শিক্ষকতায় ৩৯ বছরের চাকরিজীবনের ইতি টানেন চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানী। বিদ্যালয়কে জাতীয়করণসহ শিক্ষকতায় সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করায় বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীসহ বিদ্যালয়ের সহকর্মীরা চোখের অশ্রু ঝরিয়ে তাঁকে দিয়েছেন রাজকীয় বিদায় সংবর্ধনা।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে এগারোটায় উপজেলার চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দেখা গেছে এমন চিত্র।
সরজমিনে দেখা যায়, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের আয়োজনে চকময়রাম সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে আব্দুল কুদ্দুস মন্ডলের সভাপতিত্বে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানীসহ অবসরপ্রাপ্ত অন্যান্য শিক্ষকদের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পাঠ শেষে সমবেত কন্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করা হয়। পরে বিভিন্ন ব্যাচের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা ফুলের তোড়া দিয়ে সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানী এবং এর আগে অবসরপ্রাপ্ত শারীরিক শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক রেজাউল করিম, হিন্দু ধর্ম বিষয়ক শিক্ষক অসীম চন্দ্র কুন্ডু, অফিস সহকারি আব্দুস ছাত্তারসহ আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে স্বাগত জানান। এসময় প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বক্তব্য দিতে গিয়ে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
এরপর বিকেলে এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে চকময়রাম এলাকা থেকে আমাইতাড়া বাজার মোড় এবং নিমতলী বাজার হয়ে ধামইরহাট পূর্ব বাজার পর্যন্ত প্রধান শিক্ষককে হাতির পিঠে চড়িয়ে ও কাঁধে করে বাড়ি পৌঁছে দেন প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এবং অন্যান্য শিক্ষকদের ঘোড়ার গাড়িতে চড়িয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এসএম খেলাল-ই রব্বানী ১৯৮৭ সালে বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তিনি ২০০১ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর তাঁর কর্মজীবন শেষ হয়।
বিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে ৯৬ ব্যাচের শিক্ষার্থী রবিউল হক বলেন, "এক সময় আমিও এই স্কুলের একজন শিক্ষার্থী ছিলাম। আমাদের সময় প্রিয় শিক্ষক ছিলেন এসএম খেলাল-ই রব্বানী স্যার। স্যারের বেতের বাড়ি খেয়ে ভালো শিক্ষার্থী হতে পেরেছিলাম বলেই আজ আমি ধামইরহাট কেজি স্কুলের একজন শিক্ষক হতে পেরেছি। স্যারের দীর্ঘায়ু কামনা করছি।"
অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানী বলেন, "অসম্ভব শক্ত উঁচু-নিচু পথ এবং আবর্জনা পাড়ি দিতে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। এর ফলে গ্রামের মধ্য থেকে একটি স্বপ্ন নিয়ে এই বিদ্যালয়কে জাতীয়করণ করতে পেরেছি। বিদ্যালয়ের সকল সহকর্মী, শিক্ষার্থী ও স্থানীয় গুণীজনদের সার্বিক সহযোগিতায় তা সম্ভব হয়েছে। আজ আমি তাদের কাছে চির ঋণী হয়ে রইলাম।"
তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, "তোমরা দেশে-বিদেশে যে যেখানেই থাকো না কেন আমাকে ভালোবেসে যেভাবে সব সময় পাশে থেকেছো, আমি এই বিদ্যালয় থেকে চলে যাওয়ার পরেও তোমাদের বিদ্যালয়ের সুখে-দুখে পাশে থেকো।"
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল মামুন, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার কাজল কুমার সরকার, মজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান আলমগীর কবির, দাতা সদস্য আব্দুল গণি মন্ডল, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তাইমুর রহমান, বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীসহ বিভিন্ন ব্যাচের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।