লোডশেডিং এ নাকাল পুরো আনোয়ারাবাসী। আনোয়ারা উপজেলা'র গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং কিছুটা সহনীয় থাকলেও, বাকি এলাকায় বিদ্যুৎ এই আসে তো এই নেই। গ্রামাঞ্চলে প্রতিনিয়ত দিনের প্রায় বেশিরভাগ সময় বিদ্যুৎবিহীন থাকতে হয় গ্রাহকদের।
স্থানীয়রা বিদ্যুৎ এর নাম দিয়েছে ‘মেহমান’; মর্জি হলে আসবে, নয়তো নয়। একজন আরেক জনকে বলেন, মেহমান এসেছিল, আবার চলেও গেছে!চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সরবরাহ না পাওয়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। প্রতিদিন একরকম নাজেহাল অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। লোডশেডিংয়ের কারণে তীব্র গরম আর রাতে অন্ধকারে শিক্ষার্থীদের বেহাল অবস্থা। এদিকে মিল-কলকারখানার চাকা স্থবির হয়ে থাকায় অনেকের ব্যবসা এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিদ্যুতের লুকোচুরি কিছুটা কম হলেও, গ্রামের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। গ্রামের নিরীহ সাধারণ মানুষের অভিযোগ, দিনের বেশিরভাগ সময় পাওয়া যাচ্ছে না বিদ্যুৎ। তীব্র লোডশেডিংয়ের কারণে অনেকে আধাপাকা ধানের জমিতে সেচ দিতে পারছেন না। এতে ধানের ফলনও কমে যাওয়ার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। এক কথায়, ভয়াবহ লোডশেডিংয়ের কারণে আনোয়ারার গ্রামীণ জীবনে নাভিশ্বাস উঠার অবস্থা।
সদর উপজেলার এক বাসিন্দা বলেন, ‘বিদ্যুৎ না থাকায় ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার যে ক্ষতি হচ্ছে তা পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়। এভাবে বিদ্যুতের লুকোচুরি খেলায় স্থানীয়রা বিদ্যুতের নাম দিয়েছেন ‘মেহমান’। সারা দিনে বিদ্যুৎ কিছুক্ষণ পর পর এসে স্থায়ীভাবে না থেকে আবারও চলে যায় বলে এমন নামকরণ করা হয়েছে।’
পার্থ সাহা নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী বলেন, ‘সামনে আমার পরীক্ষা। পড়াশোনায় মন বসাতে হলে ভালো পরিবেশ লাগে। যে গরম পড়ছে মনে হচ্ছে শরীর পুড়ে যাবে, তার ওপর তীব্র লোডশেডিং। এমন অবস্থায় পড়াশোনা করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। হাতপাখা বা ব্যাটারিচালিত পাখা চালিয়ে আর কতক্ষণ চলা যায়। আর এভাবে মনোযোগ দিয়ে কোনো কিছু পড়াও যায় না। এভাবে চলতে থাকলে তো আমাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে।’
আব্দুল হামিদ নামে এক বৃদ্ধ বলেন, ‘বিদ্যুৎ যদি এক ঘণ্টা থাকে তাহলে পরের দুই থেকে তিন ঘণ্টা থাকে না। প্রচণ্ড গরমে জীবন অতিষ্ঠ। তীব্র এ গরমে এভাবে লোডশেডিং হতে থাকলে সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ব।’
একই এলাকার হাফিজুর রহমান বলেন, ‘একবার বিদ্যুৎ গেলে আসার খবর থাকে না। প্রতিদিন ১০ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না।’
বাজারের ব্যবসায়ী মো. মূসা বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা কারেন্ট পাই। শুধু তাই নয়, দিনে-রাতে সমান তালে বিদ্যুৎ না থাকায় আমাদের সন্তানদের লেখাপড়ারও চরম বিঘ্ন ঘটছে। সরকারের কাছে একটাই দাবি, আমরা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ চাই।’
কৃষক শামসুল আলম বলেন, ‘রাত-দিন মিলে সর্বোচ্চ ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে। সব ধানের গাছ থেকে শীষ বের হচ্ছে। এ সময় ক্ষেতে পানি নেই। এখন যদি পানি না থাকে, তাহলে বেশিরভাগ ধান চিটা হয়ে যাবে। সব ক্ষেত শুকিয়ে গেছে; অনেক জায়গায় ফাটল ধরেছে।
এ প্রসঙ্গে আনোয়ারা পল্লী বিদ্যুৎ জোনাল অফিসের ডিজিএম জসিম উদ্দিন বলেন, চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ না পাওয়ায় আনোয়ারায় বিদ্যুৎ ঘাটতি রয়েছে। যার কারণে লোডশেডিং হচ্ছে।