গ্রেপ্তারকৃত আরজু চরফলকন ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ির অজি উল্যাহর মেয়ে। এর আগে এলাকাবাসী মুমূর্ষ অবস্থায় ওই বাড়ির পরিত্যক্ত বাগান থেকে স্কুল ছাত্রী তাহমিনা আক্তার সাদিয়া(৯)কে উদ্ধার করে কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন। এ ঘটনায় রোববার সকালে সাদিয়ার মা নারগিস বেগম বাদি হয়ে কমলনগর থানায় মামলা করেন। সাদিয়া মধ্য চরফলকন সরকারি প্রাইমারী স্কুলে ২য় শ্রেণির ছাত্রী।
পুলিশ ও মামলা সূত্রে জানা যায়, চরফলকন ইউনিয়নের হাওলাদার বাড়ির নারগিসের মেয়ে ২য় শ্রেণির ছাত্রী সাদিয়া কানে এক আনা ওজনের স্বর্ণের দুল ব্যবহার করছে । একই বাড়ির অজি উল্লাহর মেয়ে আরজু আক্তার ওই স্বর্ণের লোভে পড়ে । লোভ সামলাতে না পেরে শনিবার বেলা ৩ টার দিকে আরজু সাদিয়াকে খেলাধুলা করার কথা বলে ফুসলিয়ে তাদের ঘর থেকে নিয়ে যায় । পরবর্তীতে আরজু সাদিয়াকে অটোরিক্সা করে মেঘনা নদীর পাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরায়। এরপর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে করুণানগর বাজার হয়ে ফজুমিয়ারহাট বাজারের পশ্চিমে কিল্লার রাস্তার পাশে জোরপূর্বক সাদিয়ার কানের দুল খুলে নেয়। তখন সাদিয়া কান্নাকাটি করলে আরজু তাকে চড়-থাপ্পর মারে। সেখান থেকে রিক্সা করে চর লরেঞ্চ বাজারে গিয়ে একটি জুয়েলারী দোকানে ওই স্বর্ণের দুল ৭ হাজার ৫শ' ৫০টাকায় বিক্রি করে দেয় আরজু । এতে স্বর্ণের দুলের জন্য মেয়ের কান্নাকাটি বন্ধ না হলে আরজু শিশু সাদিয়াকে নিয়ে এসে তাদের বাগানের পরিত্যক্ত স্থানে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ইট দিয়ে তার মাথায় আঘাত করে।
এক পর্যায়ে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে সাদিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এতে মৃত্যু নিশ্চিত ভেবে আরজু তার ঘরে চলে আসে। কিছুক্ষণ পর মেয়ের জ্ঞান ফিরলে বিদ্যুতের আলো দেখে সাদিয়া পাশ্ববর্তী হাবিব উল্লাহ পাজাল বাড়িতে গিয়ে উঠে। এর আগে সাদিয়ার মা নারগিস বেগম তার মেয়েকে না পেয়ে পুরো এলাকা খুঁজে বেড়ায়। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ওই শিশু মেয়েকে দেখে বাড়ির লোকজন চিনতে পেরে দ্রুত কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করেন।
পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাদিয়াক লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ঘটনাটি শনিবার রাত সাড়ে আটটার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে অভিযুক্ত আরজুকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান দেয়। পরে রোববার ভোরে রামগতির বালুরচর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
কমলনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মূলত স্বর্ণের জন্য শিশু সাদিয়াকে আঘাত করে অভিযুক্ত আরজু বেগম। মৃত্যু নিশ্চিত মনে করে হাত বেধে যে স্থানে ফেলে এসেছে তাতে শিশুটিকে বাঁচার কথা নয়,শিশুটি অলৌকিকেভাবে বেঁচে গেছে। এ ঘটনায় আমরা মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এর সাথে আর কেউ জড়িত আছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।