রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করে আগুন দিয়ে পোড়ানোর ঘটনায় পেট্রোল ছিটানো ব্যক্তি নজরুল ইসলাম নজির (৩৩) কে গ্রেপ্তার করেছে। তিনি গোয়ালন্দ উপজেলার উজানচর ইউনিয়নের নাসের মাতুব্বরপাড়ার আকবর শেখের ছেলে।


রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা থেকে গোয়ালন্দ ঘাট থানা পুলিশ ও জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করেছে। বিকেলে তাকে রাজবাড়ী আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ পর্যন্ত পুলিশ দু’টি মামলায় ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। ৭জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গত সোমবার রাতে নুরাল পাগলের ভক্ত নিহত রাসেল মোল্লাকে হত্যা, অগ্নিসংযোগ, লাশ পোড়ানো, ক্ষতিসাধন, চুরি, জখমের অভিযোগে নিহতের বাবা আজাদ মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৩৫০০-৪০০০ জনকে আসামী করে গোয়ালন্দ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এর আগে গত শুক্রবার রাতে গোয়ালন্দ ঘাট থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সেলিম মোল্লা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা সাড়ে তিন হাজার জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।

রাজবাড়ীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ শরীফ আল রাজীব বলেন, নিহত রাসেলের হত্যা মামলায় নজরুল ইসলাম নজিরকে গ্রেপ্তার হয়েছে। এরমধ্যে অপু, বিল্লু ও সোহান সরদার, অভি মন্ডল রঞ্জু ও মাওলানা আব্দুল লতিফ, মাওলানা আবু সাঈদ, মোঃ রাসেল শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শুক্রবার জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদি জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলার দরবার শরীফে। পাল্টা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। সংঘর্ষে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হন। পরে নুরাল পাগলের দরবার শরীফে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। নিহত হয় নুরাল পাগলের ভক্ত রাসেল মোল্যা।

স্থানীয়রা বলেন, ২৩ আগস্ট মারা যান নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। এরপর তার ভক্তরা দরবারের ভেতরে তাকে কবর দেন এবং কবরের উপরের ১০-১২ উঁচু একটি স্থাপনা নির্মাণ করা হয় যা সৌদি আরবের মক্কায় অবস্থিত মুসলমানদের কেবলা কাবা শরীফে মতো দেখতে। তাই এ নিয়ে আপত্তি জানাচ্ছিলেন স্থানীয় ধর্মপ্রাণ মুসলমানগণ।

এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে সেখানে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর ইমান আক্বিদা রক্ষা কমিটির ব্যানারে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা দরবারে হামলা চালান এবং দরবারের ভেতরে থাকা নুরাল পাগলের কবর ভেঙে দেন। সেই সঙ্গে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে তা পুড়িয়েও দেন।