বান্দরবনের রুমায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) গুলিতে নিহত হয়েছেন সেনা সদস্য নোয়াখালী চাটখিলের রফিকুল ইসলাম (৪০)। শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিহত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম (৪০) এর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রফিকুল ইসলাম নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ আলী কাইদার বাড়ির মফিজ উদ্দীনর ২য় ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।বাড়িতে আনার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ স্বজনরা।

বান্দরবনের রুমায় সশস্ত্র সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) গুলিতে নিহত  হয়েছেন সেনা সদস্য নোয়াখালী চাটখিলের রফিকুল ইসলাম (৪০)।  শনিবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় নিহত সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম (৪০) এর মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। রফিকুল ইসলাম নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার পরকোট ইউনিয়নের পশ্চিম শোশালিয়া গ্রামের আমজাদ আলী কাইদার বাড়ির মফিজ উদ্দীনর ২য় ছেলে। তিনি সেনাবাহিনীতে কর্পোরাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।বাড়িতে আনার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে শোকে স্তব্ধ স্বজনরা।

এর আগে, শুক্রবার বিকালে বান্দরবনের রুমা উপজেলার বড়থলি পাড়া আর্মি ক্যাম্পের আওতাধীন পলি পাংশা পাড়ার মধ্যবর্তী স্থানের যাত্রী ছাউনি এলাকায় গুলিতে নিহত হন এ সেনা সদস্য। পরে তাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। 

রাত আটটায় জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

সন্ধ্যায় রফিকুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কাপড়ে মুখ ঢেকে কাঁদছেন স্ত্রী আমেনা বেগম। পাশেই অপলক দৃষ্টিতে মায়ের দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ফেলছে অবুঝ তিন শিশু। মা কেন কান্না করছে, তা তখনও বুঝতে পারেনি তাফহীম (১২), তাহমীদ (১১) ও ফারহান (৩)। বাকরুদ্ধ হয়ে ঘরের মধ্যে বিছানায় শুয়ে কাঁদছেন নিহত সেনা সদস্যের মা হায়াতুন্নেছা। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা ছিল না তাদের। সবার চোখেই পানি ঝরছিল।

পরিবারের সদস্যরা জানান, দেশ মাতৃকার টানে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম।

বাবার লাশ আসার আগে তার তিন সন্তান তাফহীম (১২), তাহমীদ (১১) ও ফারহানকে (৩) স্বাভাবিক দেখা গেলেও লাশ দেখার পর থেকে অঝোরে কান্না শুরু করে বড় দুই সন্তান। পুরো জানাজায় ইমামের পেছনে প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে কেঁদেছেন করপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়া তাফহীম ও চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া তাহমীদ।

নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম বলেন, ‘২০১১ সালে আমাদের বিয়ে হয়েছিল। রোজার আগে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। সর্বশেষ পরশু কথা হয়েছে। শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ফোন করে মৃত্যুর খবর জানানো হয়। আজ সকালে আমার শ্বশুর গিয়ে লাশ নিয়ে এসেছেন। আমার তিন ছেলে। আমার পরিবারে আর কেউ উপার্জনক্ষম নেই। তিন ছেলেকে নিয়ে আমি এখন কীভাবে চলবো? আমাদের দেখার আর কেউ রইলো না।’ বলে কান্না শুরু করেন আমেনা।

বিলাপ করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন রফিকুল ইসলামের বড় বোন মফিদা আক্তার ও শাহীন আক্তার। বলেন, ‘আমার ভাই নিজের সংসারের পাশাপাশি আমাদেরও খেয়াল রাখতো। আমরা এখন কি নিয়ে বাঁচবো? আমার ভাতিজাদের কে দেখবে? সবকিছু শেষ হয়ে গেলো। আমাদের এখন কে দেখবে? কে সংসার চালাবে? কে আমাদের বৃদ্ধা মায়ের ওষুধ খরচ দেবে?’

চাটখিল ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন বলেন, ‘চট্টগ্রাম সেনানিবাস থেকে শুক্রবার রাতে আমাকে ফোন করে তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য নিয়েছিলো। পরে স্বজনদের কাছ থেকে মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হয়েছি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার পরিবারের পাশে থাকবে। আমরাও তাদের খোঁজ খবর রাখবো।’