কটিয়াদী সদরে প্রবেশ মুখ কটিয়াদী বাসট্যান্ড এলাকা। আর এখানেই সড়কের পাশে ফেলা হয় ময়লা৷ দীর্ঘদিন ধরে এমন অবস্থা চলে আসলেও নজর নেই কারও। এতে পরিবেশ ও মানুষের উপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে৷ ফলে বাহিরের কেউ ময়লার দুর্গন্ধ নিয়েই প্রবেশ করতে হচ্ছে।
পৌরসভায় আবর্জনা ফেলার জায়গা নেই। নেই পরিকল্পিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। শহরে প্রবেশের মুখে প্রতিদিন প্রায় ২০ টন ময়লা–আবর্জনা ফেলা হয়। এই ময়লা–আবর্জনার দুর্গন্ধে স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
পচা ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে মিশে আশপাশের পরিবেশ দূষিত করছে। পৌরসভার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ভ্যানে করে বাসাবাড়ির ময়লা-আবর্জনা নিয়ে এসে রাস্তার ওপর এলোমেলোভাবে ফেলে যায়। টোকাইরা পচা ময়লার স্তূপ এদিক-ওদিক সরিয়ে ভাঙাচোরা প্লাস্টিক, পলিথিন, বোতল প্রভৃতি কুড়িয়ে কাঁধে চাপানো বস্তায় রাখে। বৃষ্টি হলে বৃষ্টির পানির সাথে ময়লাআবর্জনা মহাসড়কের রাস্তার উপর জমে থাকে। এসময় যে কোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
এভাবে ময়লা-আবর্জনা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে মূল রাস্তা ও ফুটপাতের বিভিন্ন স্থানে। পথচারীদের দেখা যায় নাকে রুমাল দিয়ে চলাচল করছে। কেউ কেউ হাত দিয়ে নাক-মুখ চেপে ধরে চলাচল করছে। ফলে প্রতিদিনই এলাকাবাসী, পথচারী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী, ব্যবসায়ীসহ হাজার হাজার মানুষ অবর্ণনীয় ভোগান্তিতে পড়ছে।
কটিয়াদী পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ২০ টন বর্জ্য বের হয়। বিপুল পরিমাণ এই বর্জ্য ফেলার জন্য পৌরসভার নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় ভাগাড় বা ডাম্পিং স্টেশন করা সম্ভব হয়নি। তাই কয়েক বছর ধরে পৌরসভার বাসস্ট্যান্ড কাঁচাবাজার সংলগ্ন মহাসড়কের একপাশে পল্লী বিদ্যুৎতের সাবস্টেশন অপর পাশে ময়লার স্তুপ জমে পাহাড় তৈরি হয়।
সাধারণ মানুষকে নাকে-মুখে হাত চেপে, নিশ্বাস বন্ধ করে চলাচল করতে হচ্ছে। দুর্গন্ধ বাতাসের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছে আশপাশের বসতবাড়িতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে প্রায় ১০০ মিটার এলাকায় আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। দুর্গন্ধে সেখানে দাঁড়ানো যায় না। মসজিদের মুসল্লিরা ওই এলাকা অতিক্রম করার সময় নাকমুখ চেপে যেতে দেখা যায়।
৩০ গজ দূরে অবস্থিত যাতায়াত পরিবহন কাউন্টারের ম্যানেজার রমিজ মিয়া বলেন, দুর্গন্ধের কারণে এখানে থাকাই দায়। নাক মুখ চেপে কাজ করতে হয়। দুর্গন্ধ হওয়ায় অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করছি। পৌর প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি, ময়লার ভাগাড়টি এখান থেকে অন্য স্থানে সরিয়ে নিন।
অপরিকল্পিতভাবে ময়লা আর্বজনা ও নানা রকমের বর্জ্য নিক্ষেপের ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে।
নিয়মিত পরিবার যাত্রী মেরাজ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বলেন, ময়লার অংশটুকু পার হতে গেলেই দুর্গন্ধ গাড়ির মধ্যে ঢুকে। ময়লার স্থান পার হলেও দুর্গন্ধ যেতে সময় লাগে। অনেক সময় বাচ্চারা বমি করে ফেলে।
আশেপাশের বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, ময়লা আর্বজনার কারণে অতিরিক্ত দুর্গন্ধে আশেপাশে বসাও দুস্কর হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতে দোকানের শ্রমিক, পথচারী ও স্কুল,কলেজের শিক্ষার্থী, বাজারে আসা ক্রেতা-বিক্রেতাদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। ফলে ময়লা, আর্বজনা ও নোংরা পানি নিষ্কাশন করা জরুরি। অন্যথায় সৃষ্ট দুর্গন্ধে জনস্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে পড়বে।
কটিয়াদী বাজার বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিল্লুর রহমান বলেন , দেড় যুগের পুরোনো এই পৌরসভার আধুনিক আবর্জনা ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা তো দূরের কথা, আবর্জনা ফেলার নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। পৌর এলাকার সব আবর্জনা প্রায় ১০ বছর ধরে ফেলা হচ্ছে রাস্তার পাশে। এর আগে বিভিন্ন স্থানে ময়লা আবর্জনা ফেলা হতো।
মেশিনারিজ দোকানদার এখলাছ উদ্দিন জানান, শুধু আসা যাওয়ায় ভোগান্তি নয়, এই ময়লা থেকে জন্ম নিচ্ছে মশা-মাছি, ছড়াচ্ছে দুগর্ন্ধ। রাতের বেলায় দুগর্ন্ধে ঘুমানোও যায় না। খাওয়া-দাওয়া করতেও কষ্ট হচ্ছে। ব্যবসা পরিচালনা করাই কঠিন হয়ে পড়ছে। ময়লার গন্ধের জন্য দোকানে কাস্টমার কম আসে। নিয়মিত দোকান খোলা যায় না। প্রায় সময় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়। অনেক সময় কে বা কারা ময়লার স্তুপে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন ময়লার আগুনের ধুয়া বাতাসের সাথে মিশে আশপাশ অঞ্চলে দুর্গন্ধে ছড়িয়ে পরে। এ আগুন থেকে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে। আমার মত ছোট ব্যবসায়ীরা এই দুর্ভোগের মাঝে ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
কটিয়াদী পৌরসভার বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মী এমরান হোসেন জানান, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রাক ও ভ্যানে প্রতিদিন প্রায় ২০টন আবর্জনা সংগ্রহ করা হয়। এসব আবর্জনা বাস স্ট্যান্ড এলাকার হাইওয়ে রাস্তার পাশে ফেলা হয়।
কটিয়াদী পৌর প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) লাবনী আক্তার তারানা বলেন, ‘আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। ময়লা ফেলার ভাগাড় করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা পৌরসভার ছিলনা । জেলা প্রশাসনের কাছে জায়গা চাওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যে আমরা কিছু জায়গা পেয়েছি । দ্রুততম সময়ে নতুন জায়গায় ময়লা স্থানান্তর করা হবে। আশা করছি শীঘ্রই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এবং জনদুর্ভোগ নিরসন হবে।