নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব মো. হারুনুর রশিদ খান হত্যা মামলার অন্যতম প্রধান আসামি মহসীন মিয়াকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই থেকে গ্রেপ্তার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (পিবিআই)।

এই চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের প্রায় দুই বছর পর ২০২৫ সালের ২১ মে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের ভিত্তিতে দুবাই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। এরপর বাংলাদেশ পুলিশের প্রতিনিধি দল তাকে দেশে ফিরিয়ে আনে। ২০ জুলাই দুপুরে পিবিআই কার্যালয়ে হাজিরের পর ২১ জুলাই আদালতে উপস্থাপন করা হলে মহসীন মিয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে নিজের সংশ্লিষ্টতা স্বীকার করেন।

২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি সকালে শিবপুরের নিজ বাসভবনে গুলিবিদ্ধ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেলে এবং পরে বিদেশে চিকিৎসা দেওয়া হয়। দীর্ঘ চিকিৎসার পর ৩১ মে, ২০২৩ তারিখে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে মারা যান তিনি।

ঘটনার পরদিন নিহতের ছেলে আমানুর রশিদ খান শিবপুর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-১৭)। প্রাথমিক তদন্তে উঠে আসে, এটি ছিল একটি সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা গুলি করে হত্যার পর সীমান্ত পথে দেশত্যাগ করে।

পিবিআই-এর তদন্তে জানা যায়, হত্যার ঠিক আগের দিন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে আসামি আরিফ সরকার বিদেশ থেকে ভিকটিমকে ফোন করে জানান, তাঁর পক্ষে মহসীন মিয়া মসজিদের অনুদানের টাকা নিয়ে আসবেন। ভিকটিম তাকে আসতে বলেন।

পরদিন ভোরে মহসীন মিয়া দু’জন সশস্ত্র সহযোগীসহ বাড়িতে প্রবেশ করে। ড্রয়িংরুমে কথাবার্তার এক পর্যায়ে হঠাৎ গুলি করে পালিয়ে যায় তারা। ঘটনাস্থল থেকে পালাতে একটি মোটরসাইকেল ও একটি প্রাইভেটকার ব্যবহার করা হয়। তদন্তে জানা যায়, হুমায়ুন নামে এক সহযোগী আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়ে পালাতে সহায়তা করে।

ঘটনার পর পরই মহসীন মিয়া, শুটার ইরান মোল্লা, মোবারক হোসেন এবং পরিকল্পনাকারী আরিফ সরকার দেশ ত্যাগ করে দুবাইয়ে আশ্রয় নেয়। পিবিআই নরসিংদী জেলা পুলিশের সহায়তায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড নোটিশ জারি করে। দুবাই পুলিশ রেড নোটিশের ভিত্তিতে মহসীন মিয়াকে গ্রেফতার করে।

নরসিংদী জেলা পিবিআই ইউনিট ইনচার্জ, অতিরিক্ত ডিআইজি এস.এম মোস্তাইন হোসেন বিপিএম (বার) জানান: “বহুমুখী প্রচেষ্টা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় আমরা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম আসামি মহসীন মিয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনতে পেরেছি। তিনি আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন। মামলায় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় আমাদের কাজ অব্যাহত রয়েছে।”

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) মন্তোষ চন্দ্র দাস পিবিআই নরসিংদীর তত্ত্বাবধানে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছেন।

একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার হত্যার বিচার প্রতিষ্ঠা এখন সময়ের দাবি। পিবিআই জানিয়েছে, মামলার প্রতিটি দিক গভীরভাবে তদন্ত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।