নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ১৯তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত রিসার্চ ফেয়ার ও একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ প্রদান অনুষ্ঠানে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেছেন, “ফ্যাসিস্ট সরকার গত ১৭ বছরে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। নাগরিকদের অধিকারহীন জাতিতে পরিণত করতে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছিল তাদের প্রধান টার্গেট।”

সোমবার (২৩ জুন) নোবিপ্রবির বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ মোহাম্মদ রুহুল আমিন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, “গুম-খুনের রাজনীতির মধ্য দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। অপরাজনীতির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। নবীন শিক্ষার্থীদের ‘গণরুম’ ও ‘গেস্ট রুম’-এর নামে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। প্রটোকল শেখানোর নামে তাদের রাজনৈতিক হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছে।”

তিনি বলেন, “আমাদের তরুণ সমাজ অন্যায় ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে এবং ফ্যাসিস্টদের পতন ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশের পথ প্রশস্ত করেছে।”

শিক্ষকদের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন তুলে ড. আবরার বলেন, “শিক্ষকদের ক্লাসবিমুখতা শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের আরেকটি বড় কারণ। অনেকে ক্লাস বাদ দিয়ে রাজনৈতিক আড্ডায় সময় কাটাতেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য ক্ষতিকর প্রভাব ফেলেছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেক্ষাপটে তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের চৌহদ্দির ভেতর রাজনীতি না আনার আহ্বান জানাচ্ছি। তবে যারা রাজনৈতিক অঙ্গনে যুক্ত হতে চান, তাদের উচিত হবে শিক্ষকতা ছেড়ে পুরোপুরি রাজনীতিতে যোগ দেওয়া।”

শিক্ষাব্যবস্থার ভবিষ্যৎ পুনর্গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, “শিক্ষা হলো বৈষম্য দূর করার সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। আমাদের সম্পদের ঘাটতি থাকলেও ইচ্ছাশক্তির ঘাটতি নেই। গবেষণায় মনোযোগ বাড়াতে হবে। চিন্তার বিপ্লব ঘটাতে হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।”

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে আয়োজনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজুয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ (মুরাদ), নোয়াখালী পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের কমান্ড্যান্ট ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান, জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ এবং জেলা পুলিশ সুপার মো. আব্দুল্লাহ আল ফারুক।

অনুষ্ঠানে শিক্ষা ও গবেষণায় অসামান্য অবদান রাখায় ১০১ জন শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে একাডেমিক এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। দিনব্যাপী আয়োজিত রিসার্চ ফেয়ারে বিভিন্ন অনুষদ ও দপ্তরের পক্ষ থেকে গবেষণার প্রদর্শনী উপস্থাপন করা হয়।

এর আগে সকাল ১১টায় জাতীয় পতাকা উত্তোলন, সাদা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে দ্বিতীয় দিনের কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী মোহাম্মদ রফিকুল আবরার। এরপর তিনি গার্ড অব অনার গ্রহণ করেন এবং জুলাই কর্নার, সাংবাদিক সমিতিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন।

সন্ধ্যায় আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়।