দু,পাশে সবুজ শ্যামলে ভরা ফসলের জমি মাঝখান দিয়ে পাকা রাস্তা বয়ে চলেছে টাংগাইলের মধুপুরের, সিংহচালা থেকে মোমিনপুর বাজারের দিকে, সামনে একটা ছোট ব্রীজ । নির্জন পরিবেশ, আশে পাশে নেই কোন বাড়িঘর । পড়ন্ত বিকেলের গাঁ শীতল করা ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শ নিতে অনেকেই এখানে বসে বিশ্রাম করে। বিশেষ করে ইয়াং জেনারেশনের ছেলেরা একটু বেশি আসে, ছবি তুলতে ও গল্প করতে। বাজার থেকে অনেকটা দূরে নিরিবিলি ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য সব মিলিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশ যা সবার ই ভালো লাগার কথা । সবাই যখন পড়ন্ত বিকেলের ঠান্ডা হাওয়া শরীরে লাগিয়ে বিশ্রাম করে, ঠিক সেই সময় রোকেয়া খালা (রোকেয়া বেগম) তার ছোট্ট টং দোকানটিতে কর্মব্যস্ত সময় পার করেন।দুই সন্তানের জননী রোকেয়া খালার বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ হবে। প্রথম সংসারে তার স্বামী তাকে ও দু্ই সন্তান সহ ছেড়ে দিয়ে অন্য এক মহিলাকে বিয়ে করে চলে যান, তাকে রেখে কেন চলে গিয়েছে তার সঠিক কোন কারণ রোকেয়া খালা বলতে পারে না । দুই সন্তানের জননী রোকেয়া খালার বিবাহিত জীবনের সংসার সুখের হয়ে ওঠে নি। সংসার সুখের হোক কিংবা দুঃখের ! জীবন তো আর থেমে থাকেনা, জীবন তার নিজ গতিতে চলমান। খালার জীবনে কষ্টের দিন শুরু হলেও খালা কারো কাছে হাত পাততে রাজি নন। তিনি নিজেকে কারও কাছে ছোট করতে চান নি, তাইতো তিনি নিজেই একটা ছোট্ট টং দোকান চালান এবং সে খানেই বসবাস করেন। রাস্তার পাশে মাটি থেকে বেশ উঁচুতে বাঁশ ও কাঠের মাধ্যমে তৈরি এ মাচার উপর বসবাস করেন খালা। বাসস্থান ও দোকান বলতে একই জায়গা খালার ,দিনে ১০০০-১২০০ টাকা বেচা-কেনা করেন ও মাঝে মধ্যে এর থেকেও কম হয়। মাসে ৩/৪ হাজার টাকা আয় করে এরই মাধ্যমে ঔষুধ,খাবার দাবার সহ জীবন চালান । বাড়িতে আসলে আমরা বন্ধুরা সবাই খালার দোকানে বসি, গল্প করি, চা খাই, খালার দোকনে না আসলে, চা, না খেলে যেন কেমন একটা অপূর্ণতা থেকে যায়। সদা হাস্যোজ্জ্বল রোকেয়া খালা মাঝে মাঝে বলে, এভাবে আর পারি না বাবা ! তার কারণ অনেক আপন লোকজন দোকানে বাকি খেয়ে এখন টাকা পরিশোধ করতে অনেক টাল-বাহানা করে। খালা মাঝেমধ্যে আমাকে বলে এখানে থাকতে আর ভালো লাগে না, আমাকে ঢাকা অথবা অন্য কোথাও রেখে আসো । মানে, ( অন্য কোন কাজের ব্যবস্থা করে দিতে) তবে এটা তার মনের কথা না শুধু মুখে বলে আর কি, নিজের উপরে কিছু টা অভিমান। আসলে সত্যি বলতে,এই সময় খালার নিজের সন্তান ও নাতি- নাতনীদের সাথে সুন্দর সময় পার করার কথা থাকলেও জীবনের এই সময়েও একাকী জীবন কাটাচ্ছে । জীবিকার তাগিদে তাকে একটা নির্জন জায়গার মধ্যেই বসবাস করতে হচ্ছে, যেখানে তার আপন বলতে কেউ নেই। তারপর ও খালার জীবন নিয়ে তেমন কোন অভিযোগ বা আফসোস নেই ,খালা বলে অনেক ভালো আছে সে। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকা এমন সহজ-সরল সকল রোকেয়া খালারা ভালো থাকুক সব সময় ।