কর্মদিবসে দপ্তরে গিয়ে বারবার ফিরে আসতে হচ্ছে ভোক্তাদের। কুড়িগ্রাম জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দিনের পর দিন ঝুলছে তালা। অভিযোগ জানাতে দূরদূরান্ত থেকে আসা সাধারণ মানুষ কাউকে না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
২০ জুলাই সকালে চর রাজীবপুর থেকে তিন ঘণ্টার নদীপথ পাড়ি দিয়ে আসেন সোহেল রানা। দোকান থেকে কম ওজনে পণ্য পাওয়ার অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু অফিসে গিয়ে দেখেন তালাবদ্ধ, যোগাযোগের কোনো নম্বরও নেই। “কষ্ট করে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে,” ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
২৩ জুলাই চিলমারীর বাসিন্দা রিয়াদুল ইসলাম জানান, তাদের এলাকায় অধিকাংশ দোকানে মূল্য তালিকা নেই। ৩৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে অভিযোগ জানাতে এসেছিলেন তিনি। কিন্তু দুপুর ১২টার পরও অফিসে তালা ঝুলতে দেখে হতাশ হন।
টানা দুই সপ্তাহ অনুসন্ধানে একই চিত্র উঠে আসে—সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসেও অফিস ছিল ফাঁকা, দরজা-জানালায় ধুলোবালি আর মাকড়সার জাল জমে থাকে। স্থানীয়রা জানান, সর্বশেষ রমজান মাসে এ দপ্তরের কার্যক্রম চোখে পড়েছিল। এরপর থেকে কোনো অভিযান বা মনিটরিং হয়নি।
ভুক্তভোগী সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, মানসম্মত না হওয়া পোশাকের বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ জানাতে আসলেও অফিস তালাবদ্ধ থাকে। জাতীয় তথ্য বাতায়নে কিংবা অফিসের সামনে দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করেও কোনো ফল পাননি তিনি।
অফিসসংলগ্ন অন্য একটি দপ্তরের এক কর্মচারী জানান, কাগজে-কলমে একজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও তাদের অফিসে পাওয়া যায় না। “রমজানের পর থেকে চার-পাঁচবার অফিস খোলা হয়েছে। বাকি সময় সবসময় তালাবদ্ধ থাকে,” বলেন তিনি।
জেলা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলমগীর হোসেন জানান, লালমনিরহাটের কর্মকর্তা কুড়িগ্রামে অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকলেও নিয়মিত তাকে পাওয়া যায় না।
এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ সাদী বলেন, “আমার কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী নেই। একজন কর্মচারী বদলি হয়েছেন। আমি লালমনিরহাটে দায়িত্বে আছি, কুড়িগ্রামে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করি। প্রতিদিন আসা সম্ভব হয় না। কারও অভিযোগ থাকলে মেইলে দিলে আমি ব্যবস্থা নেব।”
জেলা প্রশাসক নুসরাত সুলতানা জানান, বিষয়টি আগে তাঁর জানা ছিল না। এখন থেকে দপ্তরের সামনে লিখে দেওয়া হবে—সপ্তাহের কোন দিন কর্মকর্তা কুড়িগ্রামে বসবেন। সঙ্গে যোগাযোগ নম্বরও টানানো হবে, যাতে সহজেই সেবা নিতে পারেন ভোক্তারা।