বরগুনা জেলার মোট আয়তন ১,৮৩১.৩১ বর্গ কি.মি। মোট ভোটার ৮ লাখ ১২ হাজার ১'শ ৬৬। জনসংখ্যা ২০২২ সালের জনশুমারি মতে জেলা পরিসংখ্যান ওয়েবসাইটে পাওয়া গেছে ৯ লাখ ২৭ হাজার ৮৯০ জন। ১১ বছরে জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধি দেখাচ্ছে মাত্র ৩৫ হাজার ১০৯ জন। কিন্তু জেলার বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০%। সেই অনুযায়ী জেলার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১২ লাখ ১৯ হাজার ৯১৫ জনে। ২০১১ সালের আদমশুমারি মতে জেলার জনসংখ্যা ছিল ৮ লাখ ৯২ হাজার ৭৮১ জন। বর্তমানে জেলার জনসংখ্যা আর ভোটার সংখ্যার মধ্যে পার্থক্য মাত্র ১ লাখ ১৫ হাজার ৭২৪ জন। যা বাস্তবসম্মত নয়।
আসনভিত্তিক ভোটার, আয়তন ও জনসংখ্যা:
বরগুনা-১ (সদর, আমতলী ও তালতলী) আসনে ভোটার ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৪'শ ৩। আয়তন ১,১৭৫.১৫ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা প্রায় ৭ লাখ ২০ হাজার ৯'শ ৩৭ জন।
বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগী) আসনে ভোটার ৩ লাখ ২৬ হাজার ৭'শ ৬৩। আয়তন ৬৫৬.১৬ বর্গ কি.মি. এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৯'শ ৭৮ জন।
জেলার প্রায় সাড়ে ১২ লাখ জনসংখ্যার জন্য সংসদীয় আসন দুটি থেকে বৃদ্ধি করে তিনটি করা যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী দাবি। বঙ্গোপসাগরের উপকন্ঠে প্রাকৃতিক দুর্যোগবিধৌত জেলা বরগুনার যোগাযোগ ব্যবস্থা, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান ও জীবন জীবিকার উন্নয়নে বরগুনার সাবেক তিনটি সংসদীয় আসনের পুনর্বহালের প্রয়োজনীতা অনস্বীকার্য।
উপজেলাভিত্তিক আয়তন, ভোটার ও জনসংখ্যা:
বরগুনা সদর উপজেলার আয়তন ৪৫৪.৩৯ বর্গ কি.মি। ভোটার ২ লাখ ৩০ হাজার ৫'শ ১৮। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১৪ হাজার ৯৯ জন।
আমতলী উপজেলার আয়তন ৩৮৬.৯৩ বর্গ কি.মি। ভোটার ১ লাখ ৭২ হাজার ৩'শ ৬৯। জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ১৬ হাজার ৫'শ ৬২ জন।
তালতলী উপজেলার আয়তন ৩৩৩.৮৩ বর্গ কি.মি. ভোটার ৮২ হাজার ৫'শ ৩৪ এবং জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২ হাজার ৮৭৬ জন।
পাথরঘাটা উপজেলার আয়তন ৩৮৭.৩৬ বর্গ কি. মি. ভোটার ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭'শ ৩৩ এবং জনসংখ্যা প্রায় ২ লাখ ৬৩ হাজার ৪১ জন।
বামনা উপজেলার আয়তন ১০১.০৫ বর্গ কি.মি; ভোটার ৬৬ হাজার ৪'শ ৪৪ এবং জনসংখ্যা প্রায় ৯৩ হাজার ১০ জন।
বেতাগী উপজেলার আয়তন ১৬৭.৭৫ বর্গ কি. মি; ভোটার ১ লাখ ১২ হাজার ৫'শ ৮৬ এবং জনসংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৪২ হাজার ৩২৭ জন।
বরগুনায় ৩টি আসন পুনর্বহাল হলে:
সদর উপজেলা ও বেতাগী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসনে ভোটার সংখ্যা হবে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৮৬। আয়তন হবে ৬২২.১৪ বর্গ কি.মি এবং জনসংখ্যা হবে সাড়ে ৪ লাখের কাছাকাছি। এখানে রয়েছে ১৭টি ইউনিয়ন ও ২টি পৌরসভা।
পাথরঘাটা উপজেলা ও বামনা উপজেলক নিয়ে বরগুনা-২ আসনে ভোটার সংখ্যা হবে ২ লাখ ১৪ হাজার ১'শ ৭৭। আয়তন হবে ৪৮৮.৪১ বর্গ কি. মি এবং জনসংখ্যা হবে সাড়ে ৩ লাখের বেশি। এখানে রয়েছে ১১টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা।
আমতলী উপজেলা ও তালতলী উপজেলা নিয়ে বরগুনা-৩ আসন হলে ভোটার সংখ্যা হবে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৯'শ ৩টি। আয়তন হবে ৭২০.৭৬ এবং জনসংখ্যা হবে সোয়া ৪ লাখের কাছাকাছি। এখানে রয়েছে ১৪টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা।
২০২৬ সালের শুরুর দিকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হলে জেলায় আরো ৫০ হাজার ভোটার বৃদ্ধি পেতে পারে। জনসংখ্যা হতে পারে সাড়ে ১২ লাখের বেশি।
তিনটি আসন পুনর্বহাল হলে পুনর্বিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা:
বরগুনা জেলায় সংসদীয় তিনটি আসন পুনর্বহাল হলে সবচেয়ে কম ভোটার, কম জনসংখ্যা ও কম আয়তন হবে বরগুনা-২ আসনের। কারণ বরগুনা-২ আসনের চেয়ে ১ আসনের আয়তন বেশি হবে প্রায় ১৩৪ বর্গ কি. মি. এবং ভোটার বেশি হবে ১ লাখ ২৯ হাজার। আর জনসংখ্যার ব্যবধান হবে প্রায় ১ লাখের মত। জনসংখ্যা, ভোটার নাকি এলাকার আয়তনের উপর নির্ভর করে আসন সীমানা নির্ধারণ করা হয় এরকম কোনো নির্দেশনা নেই সংসদীয় আসন সীমানা নির্ধারণ আইনে। উন্নয়ন বাজেটও প্রতিটি আসনের জন্য সমান করা হয়। এতে বেশি ভোটার, বেশি জনসংখ্যা ও বড় আয়তনের সংসদীয় এলাকার মানুষ উন্নয়ন থেকে কম ভোটার, জনসংখ্যা ও আয়তনের তুলনায় পিছিয়ে থাকে। নির্বাচনী এলাকা বড় হলে প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় বেশি হয়। কিন্তু উন্নয়ন বরাদ্দ বেশি হয়না। অথচ বরাদ্দ হওয়া উচিত আসন অথবা জেলাভিত্তিক। যে আসনে জনসংখ্যা বেশি সেই আসনে বরাদ্দ বেশি পাবে। আবার আয়তন যেখানে বেশি রাস্তার উন্নয়ন বরাদ্দ সেখানে বেশি পাবে।
শুধু বরগুনা সদর উপজেলার জনসংখ্যা, আয়তন ও ভোটার সংখ্যা দিয়েই বরগুনা-১ আসনের দাবি তোলা যায়। দেশের বিভিন্ন আসনে এর চেয়ে কম ভোটার নিয়েও আসন রয়েছে। এটি বাস্তবায়ন সম্ভব না হলে সদর উপজেলার সাথে পুরো বেতাগী উপজেলা না নিয়ে বেতাগীর আংশিক এলাকা নিয়ে বরগুনা-১ আসনের প্রস্তাব রাখা যৌক্তিক মনে করছি।
তাই বরগুনা সদর উপজেলা ও বেতাগী উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন (মোকামিয়া, বুড়ামজুমদার, কাজিরাবাদ ও সরিষামুড়ি) নিয়ে বরগুনা-১ আসনের দাবি তোলা যায়। এভাবে হলে ভোটার সংখ্যা হবে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৫৩৭। পুনর্বহালের পরে পুনর্বিন্যাস হলে এতে ভোটার, জনসংখ্যা ও আয়তনও কমে আসবে। প্রার্থীদের নির্বাচনী খরচও তুলনামূলক কম হবে। উন্নয়নের মাত্রাও বৃদ্ধি পাবে।
আবার পাথরঘাটা উপজেলা, বামনা উপজেলা ও বেতাগী উপজেলার বাকি অংশ (বেতাগী পৌরসভা ও ৩টি ইউনিয়ন: বিবিচিনি, বেতাগী সদর ও হোসনাবাদ) নিয়ে বরগুনা-২ আসনের প্রস্তাব রাখা যায়। এতে ভোটার হবে ২ লাখ ৭১ হাজার ৭২৬। এতে ভোটার, আয়তন ও জনসংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে। এতে সুযোগ বাড়বে বরগুনা-১ আসনের উন্নয়নে।
বর্তমানে ৩০০টি সংসদীয় আসনের অন্ততঃ ৪০টি আসন একটি পূর্ণ উপজেলার সাথে আরেকটি উপজেলার আংশিক এলাকা নিয়ে বিন্যস্ত করা আছে। তারমধ্য গোপালগঞ্জ-১ ও ২, নোয়াখালী-১ ও ২, সাতক্ষীরা-৩ ও ৪, খুলনা-৩ ও ৪, নড়াইল-১ ও ২, মাগুরা-১ ও ২, ঝিনাইদহ-২ ও ৪, চুয়াডাঙ্গা-১ ও ২, পাবনা-১ ও ২, সিরাজগঞ্জ-১ ও ২, ঠাকুরগাঁও-২ ও ৩, লক্ষ্মীপুর-২ ও ৩, নারায়ণগঞ্জ-৪ ও ৫, নরসিংদী-১ ও ২, গাজীপুর-৩ ও ৫, মানিকগঞ্জ-২ ও ৩, ঢাকা-২ ও ৩ এবং চট্টগ্রাম-৭, ৮, ১৪ ও ১৫ আসন উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।
যদি এই আসনগুলো বহাল থাকে তাহলে বরগুনা-১ (সদর ও বেতাগী উপজেলার আংশিক) এবং বরগুনা-২ (পাথরঘাটা, বামনা ও বেতাগীর বাকি অংশ) নিয়ে সংসদীয় আসন দুটোর সীমানা নির্ধারণ করা যেতে পারে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন যদি ২০০৮ এর আসনবিন্যাসে ফিরে যায় তাহলে প্রশাসনিক সুবিধার্থে শুধু বরগুনা সদর উপজেলা নিয়ে বরগুনা-১ আসন এবং বর্তমানে বরগুনা-২ আসন যেভাবে আছে সেভাবে রেখে আসন পুনর্বিন্যাসের দাবি রাখা যায়।
উপকূলীয় জেলা হলেও উন্নয়ন থেকে পিছিয়ে বরগুনা জেলা। বর্তমান বরগুনা-১ আসনের মধ্যে জেলা শহর থাকলেও বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি তেমন। বরগুনা সদরের ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার রাস্তাঘাটসহ অন্যান্য অবকাঠামোর তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি বিগত দিনে। জোয়ার ও জ্বলোচ্ছ্বাসে ডুবে যায় জেলাশহরসহ জেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল। প্রতি বছর একাধিক ঘুর্ণিঝরে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয় জেলার মানুষ।
তাই জেলায় তিনটি সংসদীয় আসনের পুনর্বহাল করা একান্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। আসন তিনটি হলে উন্নয়ন বৃদ্ধি পাওয়ার দাবির যৌক্তিকতা রয়েছে।
[তথ্যসূত্র: ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত ৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার তালিকা থেকে, উইকিপিডিয়া এবং ২০১১ সালের আদমশুমারী+জেলার বাৎসরিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.৩০% ধরে পরবর্তী ১৩ বছরের আনুপাতিক হিসাব মোতাবেক]