বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকার কেন্দ্র করে উপকূলীয় অঞ্চলের জেলেরা জীবন নির্বাহ করে আসছে যুগ যুগ ধরে। প্রান্তিক জনপদের জেলেরা ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাব এবং সমুদ্রে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের সংসারে চলছে অভাব অনটন। মাছের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কঠোর বিধিনিষেধ এবং শাস্তির বিধান রেখে সমুদ্র সীমানায় গত ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিনের অবরোধ জারি করা হয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন জেলে ও বিপণন পেশায় নিয়োজিত উপকূলের পাথরঘাটার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার । পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন জেলেরা। খেয়ে না খেয়ে দিন পার করছে। কেউ দিন মজুরি দিয়ে কোনও রকমে বেঁচে আছে। কেউ আবার ঋণের বেড়াজালে জড়িয়ে পড়ছে। এক কথায় চরম হতাশায় ভুগছেন জেলে পরিবারের সদস্যরা।
পাথরঘাটায় জেলের সংখ্যা প্রায় ২৫ হাজার। এরমধ্যে নিবন্ধিত জেলে রয়েছে ১১ হাজার ৪১১ জন। নিবন্ধিত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে প্রথম ধাপে ৮৫ কেজি করে চাল দেওয়া হলেও অনিবন্ধিত জেলেরা পাচ্ছেন না সরকারি কোনো সহায়তা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন জেলেদের আয়ের পথ না থাকায় তারা বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছন সংশ্লিষ্টরা। পাথরঘাটা মৎস্যবন্দর (বিএফডিসি) ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, জেলেরা ট্রলার ঘাটে বেঁধে রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অপরদিকে জেলে পল্লীতে ঘুরে দেখা যায়, সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকায় তাদের আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ জেলে পরিবারই ধার-দেনা করে চলছে। সরকারি কোনো সহায়তা না পাওয়ায় চরম হতাশার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে তাদের। অন্য দিকে মাছ ধরা বন্ধ থাকায় ট্রলার মালিকরাও জেলেদের দাদন দিয়ে পড়েছেন অনিশ্চয়তায়। নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারাও।
৪৫ বছরের জেলে পেশায় নিয়োজিত মো. আ: মজিদ মিয়া জানান, ট্রলার ও জাল মেরামত করে বসে রয়েছেন তিনি। মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। ছেলে মেয়ের পরীক্ষা আসছে টাকা পয়সা কোথা থেকে জোগাড় করব সেই চিন্তায় ঘুম আসে না। এনজিওর ঋণ আছে, সেটা যে কিভাবে দিব বলতে পারছি না। বাংলাদেশ মৎস্যজীবী বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, ৬৫ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা এটা মূলত ইলিশের জন্য কোন উপকারে আসেনা। তার পরেও বাংলাদেশের জেলেরা আইন মেনে মাছ শিকার বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশের জলসীমায় এসে মাছ শিকার করে নিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সাথে মিল রেখে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার দাবি করেন তিনি। এ ছাড়া জেলেদের জন্য সরকার থেকে বরাদ্দকৃত চালে তাদের সংসার চালাতে কষ্ট হয়। জেলেদের চালের পাশাপাশি কিছু আর্থিক অনুদান দিলে হয়তো জেলেরা খেয়ে বাঁচতে পারতো ।
পাথরঘাটা উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়ন্ত কুমার অপু বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধে আইন বাস্তবায়নে মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, পুলিশ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় মৎস্য দপ্তরের উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। নিষেধাজ্ঞা চলাকালে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। এতে পাথরঘাটার ১১ হাজার ৪১১ জন জেলেকে ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।