মহান বিজয় দিবস ২০২৪ উদযাপন উপলক্ষ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের সম্মানে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে জেলা প্রশাসন। সোমবার(১৬ ডিসেম্বর) জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে উক্ত অনুষ্ঠানে ৪০০ জন মুক্তিযোদ্ধা পরিবাকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান, বিএনপি চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া এর উপদেষ্টা, ফেনী-২ এর সাবেক সংসদ সদস্য, অধ্যাপক ভিপি জয়নাল ভিপি, স্টার লাইনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর উদ্দিন, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর লিয়াকত আলী ভুইয়া, বীরমুক্তিযোদ্ধা,হাবিবউল্লাহ বাহার,এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের, ফেনী জেলা ইউনিট এর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড মো ইদ্রিস আলী, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তাসফিয়া তাসনিম, ওমর ফারুক শুভ, প্রিন্স মাহমুদ। কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের শুরু হয়। এতে প্রথমেই জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম অনুষ্ঠানে আগত সকল মুক্তিযোদ্ধাকে ও তাদের পরিবারের সদস্যকে ফুল দিয়ে বরণ করেন। স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক গোলাম মোহাম্মদ বাতেন বলেন যে চেতনা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছি তার অন্যতম অনুসঙ্গ ছিলো গণতন্ত্র, বৈষম্যহীনতা, অর্থনৈতিক মুক্তি। ২৪ এর আন্দোলনে জেনারেশন জি এবং আপামর জনসাধারণ য়াদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে সেই চেতনাই আবার পুণরজ্জীবিত করেছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা,হাবিবউল্লাহ বাহার বলেন ভারতকে বলতে চাই ফেনীতে আরেকজন জাফর ইমাম তৈরি করার চেষ্টা করবেন না, আমরা ১৯৭১ এর ৬ ডিসেম্বর ফেনীতে জাফর ইমামের নেতৃত্বে স্বাধীনতা পেয়েছি, দরকার হলে আবার যুদ্ধে গিয়ে মরতে রাজি আছি। আমরা ২৪ এর স্বাধীনতার সাথে আছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা এডভোকেট গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন পতিত সরকার মুক্তিযুদ্ধের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে তারা সবচেয়ে তারাই মুক্তি যুদ্ধকে অপমানিত করেছেন। তিনি আরো বলেন ফেনীতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সের নেমপ্লেটে মুক্তি যোদ্ধাদের না দিয়ে ২৪ এর যুদ্ধের খুনিদের নামে করেছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহের ২৪ এর আন্দোলনকারীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন আপনারা আন্দোলনে পিঠে যেই পতাকা লাগিয়ে যুদ্ধে গিয়েছেন, মনে রাখবেন সেই পতাকাটি আমরা ৭১ এ যুদ্ধু করে অর্জন করেছি। জামায়েতের সাবেক জেলা আমীর, লিয়াকত আলী বলেন বাঙ্গালীরা মাথা নত করেনা দরকার হলে আবার একতা বদ্ধ হয়ে যুদ্ধে যেতে রাজি আছি। বিএনপি চেয়ার পার্সন বেগম খালেদা জিয়া এর উপদেষ্টা, ফেনী-২ এর সাবেক সংসদ সদস্য, অধ্যাপক ভিপি জয়নাল ভিপি উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা সহ বর্তমান সমাজের তরুণদের কাছে ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস এবং ফেনী মুক্তির দিবসের গল্প শুনান। তিনি আশা করেন ২৪ এর গনঅভ্যত্থানের ভূমিকায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা এই ইতিহাস ধারণ করবেন। পরিশেষে তিনি প্রশাসনের সকলের কাছে আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীরা যেন সঠিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করতে পারে সে বিষয়ে অনুরোধ করেছেন। জেলা পুলিশ এর পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন ৫৩ বছরেও আমরা ২৫ মার্চ ৭১ এর হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তুলে। ২৪ এর আন্দোলনে পুলিশ আমরা প্রশাসনের কিছু অতি উৎসাহীর কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হই। নতুন প্রজন্ম যেভাবে চায় আমরা সেইভাবে পুলিশ প্রশাসন চাই। তদবির কালচার যতদিন চলবে ততদিন এই বৈষম্য চলবে। প্রথমেই তদবির কালচার বন্ধ করতে হবে। জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম বলেন আমাদের প্রতিজ্ঞা হওয়া উচিৎ বাংলাদেশকে একটি বৈষম্যহীন জ্ঞানভিত্তিক, ন্যায়ভিত্তিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ হিসেবে বিনির্মাণ করতে পারি তবেই ৭১ যে মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ করএছে এবং ২৪ এর ছাত্র আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার প্রতি যথেষ্ট সম্মান প্রদর্শন করা হবে। তিনি আরো বলেন মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের প্ররণা, বিচার বিভাগ, সংসদ, নির্বাচন কমিশন, দূর্নীতি দমন কমিশন সহ যারা দীর্ঘদিন কম্প্রমাইজ তারা যাতে সুষ্ঠু ভাবে কাজ করতে পারে বর্তমান সরকার কিছু কার্যক্রম নিয়ে এসেছে।পরিশেষে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য একটা টোকেন অব লাভ এর ঘোষণা দিয়ে অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি টানেন।