বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার সকল ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার মানুষ।

বরিশাল নগরীর কেন্দ্রীয় নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূর পাল্লার সকল ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার মানুষ। 

শনিবার (৪ঠা মে) দুপুর ১২ টার দিকে হর্ন বাজানো কে কেন্দ্র করে বাসচালক ও হেলপারকে মারধর করার ঘটনায় দফায় দফায় সংঘর্ষের পর এখন পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে, বলে জানিয়েছেন মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতিগন।  

বহিরাগতদের এ হামলায় দুই বাস শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় দফায় দফায় বিক্ষোভ করেছে কেন্দ্রীয় নতুনল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এর শ্রমিকরা। একপর্যায়ে তারা সড়কে বাস রেখে অবরোধ করে। এ সময় বাস চলাচল সম্পুর্ন ভাবে বন্ধ হয়ে গেলে ভোগান্তিতে পড়ে শত শত যাত্রীরা। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২ টার দিকে মাদারীপুর থেকে সৌখিন পরিবহনের একটি বাস নতুল্লাবাদ টার্মিনালে প্রবেশ করে। এ সময় বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ানের অনুসারী নুরুল ইসলাম বাবাইর মোটরসাইকেল সামনে থাকায় হর্ন দেয় চালক সোহাগ ওরফে (শাকিল)।

এতে ক্ষুব্ধ হন বাবাই। তিনি মোটরসাইকেল রেখে বাসচালক সোহাগ কে এলোপাথাড়ি মারধর শুরু করেন। এ দৃশ্য দেখে হেলপার (সৌরভ) ছুটে এলে তাকেও মারধর করেন। 

এসময় ড্রাইভার রাস্তার উপর অসুস্থ হয়ে পড়লে, শ্রমিকরা তাকে নিয়ে শের-ই-বাংলা হাসপাতালে যাওয়ার সময় নগরীর চৌমাথা এলাকায় বাবাইয়ের গ্রুপ তাদের ওপর হামলা চালিয়ে ড্রাইভার কে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণের এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। তারা বাস টার্মিনালে অবস্হিত বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের কার্যালয়ে হামলা চালায়। পরে বাস টার্মিনালের বিভিন্ন কাউন্টারে ও হামলা চালিয়ে ব্যপক ভাঙচুর করে। 

ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন বাস-মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয় ঢুকে সেখানে বহিরাগত এক শ্রমিক রাব্বীকে সন্দেহের বশে মারধর করে। এরপর পুলিশ এসে শ্রমিকদের শান্ত করে কার্যালয় থেকে বের করে দেয়। 

এসময় ক্ষুদ্ধ শ্রমিকরা বরিশাল সিটি মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত ও বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ওয়াশিম দেওয়ানের বেশ কিছু ব্যানার, ফেস্টুন ভাঙচুর করে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। পরে তারা সড়ক অবরোধ করে বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়। 

বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী কবির সাংবাদিকদের বলেন, সন্ধ্যার দিকে ঘটনা সমাধান করে একবার বাস চলাচলের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এ সময় আবার বাস ও থ্রি হুইলার শ্রমিকদের মধ্যে হঠাৎ ঝামেলা হয়। এ কারণে এখন (রাত ১২ টা) পর্যন্ত বাস চলাচল শুরু হয়নি বলে জানান তিনি। 

বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি অসীম দেওয়ান সাংবাদিকদের বলেন, বাস চালুর চেষ্টা চলছে। শ্রমিকদের একটি গ্রুপের প্ররোচনায় এই ঝামেলা সৃষ্টি হয়েছে। তাই এখনো বাস চলাচল শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস চলাচল শুরুর চেষ্টা চলছে।

বরিশালের রাজনৈতিক ও সচেতন মহল এ ঘটনার পিছনে অন্য কোন ঘটনা আছে বলে মনে করেন। সাবেক মেয়র সাদেক আব্দুল্লাহ র সময় আওয়ামী লীগের সুবিধা বঞ্চিত বেশ কিছু নেতা নতুন মেয়র ক্ষমতায় আসার পর ও এখনো বঞ্চিতই রয়ে গেছেন। মইন তুষার, ভিপি জসিম এবং এমন আরো ডজন খানিক শীর্ষ স্হানীয় নেতা আছেন এই সুবিধা বঞ্চিতদের তালিকায় । অথচ একচ্ছত্র আধিপত্য চলে আসে ওয়াশিম দেওয়ানের হাতে। 

নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের এই ঘটনার পেছনে সুবিধা বঞ্চিত নেতাদের ইশারা রয়েছে বলে সন্দেহ করছেন রাজনৈতিক ও সচেতন মহল। আর যদি তাই হয়, তবে ওয়াশিম দেওয়ান শিঘ্রই হারাতে পারেন এই নতুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের একচ্ছত্র আধিপত্য।।