বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের পর সবচেয়ে বেশী সময় ধরে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকা দল হলো বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ৪ টি নির্বাচনের ভিতর ৩ টি তে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে বিশাল ব্যবধানে জয়লাভ করে ৩ বার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। এরমধ্যে ফেনীর ৩ টি আসন ঐতিহাসিক ভাবে বিএনপির দখলে থাকলেও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ৫৪ বছর আজ অবদি ২৫৯ নং সংসদীয় আসনটি (কুমিল্লা-১১) বিএনপির বিজয় বঞ্চিত থেকে যায়। আসনটি কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা নিয়ে গঠিত। কুমিল্লা-১১ (চৌদ্দগ্রাম) আসনটির ভোটার সংখ্যা ৩ লক্ষ ৯৪ হাজার এর মতো,মোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৫ টি।

মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রতিষ্ঠালগ্ন ১ সেপ্টেম্বর ১৯৭৮ সাল থেকে খাল খননের মতো বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের কাছে খুব তাড়াতাড়ি জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৭১ সালের যুদ্ধবিধ্বস্ত পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষে জর্জরিত বাংলাদেশকে ক্ষমতায় আসার তিন বছরের মধ্যে নতুন করে গঠন করেন। দেশী বিদেশী শক্তি ষড়যন্ত্র করে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা থামিয়ে দেয়। এরপর জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করে স্বৈরাচারের মতো ১০ বছর ক্ষমতা দখল করে রাখে। মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের হাল ধরেন। তিনি স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আপোষহীন নেত্রী হিসেবে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন।

সুদীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পর ১৯৯০ সালে স্বৈরাচার এরশাদ পতনের পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ অনুষ্ঠিত হলে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে ১ম বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হয়ে আস্থা রাখেন মরহুম প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সময়কার অভিজ্ঞ নেতৃত্বের উপর। বেগম খালেদা জিয়ার মন্ত্রীসভায় স্থান পায় তখনকার সিনিয়র বিএনপির নেতৃত্ববৃন্দ। আবারো শুরু হয় দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র, আওয়ামীলীগ নেত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন লাগাতার হরতাল অবরোধ আন্দোলন করে দেশকে অস্থিতিশীল করে। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬ সালে জেনারেল নাসিম বগুড়া ও ময়মনসিংহ ক্যান্টনমেন্ট থেকে সেনা ক্যু করে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারকে উৎখাত করতে চায় কিন্তু ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচি সফল না হওয়ায় সেইবার বিএনপির সরকার রক্ষা পায়। সেই বছরই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে বিল পাশ করেন বেগম খালেদা জিয়া।

পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ২১ বছর পর সরকার গঠন করে। ১৯৯৬-২০০১ সাল ছিলো আওয়ামীলীগের দুর্নীতি সন্ত্রাস দুঃশাসন নির্যাতনের সময়কাল। ২০০১ সালে ৩য় বারের মতো রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে বিএনপি। আবারো সক্রিয় হয়ে উঠে দেশী বিদেশী ষড়যন্ত্র। এইবার ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ও ১০ ট্রাক অস্ত্রর মতো দুইটা বড় ষড়যন্ত্র বহিঃ বিশ্বে বিএনপির ব্যাপক ভাবে ইমেজ ক্ষুন্ন করে। যার ধারাবাহিকতায় ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশে আবারো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা তৈরী হয় এবং ২০০৭ সালে ১/১১ সেনা শাসন জরুরী অবস্থা জারি হয়।

২০০৭ সালে মঈনউদ্দিন ফখরুদ্দিন সরকারের নির্যাতনের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয় বিএনপি ও জিয়া পরিবার। প্রথমেই সাবেক ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মিথ্যা দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে কারাবন্দী করে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ড এর নামে নির্যাতন করে মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেওয়া হয়,২০০৮ সালে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে চলে যান তিনি।
উল্লেখ্য এই সময় কুচক্রি মহল বিএনপিকে সংস্কারের নামে ২ ভাগ করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়।

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়লাভ করে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি ও জিয়া পরিবারের উপর এমন অমানবিক নির্যাতন অব্যাহত রাখে। এইবার বেগম খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট এর বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে। এইসময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পুত্র আরাফাত রহমান কোকো মৃত্যুবরণ করলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হওয়া জনাব তারেক রহমান লন্ডন থেকে দেশে ফিরতে পারেননি, পারেননি তার একমাত্র ভাইকে কবর দিতে।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী বেগম খালেদা জিয়াকে আবারো ১/১১ এর সাজানো মামলায় অবৈধ ভাবে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আবারো কারাগারে পাঠায়। এইবার বেগম খালেদা জিয়া একদিকে স্বামী সন্তান হারিয়ে যেমন মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পড়েন অন্যদিকে শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়ে প্রথমে কারাগারে বন্দী হন, পরবর্তীতে কারাগারে সুচিকিৎসার অভাবে গুরুত্বর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে বিদেশে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হয় এবং দেশেই গৃহবন্দী করে রাখা হয়। বর্তমানে তিনি উন্নত চিকিৎসার জন্য পুত্র তারেক রহমানের পরিবারের সাথে লন্ডনে অবস্থান করছেন।

২০২৪ এর জুলাই আগস্টের ছাত্র জনতার আন্দোলনে প্রায় দুই হাজার প্রাণের বিনিময়ে গণঅভ্যুত্থানে ১৬ বছরের ফ্যাসিস্ট স্বৈরাচার হাসিনার বিদায় হলে বর্তমানে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় রয়েছে।
সম্প্রতি জাপানের এনএইচকে টেলিভিশনে এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এই বছরের ৬ ডিসেম্বর গণতন্ত্র দিবসে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে ৭৯ আসনে প্রার্থী ঠিক করে ফেলেছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। কুমিল্লা-১১ থেকে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে লড়বেন ডক্টর আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ আবু তাহের।

১৯৭৩,১৯৭৯,১৯৮৬,১৯৮৮,১৯৯১,১৯৯৬,১৯৯৬,২০০১,২০০৮,২০১৪,২০১৮,২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া অতীতের কোনো নির্বাচনে কখনো জয় লাভ করতে না পাওয়া এই আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হতে পারেন জনাব কামরুল হুদা। কর্মীদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় আর ভোটারদের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশী।

বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় বেগম খালেদা জিয়ার সাথে একটি মিথ্যা মামলায় তিনি ৯ মাস কারাগারে ছিলেন। চৌদ্দগ্রামকে শিল্পনগরী হিসেবে গড়ে তুলতে চৌদ্দগ্রামের জনগণের কাছে কামরুল হুদার বিকল্প কোনো প্রার্থী না থাকায় সবাই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আশা করছে দলীয় নমিনেশন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়ে প্রথমবারের মতো বিএনপিকে ঐতিহাসিক জয় এনে দিবেন কামরুল হুদা। চৌদ্দগ্রাম বিএনপির সভাপতি কামরুল হুদার নেতৃত্বে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ এবং অতীতের যেইকোনো সময়ের চেয়ে দল এখন অনেক বেশী শক্তিশালী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান বলেছেন অতীতের যেকোনো নির্বাচনের থেকে এই নির্বাচন অত্যন্ত কঠিন হবে তাই তরুণ নেতৃত্ব ও বিগত দিনে আন্দোলন সংগ্রামে দলের জন্য ভূমিকা রাখা প্রার্থীদের এইবার দল থেকে নমিনেশন দেওয়া হবে।