কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (RSO) এর একটি গোপন বৈঠকে আরাকান রাজ্যে সশস্ত্র ‘জিহাদে’ অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে। সোমবার (২৩ জুন ২০২৫) সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত উখিয়ার ক্যাম্প-১২ এর জে/০৫ ব্লকে অবস্থিত নুর মারকাজ মসজিদে এই গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৈঠকের মূল আয়োজন ও নেতৃত্ব
বৈঠকটি আয়োজন করে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (RSO)। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের শীর্ষ নেতা মাস্টার ইউনুস। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন:
মৌলভী সৈয়দুল আমিন (RSO কমান্ডার)
মাস্টার নজিবুল্লাহ
মৌলভী আইয়ুব
মৌলভী ইব্রাহিম
মৌলভী মো. নূর
সূত্র জানায়, উক্ত বৈঠকে আনুমানিক ২৩০ জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন, যারা সকলেই RSO’র পুরনো কর্মী ও সমর্থক।
বৈঠকের বক্তব্য ও আহ্বান
বক্তারা তাদের বক্তব্যে দাবি করেন, "মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাইলেও, বর্তমানে আরাকান রাজ্য আরাকান আর্মির (AA) দখলে থাকায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।"
তারা বলেন, “আরাকান আমাদের নিজস্ব ভূমি। একে যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্ত করতে হবে।”
বক্তারা ক্যাম্পে বসে আরকানের পরিস্থিতির জন্য অপেক্ষা না করে, এখনই ‘জিহাদ’-এর প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান এবং যুবকদের ক্যাম্পের মায়া ত্যাগ করে আরাকানে গিয়ে লড়াইয়ে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
সাথে সাথে প্রতিটি ব্লকে নতুন সদস্য সংগ্রহের জন্য রোহিঙ্গা তরুণদের কাছে যাওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
নিরাপত্তা হুমকির আশঙ্কা স্থানীয়দের
উখিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক সরওয়ার জাহান চৌধুরী বলেন,
"রোহিঙ্গারা যদি এই দেশে বসে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়, তাহলে তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে। আরাকান আর্মি এখন মিয়ানমারের সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে শক্তিশালী লড়াই চালাচ্ছে, তাদের কার্যক্রম যদি এখানেও প্রসারিত হয়, তা মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি করবে।"
মানবাধিকার সংস্থার উদ্বেগ
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোও এ ধরনের কার্যক্রম নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, ক্যাম্পভিত্তিক সশস্ত্র তৎপরতা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবিক পরিস্থিতিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করছে, তেমনি আশ্রয়দাতা দেশ বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।
RSO কে ঘিরে বিতর্ক
উল্লেখ্য, RSO (Rohingya Solidarity Organization) একটি বিতর্কিত রোহিঙ্গা সশস্ত্র সংগঠন, যাদের বিরুদ্ধে অতীতে সীমান্ত এলাকায় সহিংসতা, অস্ত্র ও মাদক পাচার এবং উগ্রবাদী কার্যক্রমে জড়িত থাকার একাধিক অভিযোগ রয়েছে। সংগঠনটি আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত কোনো রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম নয়, বরং দীর্ঘদিন ধরে ক্যাম্পের অভ্যন্তরে গোপনে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি মহলের নীরবতা
ঘটনার বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সরকারি বা নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে খতিয়ে দেখছে।