ও যুদ্ধকালীন সীমিত ভূমিকা রাখতে পারে এই বিমান। ২০১৩ সালে চীন ১৬টি এফ-৭ বিমান বাংলাদেশে রপ্তানি করে। সেটিই ছিল এই বিমানের শেষ চালান। এরপর থেকে চীন এফ-৭ বিমানের উৎপাদন বন্ধ করে দেয়।

• বাংলাদেশের উন্নত যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই

চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের নকশা করা এফ-৭ পরিবারে বেশ কিছু বিমান রয়েছে। এর মধ্যে প্রযুক্তিগত দিক থেকে সবচেয়ে উন্নত মডেলের যুদ্ধবিমান এফ-৭ বিজিআই।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সাশ্রয়ী ও বহুমুখী অভিযানে পারদর্শী যুদ্ধবিমান হিসেবে এফ-৭ বিজিআই তৈরি করেছে (সিএসি)। জে-৭জির উন্নত সংস্করণ হিসেবে তৈরি করা এফ-৭ বিজিআইতে বিমান পরিচালনা এবং যুদ্ধ-দক্ষতার দিক থেকে নাটকীয় উন্নতি আনা হয়েছে। ২০১১ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী  যুদ্ধবিমানের বহর আধুনিকায়নের অংশ হিসেবে এই মডেলের ১৬টি বিমান আমদানি করে।

চীনে চেংদু জে-৭ নামে পরিচিত এফ-৭ যুদ্ধবিমান মূলত এক ইঞ্জিন বিশিষ্ট। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, মিসরসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমানবাহিনীর বহরে এই যুদ্ধবিমান ব্যবহৃত হচ্ছে।

• এফ-৭ বিজিআই যুদ্ধবিমানের মূল বৈশিষ্ট্য কী?

• গতি ও শক্তি : এফ-৭ বিজিআইয়ের সর্বোচ্চ গতি মাক-২.২। এক আফটারবার্নিং ইঞ্জিন দ্বারা পরিচালিত এই বিমান ৮২ কিলোনিউটন শক্তি উৎপন্ন করে।

• উন্নত ককপিট : বিমানের ককপিটে তিনটি মাল্টি-ফাংশনাল এইচইউডি ডিসপ্লে ও এইচওটিএএস নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ব্যবহৃত হয়েছে। এর ফলে পাইলটকে প্রতি মুহূর্তে উচ্চ সতর্কাবস্থায় থেকে বিমানটি পরিচালনা করতে হয়।

• নতুন রাডার : এফ-৭ বিজিআই বিমানে কেএলজে-৬এফ ফায়ার কন্ট্রোল রাডার রয়েছে। যা ৮৬ কিলোমিটারেরও বেশি দূরের লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত করতে পারে। এছাড়া একই সময়ে একসঙ্গে ছয়টি লক্ষ্যবস্তু শনাক্ত ও একযোগে দুটি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে বিমানটি।

• চালনার ক্ষমতা : এফ-৭ বিজিআই বিমানে জে-৭জি২ এয়ারফ্রেম এবং ডাবল-ডেল্টা উইং ডিজাইন ব্যবহৃত হওয়ায় এটি অনেক উঁচুতে উঠে আক্রমণ চালাতে পারে। এর ফলে এই বিমানের স্থবির হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। সমসাময়িক অনেক যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে এফ-৭ বিজিআইয়ের।

• অস্ত্র বহন ও হামলার সক্ষমতা : এফ-৭ বিজিআই বিমানে সাতটি হার্ড-পয়েন্ট রয়েছে। এর ফলে বিমানটি পিএল-৫, পিএল-৭, পিএল-৯ এমনকি পিএল-১২ এর মতো স্বল্প পাল্লার এয়ার-টু-এয়ার ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। পাশাপাশি বোমা, আনগাইডেড রকেট এবং সর্বোচ্চ ৩ হাজার পাউন্ড ওজনের চীনা লেজার গাইডেড বোমা নিক্ষেপেও সক্ষম এই বিমান।

• বিশেষ সক্ষমতা: চীনের তৈরি এই বিমান জাহাজ-বিধ্বংসী সি-৭০৪ ক্ষেপণাস্ত্র বহন করতে পারে। এর ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাতে পারে এফ-৭ বিজিআই বিমান।

বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন এফ-৭ বিজিআইয়ে উল্লেখযোগ্য উন্নতি ও প্রযুক্তির বিশেষ ব্যবহার করলেও এটি মূলত স্বল্প-পাল্লার আকাশযুদ্ধ এবং প্রশিক্ষণের জন্য উপযুক্ত। আধুনিক বহুমুখী ব্যবহারের উপযোগী যুদ্ধবিমানের মতো এই বিমানের দৃষ্টিসীমার বাইরে (বিভিআর) ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা নেই।