কুমিল্লায়, দেবিদ্বার উপজেলা ইউসুফপুর আইডিয়াল স্কুল মাঠে জাতীয় নাগরিক পার্টি ( এনসিপি ) পরিচিতি সভা সফল এবং সুশৃংখলভাবে অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার ২৮ জুন ২০২৫ বিকেল ৩ টায় প্রকৌশলী মোহাম্মদ নোমান সরকারের সভাপতিত্বে মাহমুদুল হাসান ও মাজহারুল ইসলামের সঞ্চালনায় পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।
এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এন সি পি এর দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নাজমুল হাসান নাহিদ, কেন্দ্রীয় সংগঠক জাতীয় যুব শক্তি।
মোঃ কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, হেড অফ একাউন্স এন্ড ট্যাক্সেসন, পদ্মা গ্রুপ ঢাকা।
শামীম কাউসার, প্রতিনিধি এনসিপি দেবিদ্বার উপজেলা।
মোহাম্মদ লতিফ মিয়া, প্রতিনিধ এন সি পি দেবিদ্বার উপজেলা।
অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই আইডিয়াল হাই স্কুল মাঠটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। প্রিন্ট ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার সংবাদ কর্মী এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।
উপস্থিত নেতাকর্মীরা জুলাই স্পীড নিয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি হাসনাত আব্দুল্লাহ তার বক্তব্যে বলেন, আমরা সব সময় ধারণা করে থাকি নেতারা খারাপ, রাস্তার টাকা মারে,,চাল চুরি করে, ঢাকায় বসে উন্নয়নের কথা বলে,। কিন্তু ভোটাররা কি করে? ভোট আসলে
৫০০ টাকায় ভোট বিক্রি করে দেয়। আমরা দেখেছি বিগত ইলেকশন গুলোতে এমপি হতে ১০০ থেকে ১৫০ কোটি টাকা খরচ করে, ভোটের আগের রাতে ঘরের দরজায় টুকা দিলে, ভেতর থেকে বলে আমরা পাঁচজন। তাই নেতা নির্বাচনের জন্য ভোটের আগে আমাদেরকেও সংশোধন হতে হবে।
উপস্থিত হাজারো জনতাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন আমি আপনাদেরই সন্তান এই গ্রামেই আমার জন্ম। সুতরাং এখানে কোন অনিয়ম হলে আমি শুধু এটা মনিটরিং করি। আপনারা দেখেছেন আগে এলাকায় মাহফিল হত, সেই মাহফিল গুলো বন্ধ করে দেওয়া হতো, হুজুরদেরকে দাড়ি ধরে টেনে টেনে মঞ্চ থেকে নামিয়ে দেওয়া হতো। জুলাই আন্দোলনে যে ছেলেরা নিজের জীবন আত্মত্যাগ করেছে তারা এমপি হতে চায় নাই, মন্ত্রী হতে চায় নাই, ওরা চেয়েছে দেশের সংস্কার, আর যেন কোন আলেমকে অপদস্ত হইতে না হয়, ভোটের জন্য কেউ যেন বুকের তাজা রক্ত রাস্তায় ঢেলে দিতে না, হয়। কেউ যেন টাকা দিয়ে আর ক্ষমতা কিনতে না পারে।
তিনি আরো বলেন প্রিয় উপস্থিতি, ক্ষমতা, দায়িত্ব এগুলো হচ্ছে আমানত , আপনারা আর আমানতে খেয়ানত কইরেন না, আপনাদের নিকট একদিনের ক্ষমতা থাকে, আপনারা যদি এই একদিনের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন তাহলে পরবর্তী পাঁচটি বছর আপনাদেরকে গোলামী করে কাটাতে হবে। সুতরাং যেদিন আপনারা এই একদিনের জন্য ক্ষমতাবান হবেন এর যথাযথ ব্যবহার করবেন।
আর ভোটের আগে আমাদের কিছু প্রধান কাজ রয়ে গেছে। আমাদের শহীদদের রক্তের দাযভার রয়ে গেছে।
বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দল গুলোর প্রতি উদার্ত আহ্বান জানাচ্ছি আপনারা যেভাবে টাইমলাইন ধরে ভোটের দাবি করছেন, ঠিক সেইভাবে টাইমলাইন ধরে ভোটের সাথে সাথে সংস্কার এবং বিচারের দাবি করেন।
আপনারা যেভাবে বলছেন ফেব্রুয়ারির মধ্যে নির্বাচন চাই, ঠিক তেমনিভাবে বলেন ফেব্রুয়ারির মধ্যেই সংস্কার এবং বিচার চাই,।
আমরা আপনাদের সাথে থাকবো ।
আমরা এখন পর্যন্ত আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে পারি নাই। এখন পর্যন্ত রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো সংস্কার হয় নাই। হাসিনা মুক্ত মিডিয়া এখন পর্যন্ত হয়নি। মিডিয়ার মধ্যে এখন পর্যন্ত ফ্যাসিবাদের দোসরা লুকিয়ে রয়েছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও ফ্যাসিবাদরা অবস্থান করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কেউ ক্ষমা না চাইবে ততক্ষণ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে রিকনসিলেশনের প্রশ্নই আসে না।
এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বলতে চাই আপনারা যেভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, ঠিক একই ভাবে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানগুলোকে আওয়ামী লীগ মুক্ত করুন। মিডিয়া গুলোকে আওয়ামী লীগ মুক্ত করুন, বিচার বিভাগকে আওয়ামী লীগ মুক্ত করুন। যাতে করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর কোন জুটিশিয়াল ট্রায়ালের মাধ্যমে আর কোন নিরপরাধ মানুষকে বিনা বিচারে ফাঁসির কাস্টে ঝুলতে না হয়।
প্রিয় উপস্থিতি আমার জন্ম যেহেতু দেবিদ্বারের এই মাটিতে আপনারা যে, যেই দল করুন না কেন আমি কেবলমাত্র আপনাদেরই সন্তান, ভাই, ভাতিজা হয়ে থাকতে চাই। আমি প্রত্যাশা করি দল-মত এবং পথের উর্ধে উঠে আপনারা আমাকে আপনাদের সন্তান হিসাবেই সমর্থন দিবেন।
আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করতে চাই আমাদের দেশের রাজনীতিবিদরা যেটা চিন্তা করে সেটা মুখে বলেনা, আর যেটা মুখে বলে সেটা করে না, এর নামকরণ করেছে তারা রাজনীতি। এমন রাজনীতিবিদরা প্রতারণাকে কৌশল হিসাবে চালিয়ে দেয়। কিন্তু আমরা এনসিপির প্রত্যেকটি সদস্য এটা নিশ্চিত করতে চাই, আমরা যা চিন্তা করব তাই বলবো।আর যেটা বলব সেটাই বাস্তবায়ন করব।
আমি এখানে আসার পথে দেখতে পেলাম রাস্তায় আমার পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে, রাতের অন্ধকারে পোস্টার গুলো নষ্ট করা হয়েছে,। যারা এ কাজটি করেছে তারা আমার ভাই , তারা এ গ্রামেরই মানুষ। আপনাদের উদ্দেশ্যে বলছি সম্মান, নেতৃত্ব আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে , আল্লাহ যাকে সম্মান দেয়, উপরে উঠায় আপনারা পোস্টার ছিড়ে তাকে নিচে নামাইতে পারবেন না। আমি আপনাদেরকে বলতে চাই প্রতি হিংসার রাজনীতি থেকে নিজেকে বিরত রাখুন।
আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করিনা। আপনি কতজনকে শত্রু বানাইলেন এটার নাম রাজনীতি না, আসল রাজনীতি হল এটা আপনি কতজন শত্রুকে বন্ধু বানাতে পারলেন। আপনি আমার বিরুদ্ধে মিছিল দিবেন, আপনি আমার পিঠের চামড়া তুলে নিতে চাইবেন, আমি আপনাকে বুকে টেনে নিব, আপনি আমাকে পাথর ছুড়বেন, আমি আপনাকে ফুল দিয়ে বুকে টেনে নিব। আমরা সহিংসতার রাজনীতি করবো না। কিন্তু যেখানে কোন অন্যায় আসবে সেটা আমরা ছেড়ে দিব না।
হাসিনা আমাদেরকে যেভাবে কিনে নিতে পারে নাই, তেমনি অন্যায়ের কোন ধরনের আবদার আমাদেরকে কিনে নিতে পারবে না।
আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই এই দেবিদ্বারের মাটিতে আমরা ভেসে আসি নাই, এই মাটিতে আমরা ফরেন বডি নই,, এই মাটিতে আমাদের জন্ম, এই মাটিতে আমাদের উত্থান, সুতরাং আমাদের বিরুদ্ধে যদি অন্যায় ভাবে কোন কুৎসা রটানো হয় , জনগণকে সাথে নিয়ে সেটা আমরা প্রতিহত করব।
আমরা যতক্ষণ পর্যন্ত ভালো কাজ করব ততক্ষণ পর্যন্ত আপনাদের সহায়তা কামনা করি। আমাদের কোন অন্যায় অথবা ভুল আপনাদের চোখে ধরা পড়লে আমাদেরকে ভুলটা ধরিয়ে দিবে। আসুন সকলে মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে দেশটা কি সুন্দর করে গড়ে তুলি। আমরা সকলে সত্যের পক্ষে, ন্যায়ের পক্ষে, হালালের পক্ষে , ইসলামের পক্ষে অবিচল থাকব।