সম্প্রতি “আমার দেশ” পত্রিকায় “শতকোটির সরকারি জমি সাড়ে পাঁচ লাখে বিক্রি” শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদটি নিয়ে জেলা প্রশাসককে জড়িয়ে মিথ্যাচার করায় জেলার বিভিন্ন পেশাশ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের আলোচনা সমালোচনা চলছে। তাদের মতে- যে কোন জমি দলিল সম্পাদনের আগে নামজারি ও খাজনা পরিশোধ বাধ্যতামূলক। অথচ জমিটা কি এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে হলো নাকি এসব প্রক্রিয়া না করেই হলো সেটি অনুসন্ধান করা জরুরি ছিলো। এসব বিষয় না দেখে একজন বললো আর সংবাদ ছাপানো হলো এটাকে হলুদ সাংবাদিকতা বলেও মন্তব্য করছে তারা।

তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করে সংবাদটিকে ভিত্তিহীন আর হলুদ সাংবাদিকতা থেকে সচেতন থাকারও আহ্বান জানিয়েছেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলম। 

শতকোটির সরকারি জমি সাড়ে পাঁচ লাখে বিক্রি” বিষয়ে  শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ সম্পর্কে জেলা প্রশাসক তার দেওয়া ব্যাখ্যা তিনি বলেন, সংবাদটি নতুন কিছু নয়; এর আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি যমুনা টেলিভিশন এই বিষয়ে সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে।

জেলা প্রশাসকের দাবি, সংবাদে উপস্থাপিত বেশ কিছু তথ্য “মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর” এবং প্রতিবেদকের উদ্দেশ্য সংবাদ পরিবেশন না হয়ে “ব্যক্তিগত আক্রমণ ও দোষারোপ” বলেও আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

সংবাদে উল্লেখিত প্রধান অভিযোগসমূহ এবং জেলা প্রশাসকের জবাব:
১. জমি সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে
প্রকৃতপক্ষে, উক্ত জমি ময়মনসিংহ শহরের মানসিংহ টাউন মৌজার বিআরএস ১/১ খতিয়ানের ১৫৬৮৫ নম্বর দাগে অবস্থিত। জমিটির পরিমাণ ০.৮৪৬০ একর, এবং এটি জেলা প্রশাসকের নামে রেকর্ডভুক্ত। জমিটি সরকারি মালিকানাধীন হওয়া সত্ত্বেও একাধিক ভূমিদস্যু দীর্ঘদিন ধরে এটি দখলের অপচেষ্টা করে আসছে।

দুদফায় জমির দখল নেওয়ার প্রচেষ্টা চলে। প্রথমবার অভিযুক্ত ব্যক্তি রবীন্দ্র মোহন দাস দেওয়ানী আদালতে মামলা করেন, যা জেলা প্রশাসনের তড়িৎ পদক্ষেপে আদালত খারিজ করে দেন। পরবর্তীতে একই পক্ষ নিজেদের মধ্যে ভুয়া দাতা ও গ্রহীতা সাজিয়ে বাটোয়ারা মামলা দায়ের করে। আদালত তখন মৌজা রেইট অনুসারে সাড়ে পাঁচ লাখ টাকায় দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, “আমি অন্তর্যামী নই। কেউ নিজের নামে ভুয়া দাবি করে মামলা করলে সেটি আগেভাগে জানার কোনো উপায় প্রশাসনের থাকে না।”

২. সময়মতো আইনগত ও প্রশাসনিক পদক্ষেপ না নেওয়া...
দলিল সম্পাদনের খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জেলা প্রশাসন তদন্ত করে এবং জালিয়াতির প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে দলিল বাতিলের উদ্যোগ নেওয়া হয় এবং একটি সানিমোকদ্দমা দায়ের করে দলিল কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়, যারা সরেজমিন তদন্ত করে কোনো গাফিলতির প্রমাণ না পেয়ে জেলা প্রশাসনের তৎপরতায় সন্তোষ প্রকাশ করে।

৩. জেলা প্রশাসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও রহস্যজনক নীরবতা..
এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে জেলা প্রশাসক বলেন, শুরু থেকেই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয়েছে এবং আইনি ও প্রশাসনিক উভয় দিক থেকেই প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ভুয়া দলিল সম্পাদনকারীদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিকার আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।

৪. শাঁখারীপট্টি বিদ্যালয়ে ১২ বছর ধরে নোটিশ না পাওয়া..
জেলা প্রশাসক স্পষ্ট করেন, শাঁখারীপট্টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিটি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে নথিভুক্ত। এটি আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে এবং সরকার পক্ষে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় পরাজয়ের পর আপিল করা হয়েছে এবং বর্তমানে উচ্চ আদালতে রিট বিচারাধীন রয়েছে।

সাংবাদিকতার দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন:-
জেলা প্রশাসক মনে করেন, প্রতিবেদক যদি অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার নীতি অনুসরণ করতেন, তাহলে জানতে পারতেন জমি দলিল সম্পাদনের আগে নামজারি ও খাজনা পরিশোধ বাধ্যতামূলক। অথচ এই প্রক্রিয়া না করেই কীভাবে দলিল সম্পাদিত হলো, সেটিই প্রকৃত অনুসন্ধানের বিষয় ছিল।

এসময় তিনি সতর্ক বার্তা হিসাবে ময়মনসিংহবাসীসহ সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করেছেন, কোনো সংবাদ প্রকাশিত হলে তা যাচাই-বাছাই করে, সত্যতা নিরূপণ করে বিশ্বাস করতে। একইসাথে তিনি “হলুদ সাংবাদিকতা” থেকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান।

 তিনি বলেন, সংবাদটি নতুন কিছু নয়; এর আগেও বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকি যমুনা টেলিভিশন এই বিষয়ে সাক্ষাৎকারও গ্রহণ করেছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে তদন্তও সম্পন্ন হয়েছে।