ভাঙ্গায় অবরোধ অব্যাহতঃ জনতার আন্দোলনে সরকারি স্হাপনা রক্ষার্থে প্রশাসনের পাহাড়া।
ভাঙ্গা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন আলগি ও হামিরদিকে ভাঙ্গার মানচিত্রে পূর্নবহাল করার আন্দোলনের ৪র্থ দপা দাবির মধ্যে গতকূল শেষে টানা তিন দিনের সকাল সন্ধ্যা সড়ক ও রেল অবরোধের প্রথম দিন। আগামীকাল হবে ২য় দিন। আগামী পরশু হবে তৃতীয় দিন। 
তবে টানা এই দিনেও ভাঙ্গাবাসীর আন্দোলন শেঢ হবে কিনা তার কোন নিশ্চয়গতা নেই। 
গতকালের অবরোধের দেখাগেছে উল্টো গনেশ চলে,এমন প্রবাদ বাক্যের মত।

উল্টো গনেশ কি?
------------------------
ভাঙ্গার জনতার আন্দোলনকারীদের মধ্যে মোঃ রফিক উদ্দিন বেপারী ইনকিলাব কে বলেন,ঠাকুর ঘরে কেরে আমি কলা খাই না। আর পাশে আছে উল্টো গনেশ।তিনি বিষয়টিকে ব্যাখা দিয়ে বলেন,প্রশাসনের লোকেরাও আমাদের ন্যায্য দাবির সাথে একাত্ব ঘোষণা করার মত দৃশ্যমান উপলব্ধি হচ্ছে না। যেমন আমরা আন্দোলন করি এ নিয়ে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই। তারা আমাদেট আন্দোলনে বাঁধাও দিচ্ছে  না। মারমুখী অবস্হানও নিচ্ছেন না। 
উল্টো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকের কেবল মাত্র তাদের সরকারি অফিস আদালতসহ সরকারি সকল স্হাপন পাহারা দিচ্ছেন। কিন্ত সরকার আমাদের নিয়ে কোন চিন্তা করছেন না। গতকালও ভাঙ্গার রাজপথে তথা প্রধান প্রধান সড়কে মহাসড়কে আন্দোলন কারীরা 
টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ কর্মসূচী পালন করছেন আন্দোলন। 

সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্বহালের দাবিতে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় তৃতীয় দফায়  আন্দোলন চলছে অবরোধ কর্মসূচি। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুটি মহাসড়ক ও রেলপথের অন্তত ১০টি এলাকায় অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধরা। এদিকে রাতেই এই আন্দোলনের প্রধান দুই সমন্বয়ককের একজন  আটক করেছে ফরিদপুর  গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গতকাল  রোববার সকাল ৬টা থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি শুরু করেছেন বিক্ষুব্ধরা। সকাল ১০টায় পুখুরিয়াসহ কয়েকটি এলাকায় সরেজমিন পরিদর্শন কালে দেখা যায়, স্থানীয়রা সড়কে গাছের গুঁড়ি, টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করছেন। এ ছাড়া সকাল ৯টায় রাজবাড়ী-ফরিদপুর-ঢাকা রেলপথের ভাঙ্গা উপজেলার হামিরদি রেলক্রসিংয়ে নকশিকাঁথা ট্রেন আটকিয়ে দেন  বিক্ষুব্ধরা। এ সময় যাত্রীদেরও নামিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করেন একাধিক যাত্রী। তবে কোন যাত্রীর সাথে কেউ কোন খারাপ আচারন করেনি বলে যাত্রীরা ইনকিলাব কে জানান।

কথা হয় ঢাকা মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার বন্যা আক্তারের সাথে তিনি ঢাকার  বাসায় পেঁয়াজ নিয়ে ট্রেনে যাচ্ছিলেন ঢাকায় তাকে ট্রেন থেকে নামিয়ে দেয়া হয়।
 কথা হয় সালথা উপজেলার রসুলপুর গ্রামের মকিম মাতুব্বর (২২) নামে এক ব্যক্তির দেখাগেছে তিনি  পুখুরিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায়  মাথায় পেঁয়াজের বস্তা নিয়ে হাঁটছেন। তিনি আক্ষেপ ইনকিলাব কে  করে বলেন, `বাস  পাই মাই  ট্রেনে করে ঢাকায় মেয়ের  বাসায় যাবার গেছিলাম। ওই জায়গ্যা (হামিরদি রেলক্রসিং) যাওয়ার পর রাস্তার ওপর দেহি আগুন জ্বলতেছে, অনেক মানুষ ট্রেনের সামনে দাড়ায় পড়ছে। তহন ট্রেন দাড়ায় পড়ে, আমাদের নামায় দিছে।’কিন্ত কেউ কোন খারাপ আচারন করেনি।

 কথা হয়, ভাঙ্গা রেলস্টেশন কর্মকর্তা সাকিবুর রহমানের সাথে তিনি ইনকিলাব কে বলেন, `রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাচ্ছিল নকশিকাঁথা। ট্রেনটি আটকে দেওয়ায় ভাঙ্গা জংশনে ঢাকা থেকে আসা রাজবাড়ীগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস বন্ধ হয়ে আছে। এ ছাড়া খুলনার ট্রেনটি (জাহানাবাদ এক্সপ্রেস) অবরোধ করার আগেই ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছে।’
পুখুরিয়া রেলস্টেশন থেকে 
হেঁটে আসতে দেখা যায়  হোসনেয়ারা  নামের আরেক নারীকে । তাঁর বাড়ি রংপুরে, মাদারীপুরে আত্মীয়ের বাসায় গিয়েছিলেন বলে জানান। তিনি বলেন, ‘আমি রংপুরে যাব, ছয় কিলোমিটার পথ হেঁটে আসলাম, কোনো গাড়ি পেলাম না। মানুষরে কষ্ট দিয়ে উনাদের কিসের আন্দোলন আমি জানি না।’ এভাবেই দুর্ভোগের কথা জানিয়ে আক্ষেপ জানান অনেকে। তবে সরকার কেন এদের আবদার মানছেন না।

এর আগে গতকাল শনিবার বিকেলে উপজেলার আলগী ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় চত্বরে ‘আলগী ও হামিরদি  ইউনিয়ন এবং ভাঙ্গা উপজেলার সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তিনদিনের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দেন আলগী ইউপি চেয়ারম্যান ম ম সিদ্দিক মিয়া। এরপরে রাতেই নিজ বাসা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা তাঁকে আটক করে। 

তিনি এই আন্দোলনের সর্বদলীয় ঐক্য পরিষদের সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। 

 আটকের বিষয়টি  নিশ্চিত করে ভাঙ্গা  থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফ হোসেন। তিনি জানান, রাতে ডিবি পুলিশ আটক করে ফরিদপুরে নিয়ে গিয়েছে। থানায় এখনো হস্তান্তর করা হয়নি।
প্রসঙ্গতঃ 

৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ স্বাক্ষরিত ৪৬টি সংসদীয় আসনে পরিবর্তন এনে গেজেট প্রকাশ করেন। গেজেট অনুযায়ী  ফরিদপুর-৪-এর অন্তর্গত ভাঙ্গা উপজেলার আলগী ও হামিরদি ইউনিয়ন পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর-২ (সালথা-নগরকান্দা) সংসদীয় আসনের  সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকেই মূলত আন্দোলন চলছে।

ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান  বলেন, ‘মানুষের যাতে ভোগান্তি না হয় এবং যান চলাচল স্বাভাবিককরণে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। আমরা বিক্ষুব্ধদের সাথে কথা বলে যাচ্ছি।’

অপরদিকে, আন্দোলনের বিষয় ভাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজ কার্য্যালয় গতকাল বিকাল চারটা স্হানীয় সংবাদকর্মীদের ডেকে একটি প্রেসব্রিফিং করেন। সেখানে ইউএনও সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য বলেন ভাঙ্গার জনগন আন্দোলন করছেন। তারা যেন আইনশৃঙ্খলার  অবনতি না ঘটায়। সকলকে শান্ত থাকার আহবান জানান তিনি। কেউ কোন জান মালের ক্ষতি সাধন যেন করে এই বিষয় সাংবাদিকদের অবগত করেন।

পাশাপাশি তিনি ভাঙ্গার আন্দোলন করারীদের উদ্ধার বলেন,আপনার সকল সূযোগ সুবিধা তথা নাগরিক অধিকার সবই ভাঙ্গা উপজেলা থেকে ভোগ করবেন। শুধু মাত্র জাতীয় নির্বাচনে সালথায় ভোট দিবেন। তা আন্দোলনকারীরা কোন ভাবেই মেনে নিচ্ছেন। তাদের পূর্ব ঘোষণা বলবৎ আছে। ভাঙ্গাবাসী কোন হুঙ্কার ভয়ে  আটকে মামলাশ তারা আন্দোলন থেকে পিছিয়ে আসবেন না। এমন ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। 
উল্লেখ্য গতকাল থেকে টানা দিনের  সকাল সন্ধ্যা আন্দোলন চলমান থাকলেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুরোধ মাত্র ৩০ মিনিট আগে অবরোধ তুলে নেন আন্দোলনকারীরা। আগামীকাল ও আন্দোলন তথা অবরোধ চলমান থাকবে।