আদালতের রায়ের আলোকে এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মেলার পর গভর্নিং বডিকে তার বিষয়ে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় শিক্ষাแวดวงে স্বস্তি ফিরে এসেছে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বিরুদ্ধে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো বলে মনে করছেন অনেকে।
ঘটনার সূত্রপাত হয় মূলত রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে। অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম জানান, 'আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলাম। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও আমি ন্যায়বিচার পেয়েছি।'
জানা যায়, অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম বাঁশখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর বিধি অনুযায়ী মাদ্রাসার গভর্নিং বডির কাছে বিনা বেতনে ছুটির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু তৎকালীন গভর্নিং বডি ছুটি মঞ্জুর না করে উল্টো তাকে চাকরিচ্যুত করে। এর বিরুদ্ধে তিনি আইনি লড়াই শুরু করেন।
এই ಪ್ರಕರಣটি আলোড়ন সৃষ্টি করে যখন আদালতের একটি রায় সামনে আসে। হাইকোর্টের রিট পিটিশন নং-৩৬৫৭/২০১৫ এর রায়ে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে ৬০ দিনের বেশি সাময়িক বরখাস্ত রাখা হলে তিনি পূর্ণ বেতন-ভাতা পাওয়ার অধিকারী হবেন। এই রায়টি সারা দেশের শিক্ষক-কর্মচারীদের জন্য একটি সুরক্ষা কবচ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যারা প্রায়শই ম্যানেজিং কমিটির রোষানলে পড়ে দীর্ঘ সময় ধরে সাময়িক বরখাস্তের শিকার হন এবং মানবেতর জীবনযাপন করতে বাধ্য হন।
অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের ক্ষেত্রেও এই রায়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চাকরিচ্যুতির পর তিনি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন এবং তাকে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল।
তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায়, মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তর সম্প্রতি বাঁশখালী হামেদিয়া ফাজিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতিকে “বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের” জন্য নির্দেশ দিয়েছে। এই নির্দেশের ফলে অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের স্বপদে পুনর্বহালের পথ সুগম হলো।
দীর্ঘ ১১ বছর পর ন্যায়বিচার পেয়ে আবেগাপ্লুত অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলাম বলেন, 'এই দীর্ঘ সময়ে আমি ও আমার পরিবার অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করেছি। কিন্তু আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম এবং আমার বিশ্বাস ছিল একদিন সত্যের জয় হবেই। আমি মহামান্য আদালত এবং মাদ্রাসা শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি কৃতজ্ঞ।'
এই ঘটনাটি প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বা ব্যক্তিগত আক্রোশে কাউকে তার ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হলেও, দেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থা শেষ পর্যন্ত সত্য ও ন্যায়ের পক্ষেই রায় দেয়। অধ্যক্ষ জহিরুল ইসলামের এই বিজয়কে শিক্ষকরা তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে দেখছেন।