বই উপরে ওঠার মই। প্রিয় শিক্ষক লেখক ও গবেষক শামসুদ্দিন শিশির স্যারের উক্তি নিয়ে বলতে চাই "জীবনের আদি অনন্ত আশ্রয় বই"। পড়ুয়া একজন বক্তা আর অন্য বক্তার মধ্যে অনেক ফারাক থাকে শব্দচয়নে ও সাবলীলতায়। কথা আমরা সকলেই বলতে পারি কিন্তু সু-বক্তা হয়ে ওঠা দীর্ঘ অনুশীলনের ব্যাপার।
অনুশীলনের পাশাপাশি চাই শব্দভাণ্ডার যার প্রধান উৎস বই, তাই উচিত বেশি বেশি বই পড়া। সুন্দর কথন মানুষকে অনন্যতা দান করে, শ্রোতার মনে তৈরি করে ভালোলাগা স্মরণ। প্রাবন্ধিক কবি ও লেখক প্রমথ চৌধুরী বই পড়ার উপর জোর দিয়েছিলেন। সেটা হতে পারে কোন গল্পের বই বা ইতিহাস কিংবা রাজনীতি বিষয়ক বই। কারণ, বই পড়ার মাধ্যমে মানুষ সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠে।
শতাব্দী থেকে শতাব্দী ধরে মানুষের সব জ্ঞান জমা হয়ে রয়েছে বইয়ের ভিতরে। অপরিসীম জ্ঞানের উৎস হলো বই, সেই বইয়ের আবাসস্থল হলো গ্রন্থাগার। মানুষের বই পড়ার আগ্রহ থেকে গ্রন্থাগারের উৎপত্তি। গ্রন্থাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মানদন্ড। গ্রন্থাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে গড়ে ওঠে সংহতি, যা দেশ গড়া কিংবা রক্ষার কাজে অমূল্য অবদান। চিন্তাশীল মানুষের কাছে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা অনেক বেশি। গ্রন্থাকার জ্ঞান আহরণের সহজ মাধ্যম।
আমাদের মত উন্নয়নশীল মধ্যম আয়ের দেশে গ্রন্থাগারের উপযোগিতা উন্নত দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ মৌলিক চাহিদা মেটাতে আমরা এখানে হিমশিম খাই তাই বই কিনে পড়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। কম লেখাপড়া জানা ও গরিব মানুষের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা পালন করে তেমনি জ্ঞানী পন্ডিত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও গ্রন্থাগারের ভূমিকা অভাবনীয়। গণতন্ত্রের সাফল্যে গ্রন্থাগারের ভূমিকা গণমাধ্যমের চেয়ে কম না।
গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে। গ্রন্থাগার সবার জন্য উন্মুক্ত। ধর্মীয় সম্প্রদায়িকতা নেই এখানে, নেই হানাহানি কলহ। সুতরাং জাতি মর্যাদাবোধের উন্নয়নে প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিয়মিত গ্রন্থাগারে উপস্থিত হয়ে লেখাপড়া করে এবং সমাজ গড়ার সহায়ক রাজনীতি, জ্ঞানার্জন ও যথাযথ চর্চা করা। একটি সমাজের রূপরেখা বদলে দিতে পারে একটি সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার। আজকের ছাত্ররাইমআগামী দিনের জাতির কর্ণধার। তাদের মানসিক বিকাশের মাধ্যমে সমগ্র জাতির উন্নতি সম্ভব। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, সকল মাদ্রাসা, শহরের পাশাপাশি প্রতিটি গ্রাম- মহল্লায় ব্যক্তি উদ্যোগে কিংবা সামাজিক বা সরকারিভাবে গ্রন্থাগার করে তোলা এখন সময়ের দাবি।