র‍্যাব-৭ পতেঙ্গা ফারহান আহমমেদকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেন। অপর দুই আসামি নয়ন ও গোলাম মাওলাকে সীতাকুণ্ড থানা আটক করে। মোট তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বনভূমি দখলের মূলহোতা ইউনিটেক্স গ্রুপের পরিচালক (লিগ্যাল এণ্ড এস্টেট) ফারহান আহমেদ (৫৫) র‍্যাবের  হাতে আটক হয়েছেন। রবিবার (১৬ জুলাই) রাত সাড়ে দশটায় নগরীর চকবাজারস্থ চট্টেশ্বরী রোডে ইপিক আবাসিক এলাকার ১২ তলা ভবন থেকে তাকে আটক করে র‍্যাব -৭ এর একটি দল। আটক ফারহান আহমেদ চট্রগ্রামের  আনোয়ারা উপজেলার পরইকরা বিং রোড় দারোগা বাড়ির মৃত ইকবাল আহমেদের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সীতাকুণ্ড মডেল থানার অফিসার  ইনচার্জ(ওসি) তোফায়েল আহমমেদ।  তিনি বলেন, র‍্যাব-৭ পতেঙ্গা  ফারহান আহমমেদকে গ্রেপ্তার করে থানায় হস্তান্তর করেন।  অপর দুই আসামি নয়ন ও গোলাম মাওলাকে সীতাকুণ্ড থানা  আটক করে। মোট তিনজনকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। 

সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ডে দলবল নিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে বনের জায়গা দখল, বনভূমিতে জোরপূর্বক বাঁধ নির্মাণের চেষ্টা ও মাটি খননের ঘটনায় ইউনিটেক্সের ২ শীর্ষ কর্মকর্তাসহ ৬ জনকে আসামী করে বন আদালতে মামলা দায়ের করে উপকূলীয় বন বিভাগ। গত ২৫ জুন এ মামলার পিওআর (প্রসিকিউশন অফেন্স রিপোর্ট) দাখিল করে বন বিভাগের কর্মকর্তারা। মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এ মামলার ১ নম্বর আসামী করা হয়েছে ইউনিটেক্সের পরিচালক পরিচালক (লিগ্যাল এণ্ড এস্টেট) ফারহান আহমেদকে। তার নেতৃত্বেই বন দখল, বাঁধ নির্মাণ ও মাটি খননের ঘটনা ঘটেছে বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামীরা হলেন, কোম্পানিটির এসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার গোলাম মাওলা,  বাড়বকুণ্ডের দক্ষিণ মাহমুদাবাদের মোঃ খোকনের ছেলে মোঃ নয়ন (৩২), মিয়াজী পাড়ার সিরাজুল হকের ছেলে জাহিদুল করিম (৪৫), একই এলাকার ফসিউল আলমের ছেলে মেহেদী হাসান (৩০), বাড়বকুণ্ডের দক্ষিণ মাহমুদাবাদের আমিনুল হকের ছেলে মোঃ মাসুদ (৪০)। এদের মধ্যে শেষোক্ত তিনজনকে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জুলাই) বাড়বকুণ্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে সীতাকুণ্ড থানা পুলিশ।উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ইউটেক্স গ্রুপ নড়ালিয়ায় মৌজার সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় বেশ কয়েক বছর আগে  সেখানে ইউরো গ্যাস নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার মাধ্যমে ওই এলাকায় গেড়ে বসে ইউনিটেক্স গ্রুপ৷ আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানটি ম্যানগ্রোভ বন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা গ্রাস করা শুরু করে। ২০২১ সালের শেষের দিকে তারা সমুদ্র উপকূলে লাল সাদা খুঁটি স্থাপন করে জায়গাগুলো তাদের বলে দাবি করে। ওই জায়গাগুলো চর প্রকৃতির ও সবুজ ঘাস বিস্তৃত। যেখানে একসময় কেওড়া বন ছিল বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

২০২২ সালের শুরুর দিকে বিস্তৃত বনের কেওড়া, বাইন, গেওয়াসহ হাজার হাজার গাছপালা নির্বিচারে ধ্বংস করে দেয় ইউনিটেক্স, ক্যাপিটালসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। সে বছরের এপ্রিলে বন বিভাগের সঙ্গে ইউনিটেক্সের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ৩০ একর বনভূমি জবরদখলের অভিযোগ পেয়ে এপ্রিলের ১২ তারিখে চট্টগ্রামের সহকারী বন সংরক্ষক সাইফুল ইসলাম,  সীতাকুণ্ড রেঞ্জ বন কর্মকর্তা ও বাঁশবাড়িয়া বিট কর্মকর্তাসহ বন বিভাগের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ইউনিটেক্সের মুখোমুখি হতে হয়। সেসময় ইউটেক্স গ্রুপের পরিচালক (লিগ্যাল এণ্ড এস্টেট) ফারহান আহমেদ ৫ নং বাড়বকুণ্ড ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী ও তার কোম্পানির অন্যান্যদের সঙ্গী করে সমুদ্র উপকূলে হাজির হন। ওইদিন বন কর্মকর্তারা ফারহান আহমেদের কাছে কেন অবৈধভাবে সমুদ্র উপকূলে অসংখ্য খুঁটি স্থাপন করা হয়েছে জানতে চান। উত্তরে ফারহান আহমেদ জায়গাগুলো তাদের কোম্পানির নামে নামজারি আছে বলে দাবি করেন। কিন্তুু সেদিন তিনি সঙ্গে কোন কাগজপত্র আনেননি এবং বন কর্মকর্তাদের দেখাতেও ব্যর্থ হয়েছেন। সেসময় ফারহান আহমেদ জায়গাগুলো ব্যক্তির নামে রেকর্ড আছে এবং তারা কিনে নিয়েছে বলেও দাবি করেন। ফারহান আহমেদের সুর ধরে বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছাদাকাত উল্লাহ মিয়াজী বলেন, জায়গাগুলো তাদের মৌরসী সম্পত্তি। যদিও বন কর্মকর্তারা ফারহান আহমেদের কথাকে পাত্তা দেননি। বরং অবৈধভাবে স্থাপিত তাৎক্ষণিক খুঁটি অপসারণ শুরু করে। এমন অবস্থায় ইউনিটেক্স গ্রুপের কর্মকর্তা ফারহান আহমেদ স্বপ্রণোদিত হয়ে সীতাকুণ্ডের এসিল্যাণ্ড মোঃ আশরাফুল আলমকে মুঠোফোনে কল করেন। পরে এসিল্যাণ্ড বন কর্মকর্তাদের পরদিন ভূমি অফিসে আসতে বলেন। পরবর্তীতে উপকূলীয় বন বিভাগের পক্ষ থেকে উপজেলা ভূমি অফিসে একটি নামজারি বাতিলের আবেদন (মিছ মামলা) করা হয়।

জানা যায়, দুই দফায় সীতাকুণ্ড এসিল্যাণ্ড অফিসে শুনানী অনুষ্ঠিত হলেও উপযুক্ত কাগজপত্র দেখাতে পারেনি ইউনিটেক্স। সর্বশেষ গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত শুনানীতেও জমির মালিকানা সংক্রান্ত ডকুমেন্টস দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে ইউনিটেক্স।,বন কর্মকর্তারা জানান, দফায় দফায় থানায় অভিযোগ ও এসিল্যাণ্ডের পক্ষ থেকে কাজ বন্ধ রাখতে বলা হলেও কোন কিছুরই তোয়াক্কা করছে তারা। প্রায়সময় রাতের আঁধারে ইউনিটেক্স বন বিভাগের জায়গাটি দখলে নিচ্ছে। কখনও মাটি অপসারণ করছে, কখনও বাঁধ নির্মাণ করছে। আবার কখনও সীমানা পিলার স্থাপন করছে তারা। ২০২১ সালের ২ নভেম্বর ইউটেক্সকে নোটিশ করা হলেও জবাব মেলেনি। পরে ৩ নভেম্বর থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সর্বশেষ গত ৬ জুনের ঘটনায় ৭ জুন সীতাকুণ্ড থানায় ফের অভিযোগ জমা পড়ে ইউনিটেক্সের বিরুদ্ধে। যা একই মাসের ২৫ তারিখ বন আদালতে  মামলা হিসেবে দাখিল করা হয়েছে।