বর্তমানে পটুয়াখালী -২ আসন বাউফল উপজেলা বিএনপিতে এখন চলছে নেতৃত্ব সংকট। এ কারনে মাঠ পর্যায়ে নেতা কর্মীদের মাঝে বিরাজ করছে হতাশা। অপরদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি বিরাজ করছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর গত ০৭ সেপ্টেম্বর বাউফল পাবলিক মাঠে বিশাল সমাবেশ করেছে দলটি। তবে পাঁচ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর পাল্টে গেছে বাউফল উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গন। এখানে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল, লোবিং- গ্রুপিংয়ে ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। ফলে সংগঠনটির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছেন। স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা রাজনীতির মাঠ দখলে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, হাট-বাজার, টেম্পো ও বাসষ্ট্যান্ড দখল করে অনেকটা বিতর্কের মুখে পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা।অবশ্য সাম্প্রতিককালের শৃংখলা বিরোধী কাজে যতটা বিতর্কীত বিএনপি তার চেয়েও কয়েকগুন বেশী আলোচনা- সমালোচনা হচ্ছে দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিয়ে। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা বিএনপি ত্রি ধারায় বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, দ্বিতীয় গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক এমপি শহীদুল আলম তালুকদার এবং অপরটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক আহমেদ তালুকদার।ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার তার ব্যবসায়ীক কাজে অধিকাংশ সময় ঢাকায় ব্যাস্ত থাকলেও তার পক্ষে উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নেতৃত্বে গণসংযোগসহ সভাসমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সাবেক সংসদ সহিদুল আলম তালুকদার তার সমর্থকদের নিয়ে এবং কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন তার সমর্থকদের নিয়ে প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ ও শোডাউন করে যাচ্ছেন।এছাড়াও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান লিটু,জিয়া গবেষনা পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি আনিচুর রহমান মাঠ পর্যায়ে দলিয় নেতা-কর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়সহ পৃথকভাবে সভা-সমাবেশ করছেন।উল্লেখ্য গত ০৭ নভেম্বর বিপ্লবও সংহতি দিবস ভিন্ন ভিন্ন ভাবে পালন করেন। ফলে একক নেতার অভাবে নেতা কর্মীদের মধ্যে দারণ ভাবে হতাশা বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তৃণমূলের একাধিক নেতা বলেন, অনেক বছর ধরে চলা এই কোন্দলের কারণে দল অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখন আর এই কোন্দল জিইয়ে রাখার সুযোগ নেই। দলকে সুসংগঠিত করতে হলে এই মুহুর্তে ঐক্যর কোনো বিকল্প নেই।কেন্দ্রীয় কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবীদ মিজানুর রহমান লিটু বলেন, ঐক্যের জন্য আমি উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে পৃথক ভাবে সবার সঙ্গে প্রাথমিক বৈঠক করেছি। আশা করছি খুব শিগগিরই কোন্দল নিরসন হবে।উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সামুয়েল আহমেদ লেলিন বলেন, 'কিছু সুবিধাবাদী টাইপের নেতা দলের নেতৃত্বে থাকায় কোন্দল নিরসন হচ্ছে না। ২/৪ জন রাঘববোয়ালকে অব্যাহতি দেওয়া হলে দলকে সুসংগঠিত করা সম্ভব।'এদিকে, শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর উপজেলা জামায়াতে ইসলামী নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্থি আমেজ বিরাজ করছে। গত ০৭ সেপ্টেম্বর বাউফল পাবলিক মাঠে বিশাল সমাবেশ করেছে দলটি। ওই সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় জামায়াত নেতা ও কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এছাড়াও, বিভিন্ন ইউনিয়নে বর্তমানে জামায়াতের সদস্য সংগ্রহ অভিযান চলছে।উপজেলা জামায়াতের আমির মাওলানা রফিকুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামী দুর্নীতি, সন্ত্রাস আর লুটপাটে জড়িতদের প্রশ্রয় দেয় না। জনগণের ভালোবাসা নিয়েই জামায়াতে ইসলামী এগিয়ে যেতে চায়। দীর্ঘ ১৭ বছর রাজনৈতিক ভাবে জুলুম নির্যাতন সহ্য করেও জনগণের পাশে থেকে সেবা সহযোগীতা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। এই মুহুর্তে নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।উপজেলা বিএনপি’র সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, বাউফল বিএনপি'র মধ্যে গ্রুপিংয়ে রয়েছে। গ্রুপিংয়ে কারণে কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন তার বাবা জেলা বিএনপি'র আহবায়ক আব্দুর রশিদ চুন্নুকে দিয়ে মনগড়া অভিযোগ এনে আমাকে দল থেকে অব্যহিত দিয়েছেন। উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার ফারুক তালুকদার জানুয়ারী মাসে বাউফল আসবে। তখন নেতা কর্মীদের মধ্যে আর কোন গ্রুপিং থাকবে নাকেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন বলেন, বাউফল বিএনপি নেতা কর্মীরা সবাই একই সুতায় গাথা। কোন বিভক্তি নেই।