ফরিদপুর-৪ আসনের ভাঙ্গা উপজেলার অন্তর্ভুক্ত আলগী ও হামিরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ (নগরকান্দা-সালথা) আসনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রতিবাদে দফায় দফায় সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করছেন এলাকাবাসী। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে অবরোধকারীরা ঘোষণা দিয়েছেন দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অবরোধ চলবে।
গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টা থেকে সারা দিন ব্যাপী হাজারো মানুষ ফরিদপুর-বরিশাল ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ ফেলে, বাঁশের ব্যারিকেড তৈরি করে ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ শুরু করে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের যান চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে। সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রথম দফায় অবরোধ চলতে দেখা গেছে।
জুমার নামাজ শেষে আবার তারা রাস্তায় নেমে আসে এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত এ আন্দোলন চলতে থাকে।
তারা ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের পুকুরিয়া বাসস্ট্যান্ড , হামেরদী বাসস্ট্যান্ড ও ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ভাঙ্গা-খুলনা মহাসড়কের মুনসুরাবাদ বাসস্ট্যান্ড, সুয়াদি বাসস্ট্যান্ড ও ফরিদপুর বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা দক্ষিণপাড় বাসস্ট্যান্ডে সড়কের উপর গাছ ফেলে, বাঁশ দিয়ে বেরিকেট দিয়ে ও টায়ারে আগুন ধরিয়ে এই অবরোধ শুরু করে।
সড়ক অবরোধের ফলে ভাঙ্গা উপজেলা চতুর্দিকে মহাসড়কে শত শত পণ্যবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী যানবাহন আটকে পড়ে। ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ থেকে শুরু হয়ে যানজট প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন আগামী ১৩তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০টি সংসদীয় আসনের নতুন সীমানা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করে। এতে ফরিদপুর-৪ আসনের আলগী ও হামেরদী ইউনিয়নকে কেটে ফরিদপুর-২ আসনে যুক্ত করা হয়।
এ সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় জনগণ রাতেই প্রতিবাদের ঘোষণা দেন এবং আজ সকালে তা বাস্তবায়ন করেন।
হামেরদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ খোকন মিয়া বলেন, আমরা কোনোভাবেই ফরিদপুর-২ এ যাব না। আমাদের ফরিদপুর-৪ এ ফিরে নিতে হবে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে গেজেট বাতিল না হলে আন্দোলন আরও তীব্র হবে।
নুরুলাগঞ্জ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সাহাবুর বলেন ভাঙ্গা উপজেলার বারটি ইউনিয়ন কয়েকটি পৌরসভা এটি ফরিদপুর পাঁচ হিসেবে আগে প্রতিষ্ঠিত ছিল ২০০৭ সালে তৎকালীন সরকার নির্বাচনের আগে ভাঙ্গা সদরপুর চর বাজার শন নিয়ে ফরিদপুর-৪ গঠিত হয়,
কিন্তু বর্তমান সরকারের নির্বাচন কমিশনার
কার স্বার্থ হাসিল করতে গিয়ে আমাদের ভাঙ্গা কে অঙ্গহানি করেছে, আমাদের বুকে আগুন জ্বালিয়েছে আমরা আলগি এবং হামিদ দি ইউনিয়ন কে ফিরিয়ে না দেয়া পর্যন্ত বারটি ইউনিয়নের সকল নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাবে।
আলগি ইউনিয়নের আহাদ শিকারি বলেন ভাঙ্গা উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা কে আমরা এক ও অভিন্ন দেখতে চাই, ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন তো দূরের কথা ১ ইঞ্চি মাটিকেও আমরা আলাদা হতে দিব না একজন মানুষকে এখান থেকে ভোটার বঞ্চিত করতে দিব না।
আলগি ইউনিয়নের আল আমিন বলেন বর্তমান সরকারের ইসি কার স্বার্থে কোন বিবেচনায় আমাদেরকে বিচ্ছিন্ন করতে চায়
আমরা ভাঙ্গা উপজেলার মানুষ দল মত নির্বিশেষে ভাঙ্গা উপজেলা কে ঐক্যবদ্ধ রাখতে চাই ভাঙ্গা উপজেলার প্রতিটি মাটিকণা প্রতিটি ধূলোকও না আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছ, আমরা ভাঙ্গা উপজেলার শান্তিপ্রিয় মানুষ, কে বা কারা আমাদেরকে এই বিপদে ফেলিয়েছে তাদেরকে আমরা কোনদিন ছাড় দেবো না তাদেরকে আমরা খুঁজে বের করবো জনগণের সামনে তাদেরকে কঠিন বিচার করব ইনশাআল্লাহ।
ঘটনাস্থলে বারবার ছুটে যান ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ আশরাফ হোসেন ও হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রোকিবুজ্জামান ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাবৃন্দ।
এ সময় ইউএনও মিজানুর রহমান আশ্বস্ত করে বলেন- আমরা ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সহ উধ্বর্তনদের জানিয়েছি, আশা করি ভাল সমাধান হবে।
তিনি অবরোধকারীদের সড়ক ছাড়ার অনুরোধ করেন। তবে স্থানীয়রা কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
ভাঙ্গা থানার ওসি আশরাফ হোসেন জানান, ইসির সংসদীয় আসন বিন্যাস গেজেট প্রকাশের পর গতকাল বৃহস্পতিবার থেকেই ক্ষোভে ফুঁসছে ভাঙ্গাবাসী। এর ধারাবাহিকতায় আজ সকালে দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষ মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে, টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করে রাখে। আমি সকাল থেকেই ঘটনাস্থলে অবস্থান করছি। আইন শৃঙ্খলা পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনীর সহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অবরোধকারীদের শান্ত করার চেষ্টা করছি।